শিশুশ্রম সবচেয়ে বেশি কুড়িগ্রামে

২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে জুনে দৈবচয়নের ভিত্তিতে ৬৪ হাজার ৪০০ খানা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে জরিপটি পরিচালনা করা হয়।

প্রথম আলো ফাইল ছবি

কুড়িগ্রাম জেলায় গরিব মানুষ সবচেয়ে বেশি, এটি পুরোনো খবর। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, এ জেলার প্রতি ১০০ জনে ৭২ জনই গরিব। এবার বিবিএসের নতুন জরিপ বলছে, গরিব মানুষের পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি শিশু শ্রমিকও এ জেলায়। কুড়িগ্রামের মোট শিশুর ১৯ শতাংশই কোনো না কোনো শ্রমে জড়িত। কুড়িগ্রামের পর শিশু শ্রমিক বেশি বরগুনা ও দিনাজপুরে। দুই জেলায় এ হার যথাক্রমে ১৫ ও ১৪ শতাংশ।

বিবিএস ও ইউনিসেফের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত ‘মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে’তে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে জুনে দৈবচয়নের ভিত্তিতে ৬৪ হাজার ৪০০ খানা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে জরিপটি পরিচালনা করা হয়। ১০ জুন বিবিএস এ জরিপের ফলাফল প্রকাশ করেছে। জরিপে শিশুর বয়স ধরা হয়েছে ৫ থেকে ১৭ বছর।

কুড়িগ্রামে শিশুশ্রম বেশি হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, এ জেলায় দারিদ্র্যের হার বেশি। তা ছাড়া শিক্ষা সম্পর্কে মানুষের সচেতনতাও কম। শিক্ষা যে একটা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ, তা এখানকার মানুষ বুঝতে চান না। সচেতনতা ও সঠিক শিক্ষার অভাবই এখানকার শিশুশ্রমের অন্যতম কারণ। তিনি আরও বলেন, শিশুশ্রম কমানো সম্ভব যদি স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যায়।

সহায়তায় পিছিয়ে চুয়াডাঙ্গা

দেশের সব জেলাতেই সরকারের খাদ্যসহায়তা, নগদ সহায়তা, কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ নানা ধরনের কর্মসূচি রয়েছে। স্কুলেও উপবৃত্তিসহ বিভিন্ন সহায়তা দেওয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে। বিবিএসের এ জরিপে উঠে এসেছে, স্কুলসংশ্লিষ্ট সরকারের যেসব সহায়তা রয়েছে, তা সবচেয়ে কম পায় চুয়াডাঙ্গার শিক্ষার্থীরা। এ জেলার মাত্র ৩৩ শতাংশ শিক্ষার্থী বলেছে, তারা সরকারের কোনো না কোনো সহায়তা পেয়েছে। তার মানে বাকি ৬৭ শতাংশ শিক্ষার্থী কোনো সহায়তা পায় না। শিক্ষার্থীদের সহায়তা প্রাপ্তির দিক থেকে পিছিয়ে থাকা আরেক জেলা পঞ্চগড়। এই জেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের ৪২ শতাংশ শিক্ষার্থী বলেছে, তারা সরকারি সহায়তা পেয়েছে। জরিপের তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি সহায়তা পেয়েছে মুন্সিগঞ্জের শিক্ষার্থীরা। সেখানকার ৮২ শতাংশ শিক্ষার্থী বলেছে, তারা বিভিন্ন সময় সরকারের কোনো না কোনো সহায়তা পেয়েছে। এরপর আছে যথাক্রমে মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ। অন্যদিকে খানাকেন্দ্রিক সহায়তা পাওয়ার দিক থেকে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে জামালপুর। সেখানকার মাত্র ৫৩ শতাংশ খানা বলেছে, তারা সরকারের কোনো না কোনো সহায়তা পেয়েছে।

জন্মনিবন্ধন কম মাদারীপুরে

স্কুলে ভর্তি থেকে শুরু করে যেকোনো প্রয়োজনে এখন জন্মনিবন্ধন সনদ আবশ্যক। কিন্তু বিবিএসের জরিপের তথ্য বলছে, জেলাওয়ারি জন্মনিবন্ধনের হার আশানুরূপ নয়। সবচেয়ে কম জন্মনিবন্ধন হার মাদারীপুরে, তা মাত্র ১৭ শতাংশ। এরপর কুষ্টিয়ায় এ হার ২৩ শতাংশ ও শেরপুরে ২৭ শতাংশ। যাদের বয়স পাঁচ বছরের নিচে, জরিপে তাদের জন্মনিবন্ধনের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। বিবিএসের জরিপে দেখা গেছে, ১৫ থেকে ২৪ এই বয়সী নারীদের মধ্যে সবচেয়ে কম সাক্ষরতার হার বান্দরবানে—৬৭ শতাংশ।