ভোটের সংস্কৃতি ভুলে গেছে চট্টগ্রাম চেম্বার

ভোটের সংস্কৃতি যেন ভুলতে বসেছে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (সিসিসিআই)। এবারও ভোটাভুটি ছাড়াই সংগঠনটির ২৪ জন পরিচালক নির্বাচিত হয়েছেন। এ নিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো শতবর্ষী এই ব্যবসায়ী সংগঠনের নির্বাচনে কোনো ভোট হয়নি। আগের বছরগুলোতে পদের চেয়ে বেশিসংখ্যক প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিলেও প্রত্যাহারের শেষ দিনে নির্দিষ্ট ব্যক্তিরা ছাড়া অন্যরা সরে যান। এবার অবশ্য বেশি মনোনয়নপত্র জমা পড়েনি। তাই ভোটেরও দরকার পড়েনি।

ভোট না হওয়ায় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে ভোট প্রার্থনা কিংবা ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষায় অঙ্গীকারের প্রতিযোগিতাও আর হচ্ছে না। এভাবে চট্টগ্রাম চেম্বারের প্রায় সাড়ে সাত হাজার ভোটার তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

ভোটাভুটি ছাড়াই নির্বাচিত পরিচালকেরা আজ মঙ্গলবার নিজেদের মধ্য থেকে চেম্বারের তিন সদস্যের প্রেসিডিয়াম পর্ষদ নির্বাচন করবেন। এর মধ্যে মাহবুবুল আলম টানা পঞ্চমবারের মতো সংগঠনটির সভাপতি এবং সাইফ পাওয়ারটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুহুল আমিন তরফদার জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও প্যাসিফিক জিনসের পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর সহসভাপতি হতে যাচ্ছেন বলে আলোচনা আছে। নির্বাচিত পরিচালকদের বেশির ভাগই অবশ্য তরুণ।

আগের বিধিমালায় তিন মেয়াদের বেশি নির্বাচন করার সুযোগ ছিল না। সেটি সংশোধনের ফলে মাহবুবুল আলম রেকর্ড পঞ্চমবারের মতো সভাপতি হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। এবার হলে তিনি রেকর্ড গড়বেন।

চট্টগ্রাম চেম্বারের সর্বশেষ ভোটাভুটি হয়েছিল ২০১৩ সালের ৩০ মার্চ। ওই নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১১ আসনের সাংসদ এম এ লতিফ-সমর্থিত মাহবুবুল আলম-নুরুন নেওয়াজ সেলিম পরিষদ ২৪ পদের মধ্যে ২০টিতে জয়লাভ করে। প্রতিদ্বন্দ্বী মোরশেদ-সালাম ঐক্য পরিষদ পায় ৪টি। সংখ্যাগরিষ্ঠতার সুবাদে মাহবুবুল আলম প্রথমবার সভাপতি হন। এরপর আর তাঁর প্রতিপক্ষ হিসেবে কোনো প্যানেল দেখা যায়নি। তাই ভোটাভুটিরও দরকার হয়নি।

নির্বাচনে না আসা সম্পর্কে সাংসদ এম এ লতিফের এক সময়ের প্রতিদ্বন্দ্বী কয়েকজন ব্যবসায়ী নেতা নাম প্রকাশ করে কিছু বলতে চাননি। তাঁরা বলছেন, নানা কৌশলে চট্টগ্রাম চেম্বারের বিপুলসংখ্যক ভোটার বানিয়ে রেখেছেন এম এ লতিফ। যে কারণে তাঁর সমর্থন ছাড়া আর কারও পক্ষে চেম্বারের নেতৃত্বে আসা কঠিন। সে জন্য তাঁরা এখন অপেক্ষা করছেন।

এদিকে সাংসদ এম এ লতিফ গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০১৩ সালের ভোটাভুটিতেও প্রতিপক্ষ প্যানেল জিততে পারেনি। আমাদের প্যানেলের প্রতি আস্থা রেখে তাঁদের অনেকেই সমর্থন জানিয়েছেন। পরিচালকও হচ্ছেন। আপনি পরিচালক পদের তালিকা দেখুন, একসময় যারা ভিন্ন প্যানেলে ছিল, তারা বা তাদের সন্তানেরা আমাদের প্যানেলে যুক্ত হয়েছে। ফলে এই প্যানেল সর্বস্তরের ব্যবসায়ীদের প্যানেল হয়ে উঠেছে। এতে তরুণ, অভিজ্ঞ সবারই প্রতিনিধিত্ব আছে। আর বর্তমান নেতৃত্ব কোনো গোষ্ঠীর হয়েও কাজ করছে না।’

ব্যবসায়ীরা জানান, সাংসদ এম এ লতিফের নেতৃত্ব নিয়ে এক দশক আগে ব্যবসায়ীদের মধ্যকার দ্বন্দ্বের জেরে ২০০৯ সালে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি গঠিত হলেও সেটি তেমন আশার আলো দেখাতে পারেনি। নতুন চেম্বারটির নির্বাচন ও সদস্য নেওয়ার বিষয়ে ব্যবসায়ীদের হতাশা আরও বেশি। বড় ব্যবসায়ীরা এই চেম্বারের নেতৃত্বে থাকলেও চট্টগ্রাম চেম্বারের কার্যক্রমের ধারেকাছেও যেতে পারেনি নতুন সংগঠনটি।