জুলাইয়ে ১৫৫ প্রকল্পে কোনো টাকা খরচ করা হয়নি

জুলাই মাসে আগের তিন বছরের তুলনায় কম টাকা খরচ হয়েছে। চলতি অর্থবছরে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকার এডিপি নেওয়া হয়।

  • পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে সব মন্ত্রণালয়কে নিজেদের প্রকল্পগুলো উচ্চ অগ্রাধিকার, মধ্যম অগ্রাধিকার ও কম অগ্রাধিকার—এমন শ্রেণিতে বিভাজন করে (ক, খ ও গ শ্রেণি) বাস্তবায়নের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে ব্যয় সাশ্রয়ী হওয়ার নানা উদ্যোগ নেয় সরকার। উন্নয়ন প্রকল্পও এর থেকে বাদ যায়নি। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্প বাস্তবায়ন, জরুরি না হলে বিদেশ সফর ও গাড়ি কেনা বন্ধ, আসবাব কেনায় আরও সাশ্রয়ী হওয়াসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে গত চার বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম খরচ হয়েছে।

গত জুলাই মাসে সব মিলিয়ে খরচ ২ হাজার ৪৫৫ কোটি টাকা। সাতটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এক টাকাও খরচ করেনি। ১৫৫টি প্রকল্পে কোনো খরচ হয়নি। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে। চলতি অর্থবছরে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকার এডিপি নেওয়া হয়।

এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতির কারণে খরচ সাশ্রয়ী হতে বহু প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি ধীর করা হয়েছে। এটি ঠিক। কিন্তু যখনই পরিস্থিতি একটু অনুকূলে আসবে, তখন যেন প্রকল্পগুলো দ্রুত কার্যকরভাবে বাস্তবায়নে নজর দেওয়া হয়। কারণ, প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের যোগসূত্র আছে। কর্মসংস্থানও জড়িত।

কেন সাশ্রয়ী হওয়ার পথে গেল সরকার। কোভিডের ধাক্কা সামলে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কয়েক মাস ধরেই আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বাড়তে থাকে। ফলে দেশের আমদানি খরচ বেড়ে যায়। আবার গত অর্থবছরে প্রবাসী আয়ও কমেছে। সরকারের আয় কমতে থাকে। ডলারের দাম বাড়তে থাকে। লেনদেনের ভারসাম্যে বড় ধরনের ঘাটতি হয়। এসব কারণে সরকার সব কর্মকাণ্ডে সাশ্রয়ী হওয়ার নীতি গ্রহণ করে। উন্নয়ন ব্যয়ের লাগাম টেনে ধরার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

আইএমইডি সূত্রে জানা গেছে, গত জুলাই মাসে মোট এডিপি বরাদ্দের দশমিক ৯৬ শতাংশ খরচ হয়। সাধারণত এডিপির আকার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে টাকার অঙ্কের খরচ বাড়ে। কিন্তু গত জুলাই মাসে আগের তিন বছরের জুলাই মাসের চেয়ে কম খরচ হয়েছে। জুলাই মাসে ২ হাজার ৪৫৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। আগের তিন বছরে জুলাই মাসে খরচ হয়েছিল যথাক্রমে ২ হাজার ৬৯৩ কোটি টাকা, ৩ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা ও ৩ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা।

১৫৫ প্রকল্পে টাকা খরচ হয়নি

চলতি অর্থবছরের এডিপিতে সব মিলিয়ে ১ হাজার ৪৯৬টি প্রকল্প আছে। ৫৬টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এর মধ্যে সাতটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ গত জুলাই মাসে টাকা খরচ করেনি। এগুলো হলো পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, ধর্ম মন্ত্রণালয়, জননিরাপত্তা বিভাগ, ভূমি মন্ত্রণালয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ১৫৫টি প্রকল্পে এ বছর প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ আছে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকার সব প্রকল্পে ব্যয় সাশ্রয় কিংবা ধীর গতি করতে চায় না। দেশীয় অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন আমদানিনির্ভর প্রকল্পে শ্লথগতি করতে চায়। আবার কিছু প্রকল্প এই মুহূর্তে তেমন জরুরি নয়, ওই সব প্রকল্পের গতি আপাতত কম থাকবে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আপাতত শ্লথগতিতে থাকবে এমন প্রকল্পের সংখ্যা এডিপির মোট প্রকল্পের প্রায় অর্ধেক। এই সংখ্যা ৭০০-এর বেশি।

ইতিমধ্যে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে সব মন্ত্রণালয়কে নিজেদের প্রকল্পগুলো উচ্চ অগ্রাধিকার, মধ্যম অগ্রাধিকার ও কম অগ্রাধিকার—এমন শ্রেণিতে বিভাজন করে (ক, খ ও গ শ্রেণি) বাস্তবায়নের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সে ক্ষেত্রে চলতি অর্থবছরে যেসব প্রকল্প শেষ হবে এবং বিদেশি সহায়তা আছে এমন প্রকল্প বাস্তবায়নে জোর দিতে বলা হয়েছে।