ডিমের দাম কমেছে আমদানির খবরে

ডিমফাইল ছবি: এএফপি

বাজারে ডিমের দাম কিছুটা কমেছে। দুই দিন আগে বিদেশ থেকে ডিম আমদানির অনুমতি দেয় অন্তর্বর্তী সরকার। পাশাপাশি সম্প্রতি বাড়ানো হয়েছে বাজার তদারকিও। এতে কমতে শুরু করেছে পণ্যটির দাম। মাত্র চার দিনের ব্যবধানে ডিমের দাম প্রতি ডজনে ২০–৩০ টাকা কমেছে।

গতকাল বুধবার রাজধানীর শেওড়াপাড়া, মগবাজার ও মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট এবং বিভিন্ন পাড়া–মহল্লায় ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা পর্যায়ে ফার্মের মুরগির এক ডজন ডিম বিক্রি হয়েছে ১৬০–১৭০ টাকায়। কারওয়ান বাজারে তা ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়। আর পাইকারিতে ডিমের ডজন ছিল ১৪০ টাকা ৪০ পয়সা। যদিও চার–পাঁচ দিন আগে খুচরা পর্যায়ে এক ডজন ডিম কিনতে ১৮০–১৯০ টাকা লাগত। ডিমের পাশাপাশি ব্রয়লার মুরগির দামও চড়া। গতকাল প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৯০–২০০ টাকায়।

ঢাকাকেন্দ্রিক একটি চক্র ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। তারাই ইচ্ছেমতো দাম বাড়ায়। এতে ক্ষুদ্র খামারিরা সঠিক দাম পান না। আর ক্রেতারাও বেশি দামে ডিম কেনেন।
বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার

নিম্ন ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের প্রাণিজ আমিষের অন্যতম উৎস ডিম ও ব্রয়লার মুরগি। কিন্তু উচ্চ দামের কারণে ডিম–মুরগি কিনতেও মানুষ হিমশিম খাচ্ছেন। দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে। আমদানিতে শুল্ক কমানোর সুপারিশও এসেছে। সঙ্গে বাড়ানো হয়েছে বাজার তদারকি।

তবে খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সরকারের এসব পদক্ষেপে ডিমের দাম কিছুটা কমলেও তা হবে সাময়িক। ডিমের দাম ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে হলে ডিমের উৎপাদন খরচ কমানো ও সিন্ডিকেটকারীদের (অসাধু জোট) বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।

যদিও চার–পাঁচ দিন আগে খুচরা পর্যায়ে এক ডজন ডিম কিনতে ১৮০–১৯০ টাকা লাগত। ডিমের পাশাপাশি ব্রয়লার মুরগির দামও চড়া। গতকাল প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৯০–২০০ টাকায়।

দুই বছর ধরে দাম চড়া

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে দেখা গেছে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর আগে ডিমের দাম বছরজুড়ে ডজন ৮০ থেকে ১১০ টাকার মধ্যে ছিল। যুদ্ধ শুরুর ছয় মাসের মাথায় ডিমের দাম বেড়ে ১২৫–১৩৫ টাকা হয়, যা গত বছরের শেষ নাগাদ ১৫০–১৬৫ টাকায় পৌঁছায়। এরপর অনেকটা কাছাকাছি দামেই ডিম বিক্রি হয়ে আসছিল। যদিও সম্প্রতি এই দাম ১৮০ টাকা ছাড়িয়ে যায়।

ডিম উৎপাদক প্রতিষ্ঠান ও ছোট খামারিরা জানান, দেশের বিভিন্ন জেলায় সাম্প্রতিক বন্যার কারণে পোলট্রি শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ডিমের সরবরাহ কমেছে। এর প্রভাব পড়েছে দামে। তবে ডিম উৎপাদনে পরিপূরক অন্যান্য খাদ্যপণ্যের উচ্চ দামকে ডিমের মূল্যবৃদ্ধির প্রধান কারণ বলে জানান তাঁরা। বাংলাদেশ এগ প্রোডিউসারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তাহের আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে ডিম উৎপাদনের পরিপূরক খাদ্যপণ্যের দাম কয়েক গুণ বেড়েছে। ডিম উৎপাদন খরচ না কমলে ডিমের দামও কমবে না।

নিম্ন ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের প্রাণিজ আমিষের অন্যতম উৎস ডিম ও ব্রয়লার মুরগি। কিন্তু উচ্চ দামের কারণে ডিম–মুরগি কিনতেও মানুষ হিমশিম খাচ্ছেন। দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে। আমদানিতে শুল্ক কমানোর সুপারিশও এসেছে। সঙ্গে বাড়ানো হয়েছে বাজার তদারকি।

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মুরগির ডিম উৎপাদন খরচের ৮০–৮৫ শতাংশ যায় পোলট্রি খাদ্যের দামের পেছনে। রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের পর বেড়ে যাওয়া পোলট্রি খাদ্যের দাম এখন কমেছে। তবে কমেনি ডিমের দাম। যদিও খাদ্য উৎপাদনকারীরা বলছেন, মার্কিন ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে খাদ্যের দাম কমনো সম্ভব হচ্ছে না।

এদিকে কিছু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করেও ডিমের দাম বাড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ অনেক খামারির। প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, ঢাকাকেন্দ্রিক একটি চক্র ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। তারাই ইচ্ছেমতো দাম বাড়ায়। এতে ক্ষুদ্র খামারিরা সঠিক দাম পান না। আর ক্রেতারাও বেশি দামে ডিম কেনেন।

বেশি দামের কারণে পছন্দের মাছ–মাংস কিনে খেতে পারি না। এ জন্য নিয়মিত ডিম–মুরগিই কেনা লাগে। কিন্তু এ পণ্য দুটি কিনতেও হিমশিম খেতে হয় আমাদের।
মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী জহিরুল ইসলাম

কী উদ্যোগ নিয়েছে সরকার

সরকারের জন্য অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ এখন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা। গত সেপ্টেম্বরে দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ। এ অবস্থায় বাজার নিয়ন্ত্রণে ইতিমধ্যে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। যেমন ১৬ সেপ্টেম্বর ফার্মের মুরগির ডিম এবং ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম নির্ধারণ করে দেয় কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। বেঁধে দেওয়া দাম অনুসারে, খুচরা পর্যায়ে প্রতি ডজন ডিমের দাম হওয়ার কথা ১৪২ টাকা। তবে গতকালও বাজারে ১৫০–১৭০ টাকা দরে ডিম বিক্রি হয়েছে।

বাজারে সরবরাহ–ঘাটতি মেটাতে সাতটি প্রতিষ্ঠানকে সাড়ে চার কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার এ অনুমতি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এর আগে গত মাসেও এক দফায় ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছিল সরকার। তবে বাজারে এর কোনো প্রভাব দেখা যায়নি। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাবে, দেশে প্রতিদিন পাঁচ কোটি ডিমের চাহিদা রয়েছে।

অন্যদিকে বর্তমান ডিম আমদানিতে ৩৩ শতাংশ শুল্ক-কর রয়েছে। ডিমের সরবরাহ বৃদ্ধি ও বাজারদর স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে এই শুল্ক–কর সাময়িকভাবে প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে ট্যারিফ কমিশন।

এ ছাড়া ডিমসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার পরিস্থিতি তদারকের জন্য সোমবার বিশেষ টাস্কফোর্স গঠনের ঘোষণা দেয় সরকার। দেশের সব জেলা পর্যায়ে এ টাস্কফোর্স আলাদাভাবে কাজ করবে। এ ছাড়া ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরও নিয়মিত বাজারে অভিযান পরিচালনা করছে।

তবে অভিযান কোনো সমাধান নয় উল্লেখ করে তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আমানত উল্লাহ বলেন, অভিযান ও জরিমানার ভয়ে ডিমের দাম কমিয়েছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। এভাবে বেশি দিন দাম কমিয়ে রাখা যাবে না। ভয়ে অনেকে ডিম বিক্রি কমিয়ে দিয়েছেন। এতে আবার বাজারে সরবরাহ কমেছে।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা ও একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘বেশি দামের কারণে পছন্দের মাছ–মাংস কিনে খেতে পারি না। এ জন্য নিয়মিত ডিম–মুরগিই কেনা লাগে। কিন্তু এ পণ্য দুটি কিনতেও হিমশিম খেতে হয় আমাদের।’