সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরে লাগাম

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালছবি: সংগৃহীত

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর বন্ধ ও কম গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

আজ বুধবার সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভার পর অনলাইনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা জানান অর্থমন্ত্রী।

সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছেন, এখন থেকে বিদেশ সফর আর নয়। যদি বিশেষ কারণে কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরে যতে হয়, তাহলেই যাবেন। অন্যথায় নয়। সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর কমানো হচ্ছে। কমানো হবে।’

আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘যেসব উন্নয়ন প্রকল্প ছয় মাস পর করলেও আমাদের সমস্যা বা ক্ষতি হবে না, সামষ্টিক অর্থনীতি ও মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না, সেগুলো পিছিয়ে দেওয়া হবে। তবে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাতিল হবে না।’

দামি গাড়ি ও নিত্যব্যবহার্য ইলেকট্রনিক পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব পণ্য আমদানির ঋণপত্র খোলার সময় এখন ৭৫ শতাংশ অর্থ অগ্রিম জমা দিতে হবে। এ ছাড়া শিশুখাদ্য, খাদ্যপণ্য, জ্বালানি, ওষুধ, কৃষি ও রপ্তানিমুখী শিল্প ছাড়া সব আমদানিতে ৫০ শতাংশ অর্থ আগে দিতে হবে। আগে ২৫ শতাংশ অর্থ জমা দিয়েই এসব পণ্য আমদানি করা যেত।

বিলাসপণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করার বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, সময় যখন কঠিন, তখন সিদ্ধান্তও নিতে হয় কঠিন। সারা বিশ্বের পরিস্থিতি এখন একরকম না। আমাদের বিশ্বের সঙ্গে একীভূত হয়ে কাজ করতে হবে। বিশ্বের সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যত দিন বৈশ্বিক অস্থিতিশীলতা চূড়ান্তভাবে সুরাহা হচ্ছে না, তত দিন পর্যন্ত কঠিন কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে। কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার অর্থ এই নয় যে দেশের অর্থনীতির চাকা বন্ধ হয়ে যাবে; উন্নয়ন বন্ধ হয়ে যাবে; আমাদের স্বাভাবিক অবস্থায় ঘাটতি আসবে—সে রকম কিছু নয়।’ তিনি বলেন, স্বাভাবিকভাবে আমরা বিলাসপণ্য দুই মাস পর কিনতে পারি। তিন-ছয় মাস পরও কিনতে পারি। বর্তমান পরিস্থিতির কারণে বিলাসী পণ্য কিছুদিনের জন্য নয়। নিত্যপণ্যে কোনো হাত দেব না।

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক শেষে গতকাল মঙ্গলবার পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম জানান, ২০২১-২২ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় বেড়ে ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলারে উঠবে। আর মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে। এই তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর জিডিপির হিসাব নিয়ে দেশের অর্থনীতিবিদদের অনেকেই সংশয় প্রকাশ করেন।

এ বিষয়ে এক সাংবাদিক অর্থমন্ত্রীকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘আমরা অতীতে যেভাবে জিডিপির হিসাবটি করি সেভাবেই করেছি। এখানে নতুন কোনো পদ্ধতি যুক্ত করি নাই। আমরা ঠিক আছি। সব সময় সব কাজে সন্দেহ প্রকাশ করার দরকার নাই। তাহলেই আমাদের জবাব পেয়ে যাবেন। আন্তর্জাতিক মহলে এসব বিষয়ে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। তারাও কেউ তো কোনো আপত্তি করে নাই। তারা আমাদের সঙ্গে একমত।’ তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা নিজেরাই হিসাব করেন। চারদিকে তাকালেই বুঝতে পারবেন, দেশের অর্থনীতি কতটা শক্তিশালী।’

জিডিপির হিসাবের তথ্য–পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হবে কি না, সে বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের তথ্য সবার জন্য উন্মুক্ত।’

আরও পড়ুন