যত ছোটাছুটি আমচাষিদের

ছবি: প্রথম আলো

থোকা থোকা আমের ভারে যে ডাল নুইয়ে পড়েছিল, শিলাবৃষ্টির পরে তা ঝাঁটার খিলের মতো সোজা হয়ে গেছে। সে রকমই একটি ডাল ধরে উদাস হয়ে তাকিয়ে রয়েছেন চারঘাটের জোতকার্তিক গ্রামের আমচাষি পলাশ কুমার প্রামাণিক। জানালেন, আগের বছরগুলোতে বাগানটি সাত-আট লাখ টাকায় বিক্রি হতো। কিন্তু শিলাবৃষ্টি সব শেষ করে দিয়ে গেছে। এবার তিন লাখ টাকাও বিক্রি করতে পারবেন কি না, সেই চিন্তায় তিনি দিশাহারা হয়ে পড়েছেন।

গতকাল সোমবার সকাল থেকেই ছত্রাকনাশক ওষুধ দিয়ে আর পরিচর্যা করে গাছের বাকি আম বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। রাজশাহীর আমসমৃদ্ধ এলাকা চারঘাট ও বাঘায় গত রোববার বিকেলে ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে একই রকম ক্ষতি হওয়ার কথা অন্য আমচাষিরাও বলেছেন। তবে কৃষি কর্মকর্তারা অবশ্য মনে করেন, এই ক্ষতি ব্যাপক নয়।

পলাশ প্রামাণিকের ভাষায়, গত ১৫ বছরের মধ্যে মৌসুমের শুরুতে এমন শিলাবৃষ্টি হয়নি। শিলা খুব বড় ছিল না, কিন্তু দীর্ঘক্ষণ ধরে পড়ার কারণে আমের বেশি ক্ষতি হয়েছে। তিনি বলেন, ২৫ বিঘা বাগানে প্রায় ৩০০ আমগাছ রয়েছে। এবার গাছে প্রচুর মুকুল এসেছিল, কিন্তু লাভ হলো না। মৌসুমের শুরুতেই কুয়াশা, এরপর দীর্ঘ খরা। রোববারের শিলাবৃষ্টিতে আরও বড় সর্বনাশ হলো।

জোতকার্তিকের পরের গ্রাম চারঘাটের কালুহাটি। সেখানে কাকতালীয়ভাবে শিলাবৃষ্টির প্রভাব খুব বেশি পড়েনি। বড়াল নদী পার হয়েই বাঘার রুস্তমপুর গ্রাম। ভারতীপাড়া গ্রামের চাষি কামাল হোসেন বলেন, প্রচুর শিলাবৃষ্টি হয়েছে। যেসব আমের গায়ে শিলা পড়েছে, সেগুলো নষ্ট হয়ে যাবে।

চারঘাটের ডাকরা গ্রামে গিয়েও চাষিদের ওষুধ ছিটানোর মেশিন নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে দেখা গেছে। এই গ্রামের আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘প্রায় সব আমে শিলার আঘাত লেগেছে। এখন ওষুধ দিচ্ছি, আল্লাহ যা করেন তা–ই হবে।’

কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, শিলাবৃষ্টির পর গাছে যেসব আম রয়েছে, সেগুলোতে এখন দাগ লেগে যেতে পারে। আর দাগ পড়লে কিছুদিন পরেই পচে ঝরে যাবে। সে জন্য চাষিরা আমে ওষুধ ছিটাতে ওঠেপড়ে লেগেছেন।

বাঘা উপজেলার আড়পাড়া গ্রামের বাজারে সজীব মেশিনারিজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান আমবাগানে কীটনাশক স্প্রে করার ২০টি মেশিন ভাড়া দেয়। এত দিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রতিটি মেশিনের ভাড়া ১০০ টাকা করে নেওয়া হলেও গতকাল ২০০ টাকা নিয়েছে বলে জানান আমচাষি আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, শ্যালো ইঞ্জিনচালিত মেশিনগুলোর ভাড়াও ৪০০ টাকার বদলে ৮০০ টাকা করা হয়েছে। আনোয়ার হোসেন জানান, তাঁর এক হাজার গাছ রয়েছে। শিলাবৃষ্টিতে প্রায় অর্ধেক আম ঝরে গেছে।