পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ১৫ শতাংশ

জুলাইয়ে ৪৫৯ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আড়াই শতাংশ বেশি।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেশে দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, আবার নিত্যপ্রয়োজনীয় নয় এমন পণ্যের চাহিদা কমেছে। তারপরও বিদায়ী ২০২২–২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি ইতিবাচক ধারায় ছিল। এ বছর দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পণ্য রপ্তানির পাশাপাশি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসেও পণ্য রপ্তানি সেই ইতিবাচক ধারায় রয়েছে।

সদ্যসমাপ্ত জুলাই মাসে মোট ৪৫৯ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি আগের অর্থবছরের একই মাসের ৩৯৮ কোটি ডলারের তুলনায় ১৫ দশমিক ২৬ শতাংশ এবং মাসিক লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আড়াই শতাংশ বেশি।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) গতকাল বুধবার পণ্য রপ্তানির এই হালনাগাদ পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, গত জুলাইয়ে তৈরি পোশাকের পাশাপাশি প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়াবিহীন জুতা ও প্লাস্টিক পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে। অন্যদিকে হোম টেক্সটাইল, হিমায়িত খাদ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য এবং প্রকৌশল পণ্যের রপ্তানি কমেছে।

কারখানাগুলোতে ক্রয়াদেশ আগের মতোই কম। তবে জুলাই থেকে পোশাকের ক্রয়াদেশের অনুসন্ধান আসার হার কিছুটা বেড়েছে। সেসব ক্রয়াদেশ চূড়ান্ত হলেও পণ্য রপ্তানি হবে তিন-চার মাস পর।
মোহাম্মদ হাতেম, নির্বাহী সভাপতি, বিকেএমইএ

ইপিবির তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে মোট পণ্য রপ্তানির ৮৬ শতাংশই তৈরি পোশাক খাত থেকে এসেছে। এ মাসে ৩৯৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের জুলাইয়ের তুলনায় ১৭ শতাংশ বেশি।

জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, কারখানাগুলোতে ক্রয়াদেশ আগের মতোই কম। তবে জুলাই থেকে পোশাকের ক্রয়াদেশের অনুসন্ধান আসার হার কিছুটা বেড়েছে। সেসব ক্রয়াদেশ চূড়ান্ত হলেও পণ্য রপ্তানি হবে তিন-চার মাস পর। মূলত গত বছরের জুলাইয়ে কোরবানির ঈদের কারণে ১০ দিন কারখানা বন্ধ ছিল। সে কারণে গত মাসে রপ্তানি স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা বেশি হয়েছে।

বিদায়ী ২০২২–২৩ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি পৌনে ২ শতাংশ কমেছিল। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসেও সেই নেতিবাচক ধারা থেকে বেরোতে পারেনি খাতটি। জুলাইয়ে ৯ কোটি ৮৪ লাখ ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে ৭৫ লাখ ডলারের চামড়া, ৩ কোটি ডলারের চামড়াজাত পণ্য এবং ৬ কোটি ডলারের চামড়ার জুতা রপ্তানি হয়েছে। চামড়াজাত পণ্যে ২২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও জুতা ও চামড়া রপ্তানি কমেছে।

বিদায়ী অর্থবছরে হোম টেক্সটাইল তৃতীয় শীর্ষ রপ্তানি খাত ছিল। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে এই জায়গা দখল করেছে কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য। বিদায়ী অর্থবছর এই খাতের রপ্তানি সাড়ে ২৭ শতাংশ কমলেও জুলাইয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এ মাসে ৭ কোটি ২৬ লাখ ডলারের কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের জুলাইয়ের চেয়ে সাড়ে ১৪ শতাংশ বেশি।

এদিকে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরও হোম টেক্সটাইলের রপ্তানি ইতিবাচক ধারায় ফেরেনি। গত জুলাইয়ে ৫ কোটি ৬৮ লাখ ডলারের হোম টেক্সটাইল রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত বছরের জুলাইয়ের তুলনায় ৪০ দশমিক ৭৭ শতাংশ কম। এতে হোম টেক্সটাইল তৃতীয় শীর্ষ রপ্তানি খাত থেকে চতুর্থ অবস্থানে নেমে গেছে।

পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি গত দুই অর্থবছরই নেতিবাচক ধারায় ছিল। চলতি বছরের প্রথম মাসে খাতটি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। রপ্তানি হয়েছে ৬ কোটি ৫৬ লাখ ডলারের পণ্য, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে পৌনে ৩ শতাংশ বেশি।

ইপিবির তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে ২ কোটি ৯৪ লাখ ডলারের হিমায়িত খাদ্য রপ্তানি হয়েছে। তার মধ্যে হিমায়িত চিংড়ি ২ কোটি ডলারের। গত বছরের জুলাইয়ের তুলনায় পণ্যটির রপ্তানি ১৮ শতাংশ কমেছে। অর্থাৎ হিমায়িত খাদ্যের রপ্তানি নেতিবাচক ধারা থেকে বেরোতে পারেনি।

সরকার চলতি অর্থবছরের জন্য মোট ৬ হাজার ২০০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। ইপিবির তথ্যানুযায়ী, বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছে ৫ হাজার ৫৫৬ কোটি ডলারের পণ্য, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেশি। তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছিল ৪ হাজার ৬৯৯ কোটি ডলারের।