ভ্যাট রিটার্ন দিতে না পারা ব্যবসায়ীদের এখন কী হবে?

সবকিছু বন্ধ থাকায় ছোট ব্যবসায়ীদের অনেকেই মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট রিটার্ন দিতে পারেননি। বিশেষ করে দোকানপাট ও শপিং মলের মালিকেরা সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার ছিল চলতি মাসের নিয়মিত ভ্যাট রিটার্নের শেষ দিন। সীমিত পরিসরে মাঠ পর্যায়ে ভ্যাট কার্যালয় খোলা থাকলেও খুব একটা রিটার্ন জমা পড়েনি।

অবশ্য ৮ এপ্রিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) জানিয়ে দিয়েছিল, আইন অনুযায়ী প্রতি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে রিটার্ন দিতে হবে। অন্যথায় জরিমানা ও সুদ আরোপ করা হবে। নতুন ভ্যাট আইন অনুযায়ী, ভ্যাট নিবন্ধন নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রতি মাসের বেচাকেনার ওপর ভিত্তি করে ভ্যাট রিটার্ন দিতে হয়।

করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন দোকান ও শপিং মলের মালিকেরা। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির হিসাবে, সারা দেশে ছোট-বড় ২৫ হাজার শপিং মল বা বিপণিবিতান আছে। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সব কটিই এখন বন্ধ আছে। অন্যদিকে সারা দেশে ছোট-বড় ২২ লাখ দোকান আছে। যেগুলোর বেশির ভাগই বন্ধ আছে কিংবা সীমিত পরিসরে খোলা আছে। এসব দোকানমালিকের মধ্যে যাঁদের ভ্যাট নিবন্ধন আছে, তাঁদের অনেকেই রিটার্ন দিতে পারেননি।

ঢাকা দক্ষিণ ভ্যাট কমিশনারেটে সবচেয়ে বেশি ৬১ হাজার ৮৮৯টি প্রতিষ্ঠান ভ্যাট নিবন্ধন নিয়েছে। আজ শেষ দিন পর্যন্ত ২৬ হাজার ২৯৮টি প্রতিষ্ঠান ভ্যাট রিটার্ন দিয়েছে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে দোকানপাট, শপিং মল সব বন্ধ। কর্মীরা সব ছুটিতে চলে গেছে। ব্যাংকও সীমিত পরিসরে খোলা রয়েছে। তাহলে রিটার্ন দেব কীভাবে?’ সবকিছু খুলে দিলে রিটার্ন জমা নেওয়ার দাবি জানান তিনি। ভ্যাট রিটার্ন না দিলে জরিমানা ও সুদ মওকুফ করার সুযোগ চান তিনি।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, নতুন ভ্যাট আইনে প্রতি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে ভ্যাট রিটার্ন জমা দেওয়ার বিধান আছে। তা না হলে ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং নির্ধারিত ভ্যাটের টাকার ওপর ২ শতাংশ হারে সুদ আরোপ করা হয়। প্রশাসনিক আদেশ দিয়ে সময় বৃদ্ধি করার সুযোগ নেই।

এবার দেখা যাক, চলতি এপ্রিল মাসে রিটার্ন জমা কেমন পড়েছে। প্রায় আড়াই লাখ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ভ্যাট নিবন্ধন নিয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ ভ্যাট কমিশনারেটে সবচেয়ে বেশি ৬১ হাজার ৮৮৯টি প্রতিষ্ঠান ভ্যাট নিবন্ধন নিয়েছে। আজ শেষ দিন পর্যন্ত ২৬ হাজার ২৯৮টি প্রতিষ্ঠান ভ্যাট রিটার্ন দিয়েছে। সব প্রতিষ্ঠানের রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক হলেও মাত্র সাড়ে ৪২ শতাংশ রিটার্ন দিয়েছে। বাকিরা দিতে পারেনি।

করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে দোকানপাট, শপিং মল সব বন্ধ। কর্মীরা সব ছুটিতে চলে গেছে। ব্যাংকও সীমিত পরিসরে খোলা রয়েছে। তাহলে রিটার্ন দেব কীভাবে?’
মো. হেলাল উদ্দিন, সভাপতি, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ কমিশনারেটের কমিশনার এস এম হ‌ুমায়ূন কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা অফিস খোলা রেখেছি। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আমরাও সহানুভূতিশীল। তবে ভ্যাট রিটার্ন না দিলে জরিমানা ও সুদ মওকুফের বিষয়ে এনবিআর সিদ্ধান্ত নেবে।’

বর্তমানে সারা দেশে ২ লাখ ৪৪ হাজার ১৬টি প্রতিষ্ঠান ভ্যাট নিবন্ধন নিয়েছে। এর মধ্যে গত মাসে ১ লাখ ২ হাজার ৮৭১টি প্রতিষ্ঠান প্রতি মাসের হিসাব-নিকাশ দিয়ে ভ্যাট রিটার্ন দাখিল করেছে। নিবন্ধন নিয়ে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক হলেও গত মাসে জমা দিয়েছে ৪২ শতাংশ।

এ দিকে অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের সুযোগ থাকলেও অনেকেই তা দেন না। বিদ্যমান ভ্যাট আইনে সুদ ও জরিমানা মওকুফের সুযোগ নেই। গতবার করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর সবকিছু বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। তখনো ব্যবসায়ীরা রিটার্ন জমা দিতে পারেননি। ব্যবসায়ীদের কথা চিন্তা করে গত বছরের মে মাসে নতুন একটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়। আপৎকালীন সময়ে সুদ ও জরিমানা আদায় ছাড়াই এনবিআরকে ভ্যাট রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা বৃদ্ধির ক্ষমতা দিয়ে অধ্যাদেশ জারি করা হয়।

গতবার সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত সব ধরনের সুদ ও জরিমানা মওকুফ করা হয়েছিল। এ দিকে এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, কয়েক দিন এনবিআরের এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে ভ্যাট রিটার্ন না দিলে জরিমানা ও সুদ আরোপ-সংক্রান্ত বিষয়টি আলোচনা হয়। এ ক্ষেত্রে কমিশনারেটগুলোকে ‘কেইস টু কেইস’ ভিত্তিতে জরিমানা ও সুদ মওকুফের নির্দেশ দেওয়া হতে পারে।