ভরা মৌসুমেও ব্যবসায় মন্দা

পুরান ঢাকা ইসলামপুরে কাপড়ের ব্যবসা
প্রথম আলোর ফাইল ছবি

ব্যবসার মৌসুমেও করোনার ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারছে না রাজধানীর পুরান ঢাকার ইসলামপুরের কাপড়ের ব্যবসায়ীরা। এমনিতে কেনাবেচায় মন্দা ভাব। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পাইকারি পর্যায়ে বিক্রির ওপর আরোপিত ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন কর (মূসক) আদায়ের কড়াকড়ি। এ কারণে ইসলামপুরের কাপড়ের পাইকারি বেচাকেনায় খরা চলছে।

ইসলামপুরের ব্যবসায়ীরা বলছেন, যেকোনো বছর ঈদের মাসখানেক আগে থেকে এ বাজারে কেনাবেচা বেশ জমজমাট থাকত। কিন্তু এ বছর মন্দা চলছে। একে তো করোনার প্রভাব, তার সঙ্গে ভ্যাট যুক্ত হওয়ায় কেনাবেচা কমে গেছে অর্ধেকের বেশি। যদিও চূড়ান্ত বিচারে ভ্যাটের বোঝা ভোক্তার ঘাড়েই চাপে।

২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে পাইকারি পর্যায়ে বিক্রির ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ হলেও গত কয়েক মাসে এ ভ্যাট আদায়ের তৎপরতা অনেক বেড়েছে। তাই ইসলামপুরের অনেক ক্রেতা নরসিংদীর বাবুরহাটসহ অন্যান্য বাজারে চলে যাচ্ছেন।
নেসার উদ্দিন মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক, ইসলামপুর বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতি

জানতে চাইলে ইসলামপুর বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নেসার উদ্দিন মোল্লা বলেন, ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে পাইকারি পর্যায়ে বিক্রির ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ হলেও গত কয়েক মাসে এ ভ্যাট আদায়ের তৎপরতা অনেক বেড়েছে। তাই ইসলামপুরের অনেক ক্রেতা নরসিংদীর বাবুরহাটসহ অন্যান্য বাজারে চলে যাচ্ছেন।

ইসলামপুরের পাইকারি বিক্রেতারা জানান, সাধারণত ঈদ সামনে রেখে কয়েক মাস আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকারি ক্রেতারা কাপড় কেনা শুরু করেন। এসব পাইকার পরে তা খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করেন। এ কারণে অতীতে এ সময়টাতে ইসলামপুর ক্রেতা-বিক্রেতায় সরগরম থাকত। কিন্তু সে তুলনায় এ বছর ক্রেতা কম। যদিও ইসলামপুরের পাইকারি বিক্রেতারা এবারের ঈদ সামনে রেখে করোনার ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার আশা করেছিলেন। সেই আশা পূরণের সম্ভাবনা এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না বলে বিক্রেতারা জানান।

ছোট–বড় মিলিয়ে ইসলামপুরে মার্কেটের সংখ্যা ১৪২। দোকান আছে পাঁচ হাজারের বেশি। দেশি-বিদেশি পরিধেয় কাপড়ের পাশাপাশি বিছানার চাদর, পর্দার কাপড়ের মতো দৈনন্দিন প্রয়োজনের সব ধরনের কাপড়ের বিক্রি হয় এসব দোকানে।

জানতে চাইলে ইসলামপুরের আহসান মঞ্জিল সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী মো. আরিফুর রহমান বলেন, অন্যান্য বছর এই সময়ে প্রতিদিন ৪০-৫০ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করেছি। এখন দিনে ৫–৬ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করাও কঠিন হয়ে পড়েছে।

ইসলামপুর বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির তথ্য অনুযায়ী, ছোট–বড় মিলিয়ে ইসলামপুরে মার্কেটের সংখ্যা ১৪২। দোকান আছে পাঁচ হাজারের বেশি। দেশি-বিদেশি পরিধেয় কাপড়ের পাশাপাশি বিছানার চাদর, পর্দার কাপড়ের মতো দৈনন্দিন প্রয়োজনের সব ধরনের কাপড়ের বিক্রি হয় এসব দোকানে। তবে মাসে বা দিনে এসব দোকানে কী পরিমাণ কেনাবেচা হয়, তার আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক কোনো পরিসংখ্যানই সমিতির কাছে নেই।

করোনার সংক্রমণ আবার বাড়তে শুরু করায় বিক্রেতাদের পাশাপাশি ক্রেতারাও পড়েছেন অনিশ্চয়তায়। সম্প্রতি সরেজমিনে ইসলামপুরে কথা হয় চট্টগ্রাম থেকে আসা ক্রেতা মো. আল আমিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি আবারও অবনতি হওয়ায় ব্যবসা কেমন যাবে আন্দাজ করতে পারছি না। তাই ঝুঁকি নিয়েই পণ্য কিনছি।’

জানা যায়, আগে ‘প্যাকেজ ভ্যাটের’ আওতায় একেকটি প্রতিষ্ঠান বছরে ২৮ হাজার টাকা ভ্যাট দিত। কিন্তু এখন বিক্রির ক্ষেত্রে যে পরিমাণ মূল্য সংযোজন হয়, তার ওপর ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হয়।

জানতে চাইলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য মাসুদ সাদিক বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলো যে পরিমাণ ব্যবসা করে, তার ভিত্তিতেই ভ্যাট আদায় করা হচ্ছে।