রোজায় নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে না

পণ্যসামগ্রীর মজুত, আমদানি, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতিবিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। আজ রাজধানীর মতিঝিলে এফবিসিসিআই ভবনেছবি: সংগৃহীত

দেশে পর্যাপ্ত মজুত ও সরবরাহ স্বাভাবিক থাকায় পবিত্র রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়বে না বলে আশ্বস্ত করেছেন ব্যবসায়ীরা। এরপরও অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে সুযোগ না নিতে পারেন, সে জন্য বাজার তদারকি কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই)।

রাজধানীর মতিঝিলে এফবিসিসিআই ভবনে শনিবার আয়োজিত পণ্যসামগ্রীর মজুত, আমদানি, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতিবিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় ব্যবসায়ীরা নিত্যপণ্যের দাম না বাড়ার আশ্বাস দেন। সভায় নিত্যপণ্যের উৎপাদক, সরবরাহকারী, ব্যবসায়ী ও ভোক্তা অধিকার প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

ব্যবসায়ীরা বলেন, বাজারে নিত্যপণ্যের দাম এখন অনেকটা স্থিতিশীল রয়েছে। সরকার সয়াবিন আমদানিতে শুল্ক কমানোর ফলে এটার দামও এখন আর বাড়ার আশঙ্কা নেই। এ ছাড়া চাল, পেঁয়াজ, রসুন, আলু, ছোলা, চিনি ও খেজুরের মতো মাহে রমজানে অধিক ব্যবহৃত পণ্যগুলোর দামও আর বাড়বে না। তবে অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে সুযোগ না নিতে পারেন, এ জন্য নিয়মিত বাজার তদারকি জোরদারের পরামর্শ দেন তাঁরা।

সভায় এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘রমজানে বাজার স্বাভাবিক রাখতে এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে ৪৬ সদস্যবিশিষ্ট বাজার মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির সদস্যরা সরকারনির্ধারিত ৪৬টি পণ্য বেঁধে দেওয়া দামে বিক্রি হচ্ছে কি না, তা তদারকি করবে।’

বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদেরও দায়িত্ব রয়েছে উল্লেখ করে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘সারা বিশ্বে উৎসব সামনে রেখে ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম কমান। বাংলাদেশেও এমন সংস্কৃতি তৈরি করতে চাই। ব্যবসায়ীদের অনেক বদনাম হয়েছে। এটা ঘোচাতে চাই। এ জন্য আমি বারবার সবার সঙ্গে বসে আলোচনা করছি, যাতে ঢালাওভাবে ব্যবসায়ীদের অসাধু বলার সুযোগ কেউ না পায়।’

বিশ্ববাজারে বিভিন্ন কাঁচামাল ও পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কথা জানিয়ে মো. জসিম উদ্দিন সরকারের কাছে কর ও শুল্কহার সমন্বয় করার দাবি জানান। তিনি বলেন, যেহেতু পণ্যের দাম ও শিপিং খরচ বেড়েছে, তাই শুল্ক এবং করহার কমালেও সরকারের রাজস্বের ঘাটতি হবে না, বরং সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দেওয়া যাবে।

আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত ঋণখেলাপি না করার আহ্বান জানিয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, আমদানি করা পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে ব্যবসায়ীদের প্রাপ্ত ঋণসীমা উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। তাই পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিদ্যমান চলতি মূলধন ঋণের সীমা অন্তত ৪০ শতাংশ বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে এফবিসিসিআই চিঠি দিয়েছে।

মতবিনিময় সভায় টিকে গ্রুপের পরিচালক সফিউল আথহার তাসলিম বলেন, গুটিকয়েক অসাধু ব্যবসায়ীর কারসাজির কারণে গোটা ব্যবসায়ী সমাজকে দায় নিতে হচ্ছে। তবে রোজায় বাজার অস্থিতিশীল হওয়ার কোনো শঙ্কা নেই। মিলমালিকদের কাছে পর্যাপ্ত তেল রয়েছে এবং বাজারেও সরবরাহ ঘাটতি হবে না।

মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. বশির উদ্দিন বলেন, সরবরাহ ঠিক থাকলে বাজারে পণ্যমূল্য স্থিতিশীল থাকবে। একই আশ্বাস দেন বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মাওলা।

এ সময় কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রতিনিধি কাজী আব্দুল হান্নান বলেন, ‘উৎপাদক পর্যায়ে সরবরাহে ঘাটতি না থাকলেও খুচরায় মূল্যবৃদ্ধির অন্যতম কারণ চাঁদাবাজি। এটা বন্ধ করতে হবে। খুচরা ব্যবসায়ীরা কে কত লাভ করতে পারবেন, তারও একটা ধারণা থাকা উচিত।’

সভায় অনলাইনে যুক্ত হয়ে রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মোস্তফা সোহরাব চৌধুরী পুলিশের চাঁদাবাজি বন্ধের আহ্বান জানান।

সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী, সাবেক সহসভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন, পরিচালক রেজাউল করিম, হারুন অর রশীদ, আনোয়ার সাদাত সরকার, এম জি আর নাসির মজুমদার, তাবারাকুল তোসাদ্দেক হোসেন খান, আবু হোসাইন ভূঁইয়া, নাদিয়া বিনতে আমিন, জোশদা জীবন দেবনাথ, তাহমিন আহমেদ, বিজয় কুমার কেজরিওয়াল প্রমুখ।

আরও পড়ুন