রেস্তোরাঁমালিকেরা জামানত ছাড়া কোটি টাকা ঋণ চান

হোটেল-রেস্তোরাঁমালিকেরা করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে জামানত ছাড়াই ১০ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ চেয়েছেন। ব্যবসা চলমান রাখার জন্য ৪ শতাংশ সুদে এই ঋণ পেতে চান তাঁরা।

আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে গতকাল শনিবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি এই দাবি জানায়। ঢাকার পল্টনে সমিতির নিজস্ব কার্যালয়ে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে নেতারা বলেন, করোনা মহামারিতে যত খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হোটেল-রেস্তোরাঁ। তাঁরা প্রস্তাবিত বাজেটে শ্রেণিভিত্তিক ভ্যাট আরোপেরও দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে সমিতির সভাপতি ওসমান গনি, মহাসচিব ইমরান হাসান, যুগ্ম মহাসচিব ফিরোজ আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মোহাম্মদ আন্দালিব, উপদেষ্টা খন্দকার রুহুল আমিনসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

নিজেদের বিভিন্ন দাবি তুলে ধরে ওসমান গনি বলেন, চার ও পাঁচ তারকা হোটেল-রেস্তোরাঁর ভ্যাটের হার হবে ১৫ শতাংশ। যেসব রেস্টুরেন্টে বিদেশি খাবার বিক্রি হয়, সেখানে ভ্যাটের হার হবে সর্বোচ্চ সাড়ে ৭ শতাংশ। কর্মজীবী, শ্রমজীবী, দিনমজুরদের জন্য নিম্ন ও মাঝারি মানের রেস্তোরাঁ ও পথখাবারের ক্ষেত্রে ভ্যাটের হার হবে ৩ থেকে ৫ শতাংশ। আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্যানটিন বা ক্যাফেটেরিয়া, শিল্পকারখানার ক্যানটিন ও হোস্টেলের খাবারের ওপর ভ্যাটের হার সর্বোচ্চ ২ শতাংশ হতে পারে।

সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান বলেন, দেশে বিভিন্ন শ্রেণির হোটেল-রেস্তোরাঁ রয়েছে। এগুলোর ব্যবসায়িক পরিধি একেক রকম। কিন্তু সার্বিকভাবে ১৫ শতাংশ ভ্যাট যুক্তিযুক্ত নয়। ভ্যাটের হার বেশি হওয়ায় অনেকে ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছেন। তিনি বলেন, যাঁরা নিয়মিত ভ্যাট দিচ্ছেন, তাঁরা বিপদে পড়ছেন বেশি। কারণ, যাঁরা ভ্যাট দেন, তাঁদের খাবারের দাম বেশি। এতে যাঁরা ভ্যাট দিচ্ছেন না, তাঁদের সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতা তৈরি হচ্ছে। এ কারণে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। সঠিক হারে ভ্যাট নির্ধারণ করলে এই খাত থেকে ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকার ভ্যাট আদায় করা সম্ভব বলে জানান তিনি।

ভ্যাট কমানোর পাশাপাশি সব হোটেল-রেস্তোরাঁকে একটি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের আওতায় নেওয়া এবং শিল্পের মর্যাদা দেওয়ার দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। বলা হয়, বর্তমানে সরকারের ১৩টি সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে তবেই রেস্তোরাঁ পরিচালনা করতে ও লাইসেন্স পেতে হয়। এতে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়তে হয় উদ্যোক্তাদের।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, হোটেল-রেস্তোরাঁ খাতকে শিল্পের মর্যাদা না দেওয়ার কারণে বিদ্যুৎ-গ্যাস ও পানির জন্য বেশি বিল বহন করতে হচ্ছে। এতে খাবারের দাম বেড়ে যাচ্ছে। ব্যাংকের ঋণসহ অন্যান্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন উদ্যোক্তারা। সমিতির নেতারা সম্পূরক কর ১০ শতাংশ বাতিলের পাশাপাশি তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে ভ্যাট আদায়ের নামে হয়রানি বন্ধের দাবি জানান।

সংগঠনের সভাপতি ওসমান গনি বলেন, বর্তমানে অনলাইন ডেলিভারি সার্ভিসগুলো স্বেচ্ছাচারীভাবে ব্যবসা পরিচালনা করছে। তারা হোটেল-রেস্তোরাঁ খাতকে আরও ঝুঁকিতে ফেলছে। তাদের কারণে এই খাতের সুনামও নষ্ট হচ্ছে। পাশাপাশি তারা বড়দের প্রমোশন করায় ছোটরা পিছিয়ে পড়ছে।