শুল্ক কর্মকর্তাদের ক্ষমতা বাড়ল

এবারের বাজেটে কাস্টমস আইনে তিনটি মৌলিক পরিবর্তন আনা হয়েছে। শুল্ক কর্মকর্তার ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি জরিমানার পরিমাণও বাড়ানো হয়েছে

শুল্ক কর্মকর্তাদের ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। একই সঙ্গে বাড়ানো হয়েছে শুল্ক আইনে জরিমানার পরিমাণও। ফলে ব্যবসায়ীরা শুল্ক আইন মেনে না চললে আগের চেয়ে বেশি জরিমানা গুনতে হবে। শুল্ক-কর ফাঁকির অভিযোগ পাওয়া গেলে অপেক্ষাকৃত ছোট কর্মকর্তাদের মীমাংসা করার ক্ষমতা আগের চেয়ে বেড়েছে। আগামী অর্থবছর থেকে ব্যবসায়ীদের জন্য শুল্ক আইন মেনে চলা আরও কঠোর হচ্ছে। শুল্কায়নের জন্য সমুদ্রসীমা বা জলসীমাও দ্বিগুণ হয়েছে।

এবারের শুল্ক আইনে তিনটি মৌলিক পরিবর্তন আনা হয়েছে। তিনটি পরিবর্তনই শুল্ক কর্মকর্তাদের ক্ষমতা বৃদ্ধি কিংবা জরিমানা বৃদ্ধিসংক্রান্ত। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) শুল্কায়ন প্রক্রিয়ায় আরও বেশি স্বচ্ছতা আনতে এ উদ্যোগ নিয়েছে।

এবার দেখা যাক, শুল্ক আইনে এবার কী ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে। ১৯৬৯ সালের শুল্ক আইনে জরিমানার পরিমাণ দ্বিগুণ করা হয়েছে। কোনো আমদানিকারক যদি শুল্ক আইন সঠিকভাবে না মানেন, তাহলে এখন থেকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। আগে এ জরিমানার পরিমাণ ছিল ৫০ হাজার টাকা। কোনো আমদানিকারক যদি কোনো প্রয়োজনীয় দলিল জমা না দেন কিংবা কোনো শুল্ক কর্মকর্তা একটি দলিল চাইলেন, আমদানিকারক তা দিতে পারলেন না, তাহলে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। আগে এ জরিমানার পরিমাণ ছিল ২০ হাজার টাকা। ১৯৮৬ সালের পর এ জরিমানার পরিমাণ আর বাড়ানো হয়নি।

এবার আসি শুল্ক কর্মকর্তাদের কী ধরনের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। ধরুন, একজন আমদানিকারক ১০ লাখ টাকার একটি চালান এনেছেন। সে ক্ষেত্রে পণ্যের মিথ্যা ঘোষণা দিয়েছেন কিংবা আইনের অন্য কোনো ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন। এত দিন একজন ডেপুটি কমিশনারের ওই আমদানিকারকের নথি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার ক্ষমতা ছিল, তিনিই জরিমানা কিংবা মওকুফ করতে পারতেন। এখন থেকে সহকারী কমিশনারের পর্যায়ের কর্মকর্তারা ওই আমদানিকারকের নথি যাচাই–বাছাই করে বিষয়টি মীমাংসা করতে পারবেন। তাঁদের শুল্কসংক্রান্ত অভিযোগ মীমাংসা করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এবারের বাজেটে অপেক্ষাকৃত ছোট ছোট পদবির কর্মকর্তাদের এ ধরনের ক্ষমতা আগের চেয়ে বাড়ানো হয়েছে।

যেমন আগে একজন রাজস্ব কর্মকর্তা দুই লাখ টাকার চালানের নথি যাচাই–বাছাই করতে পারতেন, এখন তিনি পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত চালানের মীমাংসা করতে পারবেন। একজন সহকারী কমিশনার এখন থেকে ১০ লাখ টাকা চালানের নথি পরীক্ষা করতে পারবেন। আর উপকমিশনারের সীমা ১০ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা করা হয়েছে। অন্যদিকে যুগ্ম কমিশনারের ক্ষমতা দ্বিগুণ করে ৩০ লাখ টাকা হয়েছে। অতিরিক্ত কর কমিশনার ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত একটি চালান যাচাই-বাছাই করতে পারবেন। আগে এ সীমা ছিল ২০ লাখ টাকা। আর কমিশনার বা মহাপরিচালক পর্যায়ে ৫০ লাখ টাকার বেশি চালানের ফাইল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জরিমানা কিংবা মওকুফের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

শুল্ক কর্মকর্তাদের ক্ষমতা বাড়ানোর ফলে কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে, এবার তা দেখা যাক। এখন চীন বা ভারত থেকে অল্প অল্প পরিমাণে নানা ধরনের পণ্য আমদানি করে থাকেন ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা। তাঁদের পক্ষে পুরো একটি কনটেইনার ভাড়া করে মালামাল আনা সম্ভব হয় না। ১৫-২০ জন ছোট ব্যবসায়ী মিলে একটি কনটেইনার ভাড়া করে মালামাল আনেন। এসব চালানে একেক জনের মালামালের আমদানি মূল্য ১০-২০ লাখ টাকার বেশি নয়। দেশে এখন এ ধরনের আমদানিকারকের সংখ্যা বেড়েছে। এসব চালানে যদি মিথ্যা ঘোষণা বা অন্য কোনো অনিয়ম ধরা পড়ে, তাহলে তা রাজস্ব কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার বা উপকমিশনারই মীমাংসা করতে পারবেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে যেতে হবে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলালউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, কোনো সমস্যা হলে এখন আর ফাইল নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে যেতে হবে না। একটি পয়েন্টেই সমস্যার সমাধান হবে। কিন্তু এখানে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সততার বিষয়টি জড়িত। ওই কর্মকর্তা যদি সৎ থাকেন, তাহলে কোনো সমস্যা হবে না।

শুল্কায়নের জন্য সমুদ্র এলাকা দ্বিগুণ করা হয়েছে। আগে সমুদ্র তীরবর্তী এলাকা থেকে ১২ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত পণ্যের চালানের শুল্কায়ন থেকে শুরু করে শুল্ক গোয়েন্দারা অভিযানসহ যাবতীয় শুল্ক কার্যক্রম চালাতে পারতেন। এ সীমা বাড়িয়ে এখন ২৪ নটিক্যাল মাইল করা হয়েছে। এতে শুল্কায়নের জলসীমা দ্বিগুণ হয়ে গেল। এতে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরের এলাকাও বেড়ে গেল।