সব করদাতাকে কর কার্ড দেওয়ার প্রস্তাব

উৎসাহ দিতে সব করদাতার নামে ট্যাক্স বা কর কার্ড চালুর প্রস্তাব করেছে ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে গঠিত গবেষণা সংস্থা বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড)। সংস্থাটি বলছে, এই কার্ড করদাতাদের জন্য স্বীকৃতি হিসেবেও বিবেচিত হতে পারে।

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) গত মঙ্গলবার প্রাক-বাজেট আলোচনায় এই প্রস্তাব দেন বিল্ডের চেয়ারপারসন ও ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান। সভায় এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনীম সভাপতিত্ব করেন।

বিল্ডের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়। এতে বলা হয়েছে, আগামী ২০২১–২২ অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়নের জন্য বেশ কিছু প্রস্তাব তুলে ধরেছে বিল্ড। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—একক ব্যক্তির কোম্পানির করপোরেট করে ২৫ শতাংশ মূল্যছাড়; সব খাতের রপ্তানিকারককে বন্ডেড ওয়্যার হাউস সুবিধা প্রদান; আগামী তিন বছর গবেষণা, আবিষ্কার, দক্ষতা উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণের জন্য রাজস্ব আয়ের ১ শতাংশ পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করা ইত্যাদি।

বিল্ডের চেয়ারপারসন আবুল কাসেম খান বলেন, বর্তমানে দেশে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ করের অনুপাত ৩৫:৬৫, যা ভোক্তা ও উৎপাদনশীল খাতের স্বার্থ বিবেচনায় উল্টো হওয়া উচিত। করপোরেট কর সাড়ে ৩২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩০ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে বিল্ড। সংস্থাটি বলছে, করপোরেট কর কমানো হলেও পুনর্বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও অতিরিক্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য আরও ১ শতাংশ কর ছাড়ের প্রস্তাব দিয়েছে বিল্ড।

অর্থনীতি ও বেসরকারি খাতের সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আগামী অর্থবছরের বাজেটের জন্য আয়কর, মূসক ও কাস্টমস শুল্কসংক্রান্ত বেশ কিছু সুপারিশ করেছে বিল্ড। এর মধ্যে কমপ্লায়েন্স ও প্রশাসনিক ব্যয় কমিয়ে আনা; প্রক্রিয়াগত সততা নিশ্চিত করা এবং অসামঞ্জস্য ও বৈষম্য পরিহার; স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ ও করদাতাদের মধ্যে আস্থা স্থাপন; তথ্যপ্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি; ইলেকট্রনিক পেমেন্ট সুবিধা চালু, করদাতাকে গ্রাহক হিসেবে বিবেচনা করা ইত্যাদি।

বিল্ড বলেছে, বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বাড়লেও কর-জিডিপি অনুপাত ৯-১০ শতাংশের মধ্যে স্থবির হয়ে আছে, যা দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বনিম্ন। এই মুহূর্তে কর-জিডিপি অনুপাত বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। করের অনুপাত কম হওয়ার বড় কারণ বিশাল আকৃতির অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতি। দুর্নীতি ও দুর্নীতির চ্যালেঞ্জগুলো ইতিমধ্যে শনাক্ত করা হয়েছে। জনগণ কর প্রদানে অনিচ্ছুক হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে, তারা নিশ্চিত নন, দেশের সম্পদ যথাযথভাবে ব্যবহৃত হবে কি না। অথচ উন্নত ও কিছু উন্নয়নশীল দেশের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন।

ট্যাক্স কার্ডের বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, করদাতাদের স্বীকৃতি দিতে ট্যাক্স কার্ডের বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে এনবিআরকে অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করে তালিকা প্রস্তুত করতে হবে। তবে নিশ্চিত করতে হবে, কেউ যেন এই সুবিধার অপব্যবহার না করতে পারে।

কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য প্রণোদনা প্রদান প্রসঙ্গে আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনীম বলেন, এটি অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। তবে তা আনুপাতিক হারে হতে হবে।