স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও শিল্প খাতে কালোটাকা সাদা নয় কেন

বাজেটে শেয়ারবাজার, জমি-ফ্ল্যাট ও ব্যাংকের মতো অনুৎপাদনশীল খাতে ঢালাওভাবে কেন কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদেরা। অবৈধভাবে উপার্জিত টাকা সাদা করার যদি সুযোগই দেওয়া হয়, সেটি স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও শিল্পের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে কেন নয় সেটিও জানতে চেয়েছেন তাঁরা। আজ সোমবার এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ আয়োজিত এক ভার্চ্যুয়াল সভায় বক্তারা আরও বলেন, ঢালাওভাবে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ করে দেওয়া নীতি ও সাম্যের পরিপন্থী। এই সুযোগ দীর্ঘ মেয়াদে হতে পারে না।

'জাতীয় বাজেট ২০২১-২২: পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য কী থাকছে' শিরোনামের ভার্চ্যুয়াল সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামালের সভাপতিত্বের সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আরেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, বিজিএমইএ'র পরিচালক আসিফ ইব্রাহীমসহ অন্যরা।

ঢালাওভাবে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার কঠোর সমালোচনা করে দেবপ্রিয় বলেন, সৎ করদাতার সঙ্গে এটি অন্যায় আচরণ। সংবিধানে সব নাগরিকের সমান অধিকারের কথা বলা থাকলেও সেটিও ভঙ্গ হচ্ছে। কালোটাকা সাদা করার সুযোগ অর্থনীতির নীতির পরিপন্থী, সাম্যের পরিপন্থী। তিনি বলেন, যে তিনটি খাতে কালোটাকা সুযোগ দেওয়া হয়েছে, সেখান থেকে নতুন কিছু উৎপাদন হয় না। অনুৎপাদনশীল খাতেই এটি বিনিয়োগ হচ্ছে। ৫০ বছরের বাংলাদেশে একটি শ্রেণির জন্য এই সুযোগ কিছুতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

নাসিম মঞ্জুর বলেন, ‘কালোটাকা সাদা করার সুযোগ পুরোপুরি অনৈতিক। আমরা যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করছি, আমরা ৩০ শতাংশ হারে কর দিচ্ছি। আর যাঁরা কালোটাকা সাদা করছেন, তাঁরা ১০ শতাংশ কর দিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছেন। সৎ করদাতাদের কাছে এটি একটি ভুল বার্তা যাচ্ছে। এর মাধ্যমে পরোক্ষভাবে আমাদের কর দিতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। কালোটাকা সাদা করার সুযোগ যদি দিতেই হয় সেটি হতে পারে শিল্প খাতে, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে।’

আসিফ ইব্রাহীম বলেন, কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দীর্ঘ মেয়াদে কোনো পরিকল্পনা হতে পারে না। রাজস্ব আদায়ের নাম করে এই অনৈতিক সুযোগ বেশি দিন দেওয়া ঠিক হবে না।

রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার মানে হলো করের অন্যায্যতা। করের ক্ষেত্রে ন্যায্যতা নিশ্চিত করার তাগিদ দেন তিনি।
আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট কেমন হওয়া উচিত সে প্রসঙ্গে দেবপ্রিয় বলেন, বাজেট হওয়া উচিত সম্প্রসারণমূলক। আসছে বাজেটে মানুষের ভোগ ব্যয় বাড়াতে হবে। ভোগ ব্যয় না বাড়লে পুষ্টিহীনতা বাড়বে। দারিদ্র্যের হার আরও বাড়বে। বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। বিনিয়োগ না বাড়লে কর্মসংস্থানও বাড়বে না। সরকারি ব্যয় বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে নেট রপ্তানি বাড়াতে হবে।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, করোনার সময়ে শিশুদের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। শিশুদের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আসছে বাজেটে শিশু বাজেট করার দাবি জানান তিনি। একই সঙ্গে সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর তাগিদ দেন মোস্তাফিজুর রহমান।

রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, দিনের পর দিন বছরের পর বছর বাংলাদেশে শিক্ষা খাত অবহেলিত রয়ে গেছে। মাধ্যমিকে (এমপিওভুক্ত নয়) হাজার হাজার শিক্ষক অন্য কাজে চলে যাচ্ছেন। তাঁদের এই পেশায় ধরে রাখতে আগামী বাজেটে কী থাকছে। চলতি বছরের জানুয়ারি–ফেব্রুয়ারি এই দুই মাসে কত সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে, তার তথ্য কেউ জানি না। শিক্ষা গবেষণায় বরাদ্দ পাওয়া যায় না বলেও অভিযোগ করেন তিনি। রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, করোনার সময়ে শিক্ষায় বৈষম্য প্রকট থেকে প্রকটতর হচ্ছে। শিশুশ্রম বাড়ছে। বাল্যবিবাহ বেড়ে যাচ্ছে।

শাহীন আনাম বলেন, বাজেটে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য যে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়, তা খুবই অপ্রতুল। কিন্তু সেই টাকাটাও কি সঠিকভাবে খরচ হচ্ছে কি না, তার নজরদারি হয় না। প্রান্তিক মানুষের জন্য বরাদ্দের টাকা নজরদারি করা উচিত। শাহীন আনাম বলেন, করোনায় শিশুরা মারাত্মক ঝুঁকিতে আছে। আসছে বাজেটে শিশুদের জন্য কী থাকছে সেটা দেখার বিষয়। করোনার কারণে মেয়েরা পিছিয়ে যাচ্ছে। বাল্যবিবাহ বাড়ছে। এসব সামনে রেখে বাজেট প্রণয়ন করা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।