মানুষের আনাগোনা কম,বিল্লালের আয়ও কম

বিল্লাল হোসেন,চা বিক্রেতা, বিমানবন্দর বাসস্ট্যান্ড, ঢাকা

বিল্লাল হোসেন ১৬ বছর ধরে বিমানবন্দর বাসস্ট্যান্ড ও রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় চা বিক্রি করেন। এখন বিমানবন্দর বাসস্ট্যান্ডের পাশে পদচারী-সেতুর পূর্ব পাশে একটি ভ্যানে তাঁর চায়ের দোকান। কিন্তু আগে কখনো এমন বিপদে পড়েননি। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সবকিছু বন্ধ করে দেওয়ার পর চায়ের দোকানও খুলতে পারেননি তিনি। পাঁচ দিন পর পেটের দায়ে গতকাল সকালে তাঁর ভ্যানের পাশেইবড় কেটলি ও কিছু বিস্কুট নিয়ে দোকানদারিতে নেমেছেন বিল্লাল হোসেন। বিক্রিবাট্টা তেমন নেই।

পদচারী-সেতুর পাশে কড়া রোদের মধ্যেই গতকাল সোমবার দুপুরে কথা হলো বিল্লাল হোসেনের সঙ্গে। প্রথমে কথা বলতে একটু দ্বিধা করছিলেন। পরিচয় দিতেই দ্বিধা কেটে গেল। বিল্লাল হোসেন বললেন, ‘পয়লা বৈশাখের দিন থেকে দোকান খুলতে পারছি না। পুলিশ বাধা দেয়। কিন্তু পেট তো আর চলে না। ঘরে তিনটা খাওনের মুখ।’ ৫০০ টাকা ধার করে কয়েক দিন সংসার চালিয়েছেন বিল্লাল হোসেন। সংসারে কে কে আছেন, জিজ্ঞাসা করতেই জানালেন, স্ত্রী ও দুই নাবালক পুত্র। পরিবার নিয়ে আশকোনা এলাকার মেডিকেল রোডের পাশে এক বস্তিতে থাকেন। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘লকডাউন শুধু গরিব মানুষের জন্য। প্রাইভেট চলছে। কিন্তু বাস চলছে না, রিকশাও খুব বেশি চলছে না। বাস-রিকশা চলাচল করলে পথচারীদের জন্য এই বাসস্ট্যান্ড গমগম করে। এখন আশায় থাকি, কবে লকডাউন উঠবে।’

লকডাউনের আগে তাঁর চায়ের দোকানে প্রতিদিন ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকার বিক্রি হতো। কিন্তু গতকাল এক বেলায় মাত্র ৮০ টাকা বিক্রি হয়েছে।
বিল্লাল হোসেন

বিল্লাল হোসেন জানান, লকডাউনের আগে তাঁর চায়ের দোকানে প্রতিদিন ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকার বিক্রি হতো। কিন্তু গতকাল এক বেলায় মাত্র ৮০ টাকা বিক্রি করতে পেরেছেন। রাস্তায় মানুষ কম, তাই বেচাকেনাও নেই। প্রতি মাসে সংসার খরচ চালাতে বিল্লাল হোসেনের ১৭ থেকে ১৮ হাজার টাকা লাগে। ঘর ভাড়া দিতে হয় সাড়ে চার হাজার টাকা। এ ছাড়া খাবার খরচের পাশাপাশি দুই ছেলের পড়াশোনার খরচও আছে। সব খরচ বাদ দিয়ে চায়ের দোকান থেকে আয় হয় ১৩-১৪ হাজার টাকা। বাকি টাকার জোগান আসে স্ত্রীর গৃহকর্মীর মজুরি থেকে।

গত বছর করোনার সাধারণ ছুটিতে (মার্চ-এপ্রিল) কী করেছেন, জানতে চাইলে বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘গতবার ভয়ে পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়ি চলে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানেও অভাব। তিন মাস সঞ্চয় ভেঙে এবং মানুষের কাছে চেয়েচিন্তে খেয়েছি। কোনো কাজ ছিল না। তাই এবার আর বাড়ি যাইনি।’ তিনি জানান, গতবার কিছু সঞ্চয় ছিল। এবার তা-ও নেই। তিনি জানেন না সামনের দিনগুলোতে কী হবে। সবকিছু না খুললে রাস্তায় মানুষ বের হবে না। এতে দোকান খুলেও খুব বেশি লাভ হবে না। বেচাকেনা থাকবে না। ১০-১২ দিন পরই বাড়িওয়ালা ভাড়া চাইতে শুরু করবে। আয় না থাকলে বাড়িভাড়া দেবেন কীভাবে, সংসার চালাবেন কীভাবে—এসব প্রশ্নের কোনো উত্তর জানা নেই বিল্লাল হোসেনের। গতবারও সরকারি সহায়তা পাননি, এবার এখনো কোনো সহায়তা পাননি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধির কার্যালয়ে গিয়েও কোনো কাজ হয়নি। এমন সংকটে বিল্লাল হোসেন শুধু দিন গোনেন কবে সবকিছু স্বাভাবিক হবে। দুর্বিষহ জীবনের অবসান হবে।