শিগগিরই মূল্যস্ফীতি কমবে না, বরং বাড়বে

জাহিদ হোসেন, সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ, বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়

বর্তমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি আমদানি করা, এটা সত্য। তবে পুরোটা সত্য নয়। এবারের বাজেট বক্তৃতায় শুধু একবার বলা হয়েছে, মূল্যস্ফীতি শুধু আমদানি করা নয়, স্থানীয় বাজারেরও প্রভাব আছে।

মূল্যস্ফীতির পুরোটা যে আমদানি করা নয়, এর কিছু উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মূল্যস্ফীতি গণনায় দেখা গেছে, গত মে মাসে চালের দাম ৩-৪ টাকা বেড়েছে। শুধু চালের দাম নয়; গম, মাছ-মাংস, শাকসবজি, ভোজ্যতেল—প্রায় সবকিছুর দাম বেড়েছে। এগুলো মূল্যস্ফীতি গণনায় বড় অবদান রাখে। গম ও ভোজ্যতেল—এ দুটো পণ্য আন্তর্জাতিক বাজারের কারণে দাম বাড়তে পারে। বাকি পণ্যগুলো তো অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে কেনা হয়।

চালের দাম বৃদ্ধি আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। তবু কেন ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়ল? আমার ধারণা, চালের উৎপাদন নিয়ে যেসব তথ্য দেওয়া হচ্ছে, বাস্তবে এর চেয়ে কম উৎপাদন হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও বিবিএসের কৃষি উৎপাদনের তথ্যের মধ্যে সব সময় ফারাক থাকে।

এমনিতেই দেশে চালের উৎপাদন কমেছে। সম্প্রতি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে বিশ্বজুড়ে খাদ্যসংকট হতে পারে। এসব বিবেচনা করে দেশের চালের ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে, সামনে চালের দাম বাড়তে পারে। তাই তাঁরা মজুতে বেশি মনোযোগী হয়েছেন। এসব কারণে বাজারে পর্যাপ্ত চাল সরবরাহ নেই। তাই চালের দাম বেড়েছে।

একইভাবে জামাকাপড়, জুতা, বিভিন্ন ধরনের সেবাসহ খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের দাম বেড়েছে। করোনার ধাক্কা কাটিয়ে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের পথে চাহিদা বেড়েছে। তাই খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত অনেক পণ্যের দাম বেড়েছে, কিন্তু এই চাহিদা কমানোর উদ্যোগ নেই।

আগামী তিন-চার মাস প্রয়োজনীয় খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনা বেশি, দাম কমার সুযোগ নেই। এর পেছনে কিছু কারণ আছে। যেমন মে মাসে ডলারের দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। ডলারের বাড়তি দামে যেসব পণ্যের ঋণপত্র খোলা হয়েছে, সেগুলো বাজারে আসতে আরও দুই-তিন মাস সময় লাগবে। এ ছাড়া বাজেটে ল্যাপটপ, মুঠোফোন, পানি বিশুদ্ধকরণসহ মধ্যবিত্তের ব্যবহার্য বিভিন্ন জিনিসপত্রের ওপর শুল্ক-কর বাড়ানো হয়েছে। সার্বিকভাবে আগামী অর্থবছরের বাজেট বেশ সম্প্রসারণমূলক-সংশোধিত বাজেট থেকে ২০ শতাংশ বেশি, যার কারণে চাহিদা বাড়বে।

সর্বশেষ শঙ্কার কারণ হলো, দেশের বড় অংশের বন্যা প্লাবিত হওয়া। আমনের বীজতলা, সবজি নষ্ট হয়েছে। এই বন্যাও মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে দিতে পারে। আর এবারের বাজেটে নিম্নবিত্ত ও গরিব মানুষের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে বাড়তি কিছু নেই। বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করা হবে, এমন কথাও শোনা যাচ্ছে। বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি মূল্যস্ফীতিকে আরও উসকে দেবে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় শিগগিরই মূল্যস্ফীতি কমবে না, বরং বাড়বে।

লেখা: জাহিদ হোসেন, সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ, বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়