মোটরসাইকেল কিনবেন: অপেক্ষা করবেন, না এখনই?

করোনাকালে গণপরিবহন এড়িয়ে চলতে অনেকেই মোটরসাইকেল কিনতে চান। তবে ইচ্ছাটি মনে মনে পুষে রেখেছেন। অপেক্ষা করছেন পরিস্থিতি কী দাঁড়ায়, সে জন্য।
করোনা পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে, তা বলা যায় না।

বিশেষজ্ঞরা ঈদের পরে সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা করছেন। বিপরীতে মোটরসাইকেলের বাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এ বছর দাম আর কমার সম্ভাবনা কম; বরং তা বাড়তে পারে। আর কয়েক মাস পরে মোটরসাইকেল কিনতে চাইলেও পছন্দের মডেল পেতে অপেক্ষা করতে হতে পারে। ভারতের করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতিতে কয়েকটি জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল কারখানায় উৎপাদন সাময়িক বন্ধ করা হয়েছে। কোনো কোনো কারখানা মোটরসাইকেলে উৎপাদনে অক্সিজেনের ব্যবহার আপাতত বন্ধ রেখে হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহ করছে। কোনো কারখানা সীমিত জনবল নিয়ে উৎপাদন চালাচ্ছে। তাতে সরবরাহ ব্যাহত হয়েছে।

সব মিলিয়ে পরিস্থিতি কী দাঁড়াতে পারে, তা জানতে চাইলে টিভিএস অটো বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার রায় বলেন, বাংলাদেশের মোটরসাইকেলের চাহিদার ৮০ শতাংশ আসে ভারত থেকে। যন্ত্রাংশেরও বড় উৎস ভারত। সেখানে কারখানায় উৎপাদন বন্ধ থাকলে তার প্রভাব বাংলাদেশে পড়বেই।

বিপণনকারী কোম্পানিগুলোর হিসাবে, দেশে বছরে লাখের মতো মোটরসাইকেল বিক্রি হয়। ভারতের ব্র্যান্ড বাজাজ, টিভিএস ও হিরো এবং হোন্ডা, ইয়ামাহা ও সুজুকির বাজার হিস্যাই বেশি।

জাপানের হোন্ডা ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল বিপণনকারী হোন্ডা মোটরসাইকেল অ্যান্ড স্কুটার ইন্ডিয়া (এইচএমএসআই) ১ মে থেকে ভারতে তাদের চারটি কারখানা সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করে। তাদের কারখানাগুলো ভারতের হরিয়ানা, কর্ণাটক, রাজস্থান ও গুজরাটে।

জাপানের হোন্ডা ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল বিপণনকারী হোন্ডা মোটরসাইকেল অ্যান্ড স্কুটার ইন্ডিয়া (এইচএমএসআই) ১ মে থেকে ভারতে তাদের চারটি কারখানা সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করে। তাদের কারখানাগুলো ভারতের হরিয়ানা, কর্ণাটক, রাজস্থান ও গুজরাটে।

বাংলাদেশে হোন্ডা মোটরসাইকেল উৎপাদনকারী বাংলাদেশ হোন্ডা প্রাইভেট লিমিটেডের অর্থায়ন ও বাণিজ্যিক বিভাগের প্রধান শাহ মোহাম্মদ আশিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ভারতে কারখানা সাময়িক বন্ধ থাকলেও খোলার পর বাড়তি কাজ করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে। তবে বিষয়টি নির্ভর করছে করোনা পরিস্থিতি কোন দিকে যায়, তার ওপর।

ভারতীয় পত্রিকাগুলোর অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, কারখানা সাময়িক বন্ধের পদক্ষেপ নিয়েছে হিরো মোটোকর্পও। গত মার্চেই ইয়ামাহা ভারতের কারখানা সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করে। সুজুকি উৎপাদন কার্যক্রমের পালা কমিয়ে দিয়েছে।

বাংলাদেশে সুজুকি ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেলের কারখানা করা র‌্যানকন মোটরসের হেড অব করপোরেট অ্যাফেয়ার্স ফাহিম আদনান খান প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশে মোটরসাইকেলের সরবরাহ পরিস্থিতি আগে থেকেই একটা সমস্যার মধ্যে রয়েছে। এর ওপর ভারতে উৎপাদন বিঘ্নিত হলে কিছুটা প্রভাব বাংলাদেশে পড়বেই

দাম কি কমবে, না বাড়বে

প্রশ্নটি করা সহজ, উত্তর পাওয়া কঠিন। মোটরসাইকেল বিপণনকারী কোম্পানির সিইওরা বাজার প্রতিযোগিতার স্বার্থে এ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সরাসরি মন্তব্য করতে নারাজ। তবে তাঁরা ইঙ্গিত দিয়েছেন, যা থেকে পাঠকের বুঝে নিতে হবে পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে।

সিইওদের বক্তব্য হলো, বিশ্ববাজারে ইস্পাত ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে। ইস্পাতের দাম বাড়লে মোটরসাইকেল উৎপাদনের ব্যয় সরাসরি বেড়ে যায়। আর জ্বালানি তেল প্রভাব ফেলে পরোক্ষভাবে।

বিশ্বব্যাংকের পণ্যবাজার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালের শেষ প্রান্তিকে প্রতি টন আকরিক লোহার দাম ছিল ১৩৩ মার্কিন ডলার, যা এপ্রিলে গড় ১৮০ ডলারে দাঁড়িয়েছে। একটি মডেলের উদাহরণ দিয়ে একজন সিইও বলেন, সেটির পেছনে ব্যয় বেড়েছে ৮০ মার্কিন ডলারের মতো। এর ওপর ১৫৫ শতাংশ করভার যোগ করলে ব্যয় অনেকটাই বেড়ে যায়।

হিরো ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল উৎপাদনকারী এইচএমসিএল নিলয় বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা বিজয় কুমার মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, বাজেটের আগেই কিনে ফেলা উচিত। মোটরসাইকেল উৎপাদনে ব্যয় যতটা বেড়েছে, তা এখনো কোম্পানিগুলো ক্রেতার ওপর চাপায়নি।

সব মিলিয়ে ক্রেতাদের কি মোটরসাইকেল কেনার জন্য অপেক্ষা করা উচিত, না এখন কেনা উচিত—এ প্রশ্নের উত্তর জানতে চেয়েছিলাম দুজনের কাছে। হিরো ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল উৎপাদনকারী এইচএমসিএল নিলয় বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা বিজয় কুমার মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, বাজেটের আগেই কিনে ফেলা উচিত। মোটরসাইকেল উৎপাদনে ব্যয় যতটা বেড়েছে, তা এখনো কোম্পানিগুলো ক্রেতার ওপর চাপায়নি। বাজেটে যদি কোম্পানিগুলোর কিছু দাবি (মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা ও অন্যান্য) পূরণ না করা হয়, তাহলে কারও পক্ষে বাড়তি ব্যয় বেশি দিন নিজেদের মধ্যে রাখা সম্ভব হবে না।

জাপানের ইয়ামাহা ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল বিপণনকারী এসিআই মোটরসের নির্বাহী পরিচালক সুব্রত রঞ্জন দাস বলেন, কিনতে চাইলে এখনই কিনে ফেলা উচিত। অপেক্ষা করে কোনো লাভ হবে না, উল্টো লোকসান হতে পারে।