যুক্তরাজ্যের সহায়তা বন্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশ

আসিফ সালেহ, নির্বাহী পরিচালক, ব্র্যাক

ব্র্যাককে আর সহায়তা দিচ্ছে না যুক্তরাজ্য সরকার। তাদের সঙ্গে ব্র্যাকের ৪৫ কোটি পাউন্ডের ১০ বছরব্যাপী প্রকল্প শেষ হয়েছে। এরপর সহায়তা বন্ধ করে দিয়েছে তারা। এ ঘটনা বাংলাদেশের উন্নয়ন জগতের জন্য বড় আঘাত হিসেবেই বিবেচনা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

সম্প্রতি ব্রিটেনের দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকার এক সংবাদে এসব কথা বলা হয়েছে।

ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ মনে করেন, এই সহায়তা বন্ধের কারণে বাংলাদেশের লাখ লাখ মেয়ে শিক্ষাবঞ্চিত হবে। একইভাবে লাখ লাখ নারী পরিবার পরিকল্পনাসামগ্রী ও ধারণা থেকে বঞ্চিত হবে। শুধু তা–ই নয়, অনেক মানুষ চরম দারিদ্র্যের নিগড়ে থেকে যাবে।

গত শুক্রবার জি–৭ সম্মেলনে আগামী পাঁচ বছরে যুক্তরাজ্য সরকার মেয়েদের শিক্ষায় অতিরিক্ত ৪৩ কোটি পাউন্ড ব্যয় করবে। ৯০টি দেশে এই অর্থ ব্যয় করবে তারা। জি–৭ সম্মেলনে দেওয়া এই ঘোষণা নিয়ে ভণ্ডামির অভিযোগ উঠেছে। শিশুবিষয়ক দাতব্য সংগঠন দেয়ারওয়ার্ল্ডের চেয়ারম্যান সারাহ ব্রাউন এই তহবিলকে সমুদ্রের মধ্যে এক ফোঁটা জলের সঙ্গে তুলনা করেছেন।

প্রথমত, কোভিড মহামারির কারণে শিক্ষণ প্রক্রিয়া সারা পৃথিবীতেই ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিক সহায়তা বাজেট যে বিপুল পরিমাণ হ্রাস করা হয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে এই অর্থ কিছুই নয় বলে অভিযোগ সারাহ ব্রাউনের।

দ্য গার্ডিয়ানকে আসিফ সালেহ আরও বলেন, সহায়তা এ রকম নাটকীয়ভাবে কমে যাওয়া খুবই অপ্রত্যাশিত। বড় আঘাত। ব্রিটিশ সরকার যে ব্র্যাকের সঙ্গে অংশীদারি থেকে নিজেদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে নেবে, তা ছিল অপ্রত্যাশিত। আগামী পাঁচ বছরে ২০ কোটি পাউন্ড দেওয়ার অঙ্গীকার ছিল তাদের। সেখান থেকে একদম শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে তারা—এটা ভুল।

প্রতিবেদনের তথ্যমতে, মহামারি শুরু হওয়ার পর বাংলাদেশের অন্তত ১ কোটি ১৬ লাখ মানুষ চরম দারিদ্র্যে পতিত হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের হিসাবমতে, ২০২১ সালের মধ্যে পৃথিবীতে আরও অন্তত ১৫ কোটি মানুষ চরম দারিদ্র্যের কবলে পড়বে।

ব্রিটিশ সহায়তা নিয়ে ব্র্যাক দেশের বৃহত্তম অনানুষ্ঠানিক বিদ্যালয় কর্মসূচি পরিচালনা করেছে। এসব বিদ্যালয়ে ১ কোটি ২০ লাখ শিশু পড়াশোনা করেছে। এ ছাড়া চরম দারিদ্র্য থেকে মানুষকে বের করে আনার যে কর্মসূচি ব্র্যাক পরিচালনা করেছে, তা–ও যুক্তরাজ্যের সহায়তায় পরিচালিত হয়েছে। এই কর্মসূচি সারা পৃথিবীতেই মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ইথিওপিয়া, ঘানা, ভারত, পাকিস্তান, হন্ডুরাস ও পেরুর ২০ লাখ মানুষ এই কর্মসূচির মাধ্যমে চরম দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে এসেছে।