মাত্র ১০ শতাংশ ধনীর হাতে বিশ্বের মোট সম্পদের ৭৬%

অসমতা বাড়ছে সারা পৃথিবীতে। আয়, সম্পদ, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা—সব খাতেই এই অসমতা দৃশ্যমান। সম্প্রতি প্রকাশিত বৈশ্বিক অসমতা প্রতিবেদন তথ্যানুসারে, ২০২১ সালে বিশ্বের মোট আয়ের ৫২ শতাংশই কুক্ষিগত হয়েছে পৃথিবীর শীর্ষ ১০ শতাংশ ধনী মানুষের হাতে। আর মধ্যম আয়ের বৈশ্বিক ৪০ শতাংশ মানুষের হাতে গেছে ৩৯ দশমিক ৫ শতাংশ আয়। এ ছাড়া নিম্ন আয়ের ৫০ শতাংশ মানুষের হাতে গেছে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ বৈশ্বিক আয়।

বৈশ্বিক সম্পদের ক্ষেত্রে এ বৈষম্য আরও বেশি। বিশ্বের ৭৬ শতাংশ সম্পদ কুক্ষিগত রয়েছে শীর্ষ ১০ শতাংশ ধনী মানুষের হাতে। মধ্যম আয়ের ৪০ শতাংশ মানুষের হাতে আছে মোট বৈশ্বিক সম্পদের ২২ শতাংশ আর নিম্ন আয়ের ৫০ শতাংশ মানুষের হাতে আছে মাত্র ২ শতাংশ সম্পদ। বৈশ্বিক পুঁজির ক্ষেত্রেও একই চিত্র দেখা যায়। বিশ্বের শীর্ষ ১০ শতাংশ ধনীর হাতেই সিংহভাগ পুঁজি পুঞ্জীভূত হয়ে আছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই সারা পৃথিবীর নিয়ন্ত্রণ এই ধনীদের হাতেই।

প্যারিস স্কুল অব ইকোনমিকসের তৈরি ওয়ার্ল্ড ইনইকুয়ালিটি রিপোর্ট বা বৈশ্বিক অসমতা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জন্য আলাদাভাবে অসমতার তথ্য দেওয়া হলেও বাংলাদেশের এ–সংক্রান্ত কোনো তথ্য প্রতিবেদনে নেই।
সম্পদ ও আয় অসমতার পাশাপাশি স্বাস্থ্য খাতেও অসমতার মারাত্মক চিত্র ধরা পড়েছে এই প্রতিবেদনে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যেখানে প্রতি লাখ মানুষের জন্য ৩৩টি আইসিইউ শয্যা আছে, সেখানে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে আছে মাত্র ২টি। সাব–সাহারা অঞ্চলে এ চিত্র আরও করুণ। সেখানে প্রতি লাখ মানুষের জন্য আইসিইউ শয্যা আছে শূন্য দশমিক ৬টি। এ ছাড়া বাংলাদেশসহ সাতটি উন্নয়নশীল দেশের ক্ষেত্রে দেখা যায়, ২০২০ সালে করোনার সংক্রমণের শুরুতে এক-তৃতীয়াংশেরও কম হাসপাতাল ও ক্লিনিকে মাস্ক ছিল।

প্রতিবেদনের মুখবন্ধ লিখেছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ ব্যানার্জি ও এস্থার দুফলো। মুখবন্ধে তাঁরা জানান, সঠিক নীতি করা হলে অসমতা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। আবার ভুল নীতির কারণে অসমতা লাগাম ছাড়া হয়ে যেতে পারে। এ প্রসঙ্গে তাঁরা রোনাল্ড রিগ্যান ও মার্গারেট থ্যাচারের নব্য উদারনীতিবাদী (বেসরকারি খাতনির্ভর প্রবৃদ্ধি) নীতির সমালোচনা করেছেন। এ ধারার কারণে ভারত ও চীনে প্রবৃদ্ধির হার বাড়লেও ভারত এখনো বিশ্বের সবচেয়ে অসম দেশের একটি বলে মন্তব্য করেন এ দুই অর্থনীতিবিদ।
এদিকে চলতি বছর বৈশ্বিক বিলিয়নিয়ার তথা অতিধনীদের পারিবারিক সম্পদের সম্মিলিত পরিমাণ বেড়ে বৈশ্বিক সম্পদের ৩ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, যা ২০২০ সালের প্রথম দিকে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আগে ছিল ২ শতাংশের সামান্য বেশি।