ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে যাত্রী যাতায়াত বন্ধ, রাজস্ব আয় কমেছে ১০ কোটি টাকা

প্রথম আলো ফাইল ছবি

করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘদিন ধরে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর ও ইমিগ্রেশন দিয়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতে ও ভারত থেকে বাংলাদেশে পাসপোর্টধারী যাত্রীদের যাতায়াত বন্ধ রয়েছে। এ কারণে চলতি অর্থবছরে প্রায় ১০ কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে সরকার। বাংলাদেশে ১৫ মাস ধরে কেউ এই বন্দর দিয়ে ভারতে যেতে পারেনি। তবে এ সময়ে ভারতে আটকে থাকা ৬৭৩ জন বাংলাদেশি দেশে ফিরেছে।

সাতক্ষীরার ভোমরা বন্দর শুল্ক স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, পাসপোর্টে বাংলাদেশ থেকে ভারতে কোনো বাংলাদেশিকে যেতে হলে ৫০০ টাকা ভ্রমণকর ব্যাংকে পরিশোধ করতে হয়। আবার কোনো ভারতীয় বাংলাদেশে এসে ফিরে যাওয়ার সময় তাকেও ৫০০ টাকা ভ্রমণকর দিতে হয়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ভারতে ঢুকেছে ২ লাখ ৫ হাজার ৩৭৬ জন যাত্রী। একই অর্থবছরে ভারত থেকে বাংলাদেশ এসেছে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৭৫২ জন যাত্রী।

সব মিলিয়ে এ অর্থ বছরে ভ্রমণ খাত থেকে সরকারের রাজস্ব আসে ১০ কোটি ২৬ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। কিন্তু করোনার ভয়াবহতা বেড়ে যাওয়ায় ২০২০ সালের ১৩ মার্চ ভোমরা শুল্ক বন্দর ও ইমিগ্রেশন দিয়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাসপোর্ট যাত্রী যাওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ভরতে যায় ১ লাখ ৫৫ হাজার ৯৩৫ জন যাত্রী। আর ভারত থেকে বাংলাদেশ আসে ১ লাখ ৮৬৯ জন যাত্রী। এই অর্থবছরে তিন মাস যাতায়াত বন্ধ থাকায় রাজস্ব কমে দাঁড়ায় ৭ কোটি ৭৯ লাখ ৬৭ হাজার ৫০০ টাকা।

পরবর্তী সময়ে করোনার কারণে ২০২০-২১ অর্থবছরে ভোমরা দিয়ে পাসপোর্টে যাত্রী যাতায়াত সম্পূর্ণ বন্ধ থাকায় কোনো রাজস্ব আদায় আয় হয়নি। ২০২১-২২ অর্থবছরের এক মাস পার হলেও এখন পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে ভোমার শুল্ক স্টেশন দিয়ে যাত্রী যাতায়াত।

সাতক্ষীরার শহরের বাসিন্দা সমীর দে বলেন, ভোমরা স্থলবন্দর খোলা থাকলে প্রয়োজন হলে সহজেই ভারতে যাতায়াত করা যায়। তিনি ভারতে চিকিৎসা করান। এ জন্য তাঁকে বছরে কয়েকবার ভারতে যেতে হয়। কিন্তু ১৫ মাসের বেশি সময় করোনার কারণে এ বন্দর দিয়ে যাতায়াত বন্ধ থাকায় সমস্যায় রয়েছেন। কয়েকটি স্থলবন্দর যাতায়াত করা গেলেও নানা শর্ত থাকায় যেতে পারছেন না।

মুঠোফোনে কথা হয় ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বসিরহাট মহকুমা সদরের বাসিন্দা অরিন্দম চক্রবর্তীর সঙ্গে। তিনি বলেন, আত্মীয়স্বজন রয়েছে বাংলাদেশে। ভারতের ঝোজাডাঙ্গ ও বাংলাদেশের ভোমরা বন্দর দিয়ে যাতায়াত সহজ হয়। ব্যয়ও হয় অনেক কম। কিন্তু করোনা সমস্যা সৃষ্টি করেছে। তিনি যাতায়াত করতে পারছেন না।
ভোমরা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, স্থলপথে কারণে–অকারণে ব্যবসায়ীদের পণ্য আমদানি-রপ্তানি করতে ভারতে যেতে হয়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে ভোমরা স্থলবন্দর বন্ধ থাকায় ইচ্ছা করলেও ভারতে যাওয়ার সুযোগ হচ্ছে না। এতে চাহিদামতো পণ্য আমদানি করতে পারছেন না।

ভোমরা ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, করোনার আগে স্বাভাবিক সময়ে এ পথে প্রতিদিন কয়েক শ যাত্রী যাতায়াত করত। বর্তমানে বিধিনিষেধ থাকায় যাত্রী যাতায়াত বন্ধ রয়েছে। কবে নাগাদ চালু হবে, সে বিষয়ে এখনো সরকারি কোনো নির্দেশনা পাননি।

ভোমরা কাস্টমসের সহকারী কমিশনার আমির মামুন বলেন, করোনার বিরূপ প্রভাবে ১৫ মাসের বেশি সময় ধরে এ স্থলবন্দর দিয়ে যাত্রী যাতায়াত বন্ধ রয়েছে। যাত্রী যাতায়াত বন্ধ থাকায় প্রতিবছর প্রায় ১০ কোটি টাকার রাজস্ব আয় কম হচ্ছে।