সুদানের ৬৫ কোটি টাকা ঋণের দায় নিল বাংলাদেশ

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে ৬ হাজার কোটি মার্কিন ডলার, অর্থাৎ ৫ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার সমান অর্থের দেনাদার আফ্রিকার দেশ সুদান। এই ঋণ শোধে দেশটির পাশে দাঁড়াতে আইএমএফ তার সব সদস্যকে আহ্বান জানালে কমবেশি সবাই তাতে সাড়া দেয়। বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশও সুদানকে সহযোগিতা করতে রাজি হয়।

আইএমএফের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশ গতকাল মঙ্গলবার সুদানকে ৬৫ কোটি টাকার সমান ‘ঋণ মওকুফ’ সুবিধা দিয়েছে।

আজ বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা গেছে, আইএমএফের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশ গতকাল মঙ্গলবার সুদানকে ৬৫ কোটি টাকার সমান ‘ঋণ মওকুফ’ সুবিধা দিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিটি অস্পষ্ট হওয়ায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রথম আলো। একজন কর্মকর্তা বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করে জানান, আইএমএফের সদস্য হিসেবে সব দেশেরই হিসাব রয়েছে সংস্থাটিতে। সুবিধা দিতে রাজি হওয়ায় এখন আইএমএফের কাছে সুদানের পুরো ঋণের মধ্যে ৬৫ কোটি টাকা পরিশোধের দায়িত্ব বাংলাদেশের ভাগে থাকবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সুদান অত্যধিক ঋণগ্রস্ত ও দরিদ্র রাষ্ট্র। সরকার আশা করে, এ অর্থায়ন দারিদ্র্য বিমোচনে সুদানের সংগ্রামকে আরও শক্তিশালী করবে।

সূত্রগুলো জানায়, বাংলাদেশ এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আইএমএফ থেকে একটি চিঠি পায়। চিঠির সূত্র ধরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সম্প্রতি একটি সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করা হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। অনুমোদিত হওয়ার পর সুদান এবং আইএমএফকে তা জানিয়ে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়।
৫৭ সদস্যের ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সদস্যভুক্ত দেশ সুদান। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সুদান অত্যধিক ঋণগ্রস্ত ও দরিদ্র রাষ্ট্র। সরকার আশা করে, এ অর্থায়ন দারিদ্র্য বিমোচনে সুদানের সংগ্রামকে আরও শক্তিশালী করবে।

সুদান একসময় ব্রিটিশ শাসনের আওতাভুক্ত ছিল। ১৯৫৬ সালের ১ জানুয়ারি একটি চুক্তির বলে সুদান স্বাধীনতা লাভ করে। আয়তনে আফ্রিকা মহাদেশে সবচেয়ে বড় ও বিশ্বে দশম দেশ সুদান।

সুদান একসময় ব্রিটিশ শাসনের আওতাভুক্ত ছিল। ১৯৫৬ সালের ১ জানুয়ারি একটি চুক্তির বলে সুদান স্বাধীনতা লাভ করে। আয়তনে আফ্রিকা মহাদেশে সবচেয়ে বড় ও বিশ্বে দশম দেশ সুদান। এর আয়তন ১৮ লাখ ৮৬ হাজার বর্গ কিলোমিটার। মিসর, ইথিওপিয়া, ইরিত্রিয়া, কেনিয়া, উগান্ডা, কঙ্গো, চাদ ও লিবিয়া হচ্ছে এর প্রতিবেশী।
বর্তমানে দেশটির প্রধান রপ্তানি পণ্য তেল। এ ছাড়া প্রাকৃতিক গ্যাস, সোনা, রুপা, জিপসাম, জিংক, লোহা, সিসা, ইউরেনিয়াম, কপার, গ্রানাইট, নিকেল, তামাসহ গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ দেশ সুদান।

গত বছর আইএমএফের উদ্যোগের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ৮ কোটি টাকার বেশি অর্থের সমান একই ধরনের সুবিধা দিয়েছিল আফ্রিকার আরেক দেশ সোমালিয়াকে।

উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, সুদানের জনসংখ্যা সাড়ে ৪ কোটি, যার ৭০ শতাংশ মুসলিম। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক নেই দেশটির। ১৯৯৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র সুদানকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করে। আল–কায়েদার ঘাঁটি রয়েছে সন্দেহে যুক্তরাষ্ট্র সুদানের রাজধানী খার্তুমে মিসাইল হামলাও চালায় তখন। সুদানি তেলের অন্যতম গ্রাহক চীন। স্বাভাবিকভাবেই দেশটির সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রয়েছে সুদানের।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে আজ আরও জানানো হয়, গত বছর আইএমএফের উদ্যোগের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ৮ কোটি টাকার বেশি অর্থের সমান একই ধরনের সুবিধা দিয়েছিল আফ্রিকার আরেক দেশ সোমালিয়াকে। সেটাও ছিল দারিদ্র্যমুক্তির লক্ষ্যে সোমালিয়াকে দেওয়া সুবিধা।