৩০০০ সিসির বেশি আর না

উন্নয়ন প্রকল্পের টাকায় সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের গাড়িবিলাস থামাতে অতি উচ্চ ইঞ্জিন ক্ষমতার গাড়ি কেনা বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গাড়ি কেনাকাটায় লাগাম টানতে তিন হাজার সিসির বেশি ক্ষমতার গাড়ি কেনা বন্ধ করতে যাচ্ছে সরকার। সম্প্রতি সরকারের উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।

যেসব যুক্তিতে এসব গাড়ি কেনা বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম এসব গাড়ি ব্যবহারে অত্যধিক জ্বালানি লাগে। রক্ষণাবেক্ষণের খরচও বেশি। তা ছাড়া বাংলাদেশের বিদ্যমান রাস্তাও এসব গাড়ি চালানোর উপযোগী নয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সভাপতিত্বে গত ১৪ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত অর্পিত ক্রয় ও সরকারি পদ্ধতি, আর্থিক বিধিবিধান ও আর্থিক ক্ষমতা অর্পণসংক্রান্ত সভায় এসব গাড়ি কেনা বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়। ওই সভায় সব মন্ত্রণালয়ের সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।

সচিবপর্যায়ের বৈঠকের সিদ্ধান্তের বিষয়ে কথা হয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে। তাঁরা বলেছেন, বাংলাদেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো সাধারণত তিন হাজার সিসির বেশি ক্ষমতার গাড়ি কেনে। সরকারের অন্য দপ্তরে এ ধরনের গাড়ি কেনার হার খুব বেশি নয়। বর্তমানে সরকারি দপ্তরের গাড়ি সরবরাহ করে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল সংস্থার (বিএসইসি) আওতাধীন প্রগতি ইন্ডাস্ট্রি।

জানতে চাইলে বিআরটিএর পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) শীতাংশু শেখর বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, তিন হাজার সিসির ক্ষমতার বেশি গাড়ির আমদানি শুল্ক অনেক বেশি। তাই এত উচ্চক্ষমতার গাড়ি আমদানির প্রবণতা কম। যা আসে, তা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের ব্যবহারের জন্য।

অবশ্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, করোনায় সরকারের রাজস্ব আদায় কমে গেছে। তাই কৃচ্ছ্রসাধনের জন্য উচ্চক্ষমতার গাড়ি আমদানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে প্রকল্পের আওতায় তিন হাজার সিসির বেশি ক্ষমতার গাড়ি আমদানি বেড়ে গেছে।

গাড়ি আমদানিকারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশে আসা তিন হাজার সিসির বেশি ক্ষমতার গাড়ির মধ্যে রয়েছে ল্যান্ড ক্রুজার ও নিশান পেট্রল মডেলের। এসব গাড়ির গড় মূল্য চার কোটি টাকা। বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকাসহ উন্নয়ন-সহযোগীদের ঋণে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়, সেসব প্রকল্পের আওতায় এসব গাড়ি কেনা হয়। সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও এসব গাড়ি ব্যবহার করেন। এর বাইরে এলজিইডি, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরেও উচ্চক্ষমতার গাড়ি কেনার প্রবণতা রয়েছে।

তিন হাজার সিসির বেশি ক্ষমতার গাড়ি কেনা বন্ধের সিদ্ধান্তকে সঠিক বলে মত দিয়েছেন বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) সাবেক সভাপতি আবদুল হামিদ শরিফ। তিনি বলেন, এ ধরনের গাড়ি ব্যবহার হয় সাধারণত পাহাড়ি এলাকায়। সমতলে এসব গাড়ি ব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ, এসব গাড়ির জ্বালানি ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ অনেক বেশি এবং রাস্তার জন্যও উপযোগী নয়।

রেট শিডিউল বাড়াতে লাগবে অনুমোদন

এদিকে সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়েছে, এখন থেকে গণপূর্ত অধিদপ্তরের রেট শিডিউল বা কাজের মূল্যহার বাড়াতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগবে। এত দিন গণপূর্ত অধিদপ্তর নির্দিষ্ট সময় পরপর নিজেরাই নিজেদের মতো করে রেট শিডিউল বাড়িয়ে নিত। সভায় এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আবদুর রউফ তালুকদার বলেন, গণপূর্ত অধিদপ্তরের বারবার সরকারি কাজের রেট শিডিউল পরিবর্তনের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এতে প্রকল্পের খরচ বেড়ে যায়।

এসব বিবেচনায় গণপূর্ত অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কাজের মূল্যহার বাড়ানোর আগে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়। একই সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার রেট শিডিউল একই করার বিষয়ে সভায় সিদ্ধান্ত হয়। কীভাবে সরকারি সব সংস্থার রেট শিডিউল একই করা যায়, সে জন্য অর্থ বিভাগ কাজ করছে।

জানতে চাইলে গণপূর্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেহেতু এটা সরকারের সিদ্ধান্ত, আমাদের পরবর্তী রেট শিডিউল যখন বাড়াব, তখন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেব।’ তিনি বলেন, ‘সাধারণত চার বছর পরপর আমাদের রেট শিডিউল বাড়ানো হয়।’

সভায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব বলেন, বাংলাদেশে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে দফায় দফায় ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে। আবার প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে অনেক ক্ষেত্রেই সরকারের ক্রয়বিধিমালা অনুযায়ী সরাসরি ক্রয়পদ্ধতি এবং আর্থিক বিধিবিধান সঠিকভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে না। এই ধারা থেকে বেরিয়ে আসা জরুরি বলে মন্তব্য করেন তিনি।