মদের চেয়ে মোবাইলে ন্যূনতম কর বেশি কেন, প্রশ্ন রবির সিইওর

মাহতাব উদ্দিন আহমেদ
এমডি ও সিইও, রবি আজিয়াটা

মদ বিক্রেতা, তামাক কোম্পানি ও কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্রের চেয়ে মোবাইল অপারেটরদের ওপর ন্যূনতম কর বেশি কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রবি আজিয়াটার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাহতাব উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, মোবাইল অপারেটরদের লোকসান হলেও সেবা বিক্রি করে পাওয়া মোট টাকার ওপর ২ শতাংশ হারে আয়কর দিতে হচ্ছে। এ হার মদ বিক্রেতাদের ওপর শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ, তামাকে ১ শতাংশ ও কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্রে শূন্য দশমিক ৫ থেকে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ।

মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, মদ ও তামাক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। অন্য দিকে মুঠোফোনসেবা দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিচ্ছে। সেখানে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীরা কী দোষ করল যে তাদের ন্যূনতম কর মদ–তামাকের চেয়ে বেশি হবে।

আজ বুধবার ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে রবির প্রস্তাব তুলে ধরা নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মাহতাব উদ্দিন এসব কথা বলেন। ভার্চ্যুয়াল এই সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ন্যূনতম করের কারণে রবির কার্যকর করপোরেট করহার দাঁড়াচ্ছে ৮৯ শতাংশ। মানে হলো, ১০০ টাকা মুনাফা করলে ৮৯ টাকাই আয়কর হিসেবে নিয়ে নিচ্ছে সরকার। তিনি জানান, ২০২০ সালে রবি ৭ হাজার ৫৬৪ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করে। এর মধ্যে ৪ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা যায় সরকারের কোষাগারে, যা মোট আয়ের প্রায় ৫৬ শতাংশ। এ টাকা বিভিন্ন ধরনের কর, মাশুল ও তরঙ্গ ইজারার মূল্য বাবদ দেওয়া যায়। বিপুল টাকা বিনিয়োগের পর ২০২০ সালে রবির মুনাফা ছিল মাত্র ১৫৫ কোটি টাকা।

মোবাইল অপারেটরদের লোকসান হলেও সেবা বিক্রি করে পাওয়া মোট টাকার ওপর ২ শতাংশ হারে আয়কর দিতে হচ্ছে। এ হার মদ বিক্রেতাদের ওপর শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ, তামাকে ১ শতাংশ

রবির মূল হতাশা ন্যূনতম কর নিয়ে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট থেকে সরকার মোবাইল অপারেটরদের ওপর ন্যূনতম ২ শতাংশ কর আরোপ করে। অর্থাৎ সেবা বিক্রি করে গ্রাহকদের কাছ থেকে যে পরিমাণ টাকা অপারেটর আয় করবে, তার ২ শতাংশ আয়কর হিসেবে দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে লাভ-লোকসান বিবেচনা করা হবে না। এই কর গ্রামীণফোনের ওপর কোনো প্রভাব ফেলে না। কারণ, গ্রামীণফোন আয় করে বেশি, করপোরেট কর আসে ন্যূনতম করের চেয়ে বেশি। ন্যূনতম করের কারণে ভুগতে হয় রবি, বাংলালিংক ও টেলিটককে।

মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা বিশেষ কোনো দাবি করছি না। করব্যবস্থায় ন্যায্যতা চাই। লোকসান হলেও কর দিতে হবে, এটা অসাংবিধানিক।’ তিনি বলেন, নীতিনির্ধারকেরা এটা জানেন, বোঝেন। কিন্তু কিছু হচ্ছে না।

শেয়ারবাজারে নিবন্ধিত হওয়ার পরও রবি কোনো বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে না উল্লেখ করে মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘৫০০ কোটি টাকা আজিয়াটার কাছে এমন বড় কিছু নয়। আমরা পুঁজিবাজারে গিয়েছিলাম সংশ্লিষ্টদের আশ্বাসের ভিত্তিতে। দিনের পর দিন যাচ্ছে, আমাদের দেওয়া কথা পূরণ করা হচ্ছে না।’ তিনি বলেন, রবির সঙ্গে কী করা হচ্ছে, তা বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও দেখছে।

আমরা বিশেষ কোনো দাবি করছি না। করব্যবস্থায় ন্যায্যতা চাই। লোকসান হলেও কর দিতে হবে, এটা অসাংবিধানিক।
মাহতাব উদ্দিন আহমেদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও, রবি

অনুষ্ঠানে দাবি করা হয়, বাংলাদেশে ব্যবসারত বিদেশি মোবাইল অপারেটরগুলো অন্য যেসব দেশে ব্যবসা করে, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি করহার এ দেশে। গুটিকয়েক দেশে ন্যূনতম কর রয়েছে, তবে তা সমন্বয়যোগ্য। মানে লোকসান হলে ফেরত পাওয়া যায়। রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বলেন, এখন ন্যূনতম করের কারণে পকেট থেকে আয়কর দিতে হচ্ছে।

দেশে সাধারণ কোম্পানির ওপর করপোরেট কর সাড়ে ৩২ শতাংশ। তবে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলে তা ২৫ শতাংশ। মোবাইল অপারেটরদের করপোরেট কর ৪৫ শতাংশ। একই হারে কর আদায় করা হয় তামাক কোম্পানির কাছ থেকেও। পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত মোবাইল অপারেটরের ক্ষেত্রে করপোরেট কর ৪০ শতাংশ। বিশেষ বিশেষ খাতে সরকার করপোরেট করে বড় ছাড় দিচ্ছে। যেমন পোশাক খাতে করপোরেট কর মাত্র ১২ শতাংশ।

আমরা পুঁজিবাজারে গিয়েছিলাম সংশ্লিষ্টদের আশ্বাসের ভিত্তিতে। দিনের পর দিন যাচ্ছে, আমাদের দেওয়া কথা পূরণ করা হচ্ছে না।
মাহতাব উদ্দিন আহমেদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও, রবি

সাম্প্রতিককালে ব্যবসায়ীরা মুনাফা না হলেও কর আদায় নিয়ে আপত্তি করছেন। ন্যূনতম করের পাশাপাশি সরকার উৎসে আয়করও আদায় করে। এ আয়কর পরে লাভ-লোকসানের সঙ্গে সমন্বয় করার কথা। তবে অভিযোগ আছে, আদায় করা টাকা লোকসান হলেও ফেরত দেওয়া হয় না। এ ছাড়া করপোরেট করহার নিয়েও আপত্তি আছে অনেকের।

মাহতাব উদ্দিনের আগে করব্যবস্থা নিয়ে হতাশার সুরে মন্তব্য করেছিলেন অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর। ১৭ এপ্রিল এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের করব্যবস্থা চূড়ান্ত রকমের ব্যবসা-অবান্ধব। এ কারণে ব্যবসা বন্ধ করেই দেওয়া উচিত। আমরা যারা বাংলাদেশে ব্যবসা করি, আমরা কাল থেকে কান ধরে ছেড়ে দিতে চাই। লাভ হোক আর লোকসান, যা-ই হবে, কর দিয়েই যাবেন। যারা কর দেয় না, তারাই ভালো থাকবে। তারা আরও বড় বড় ব্যবসা করবে আর আমরা মরব। এই ধরনের ব্যবসার মধ্যে আর আমরা নেই।’