মাত্র ১.৫% দোকানে ভ্যাট মেশিন

দুই বছরে মাত্র ৩,৩৯৩টি প্রতিষ্ঠানে ইএফডি মেশিন বসেছে। সারা দেশে আড়াই লাখের বেশি ভ্যাট নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান আছে।

ভ্যাট

মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) আদায়ে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) বসানোর কাজে কেবলই পিছিয়ে পড়ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর হওয়ার পর দুই বছর পার হলেও কাঙ্ক্ষিত হারে ইএফডি বা ভ্যাট মেশিন বসাতে পারছেন না ভ্যাট কর্মকর্তারা। গত দুই বছরে কোনোবারই তাঁদের ভ্যাট মেশিন বসানোর লক্ষ্য অর্জিত হয়নি।

প্রথমবার অর্থাৎ ২০১৯-২০ অর্থবছরে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ১০ হাজার দোকানে ইএফডি বা ভ্যাট যন্ত্র বসানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল এনবিআর। কিন্তু সেবার ভ্যাট মেশিন আমদানি করা যায়নি বলে একটাও বসাতে পারেননি ভ্যাট কর্মকর্তারা। পরবর্তী ২০২০-২১ অর্থবছরেও ১০ হাজার মেশিন বসানোর লক্ষ্য ঠিক করা হয়। কিন্তু করোনা সংক্রমণনসহ নানা কারণে গত জুন মাস পর্যন্ত মাত্র ৩ হাজার ৩৯৩টি দোকানে ভ্যাটের মেশিন বসেছে, যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৩০ শতাংশের সামান্য বেশি। এমন বাস্তবতায় চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরেও ১০ হাজার ইএফডি মেশিন বসানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

২০১৯ সালে ভ্যাট আইন চালুর সময় ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিনা মূল্যে এক লাখ ইএফডি মেশিন বিতরণের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। দেশে বর্তমানে আড়াই লাখের বেশি প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট নিবন্ধন আছে। অথচ দুই বছরে মাত্র সাড়ে তিন হাজারের মতো প্রতিষ্ঠানে ভ্যাট মেশিন বসানো সম্ভব হয়েছে। এ ছাড়া বড় বড় কিছু প্রতিষ্ঠানে নিজস্ব উদ্যোগে পয়েন্ট অব সেল (পিওএস) মেশিন বসানো আছে। সেই হিসাবে, দেড় শতাংশ প্রতিষ্ঠানে ভ্যাট মেশিন বসেছে। এই হলো তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর ভ্যাট আইনের মাঠপর্যায়ের বাস্তবতা। বর্তমানে ২৪ ধরনের ব্যবসায়ে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে হিসাব রাখা বাধ্যতামূলক, যাদের বার্ষিক টার্নওভার বা মোট লেনদেনের পরিমাণ ৫ কোটি টাকার বেশি। ফলে অধিকাংশ ভ্যাট নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানকে ইএফডি কিংবা স্বয়ংক্রিয় হিসাব পদ্ধতি রাখতে হবে।

এদিকে ভ্যাট মেশিন বসানো নিয়ে ব্যবসায়ীদের কিছু আপত্তি আছে। তাঁরা বলছেন, একটি বিপণিবিতানে ১০০ দোকান থাকলে মাত্র ১০টি দোকানে ভ্যাট কর্মকর্তারা ইএফডি মেশিন বসান। ফলে যেসব দোকানে ইএফডি মেশিন বসানো হয়, সেসব দোকানে ভ্যাটসহ পণ্যের দাম বেশি পড়ে। যে কারণে ক্রেতারা ওই সব দোকান এড়িয়ে চলেন। সে জন্য ব্যবসায়ীরা চান, একটি এলাকার বা বিপণিবিতানের সব দোকানে একসঙ্গে ইএফডি মেশিন বসানো হোক।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, একটি বিপণিবিতানে ৫০০ দোকান আছে। ভ্যাট কর্মকর্তারা সরেজমিনে গিয়ে মাত্র ১০টি প্রতিষ্ঠানে ইএফডি মেশিন বসান। ফলে ওই ১০টি দোকানে ভ্যাট আদায় হয়। কিন্তু ওই সব দোকানে ক্রেতারা যেতে চান না। কারণ, বাকি দোকানগুলো ভ্যাট ছাড়া পণ্য বিক্রি করে।

এ প্রসঙ্গে এনবিআরের সদস্য (ভ্যাটনীতি) আবদুল মান্নান শিকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটি কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। ভ্যাটের মেশিন না থাকলে ভ্যাটের চালান কাটা যাবে না, আইন তা বলে না। এর মানে দাঁড়াল, একশ্রেণির ব্যবসায়ী ভ্যাটের আইন পরিপালন করছেন না।’

আবদুল মান্নান শিকদার আরও বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার গত এক বছরে বিভিন্ন সময়ে বিধিনিষেধ দিয়েছে। তখন দোকানপাট বন্ধ ছিল। তাই লক্ষ্য অনুয়ায়ী ইএফডি মেশিন বসানো সম্ভব হয়নি। আশা করি, চলতি অর্থবছরে ১০ হাজার মেশিন বসাতে পারব। যারা মেশিন সরবরাহ করবে, তাদের দিক থেকে মেশিন আমদানিতে কোনো সমস্যা নেই।’

দেশে ভ্যাট আইন চালুর পর একটি চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাট মেশিন আমদানির কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কিন্তু ২০১৯ সালের শেষের দিকে করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ায় মেশিন আমদানির বিষয়টি আটকে যায়। ঢাকা ও চট্টগ্রামে পরীক্ষামূলকভাবে চালুর জন্য ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে চীন থেকে ১০০টি মেশিন আনা হয়। কিন্তু তখন দেশে করোনার কারণে লকডাউন বা বিধিনিষেধ জারি করা হয়। ফলে চীনা প্রকৌশলীরা আসতে পারেননি। এর মাস চারেক পরে আগস্টে পরীক্ষামূলকভাবে ইএফডি মেশিন বসানো হয়। পরে তা নিয়মিত করা হয়। আমদানি করা ইএফডি মেশিনের সিংহভাগই মেশিন দেওয়া হয়েছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহর এবং আশপাশের এলাকায়।

ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ইএফডি মেশিন ব্যবহার করা হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভ্যাটের টাকার হিসাব এনবিআরের মূল সার্ভারে চলে যাবে। এরপর ওই প্রতিষ্ঠান শুধু রিটার্ন জমা দিয়ে ভ্যাট পরিশোধ করবে।