যেসব দেশ ও অঞ্চলের আনুষ্ঠানিক মুদ্রা মার্কিন ডলার

ডলার
ছবি: সংগৃহীত

বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে শক্তিশালী ও সর্বাধিক প্রচলিত মুদ্রা হচ্ছে মার্কিন ডলার। ১৭৮৫ সালে প্রথম এটির প্রচলন শুরু হয়। তবে ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে মার্কিন ডলার নিজস্ব সীমানা পেরিয়ে শক্তিশালী হতে শুরু করে। আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বব্যাপী এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুদ্রায় পরিণত হয়।

যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া আটটি স্বাধীন দেশ মার্কিন ডলারকে সরকারি বা আনুষ্ঠানিক মুদ্রা হিসেবে ব্যবহার করে। এর মধ্যে কোনো কোনো দেশ বিপদে পড়ে মার্কিন ডলার গ্রহণ করেছে। আবার কোনো কোনো দেশ নিজস্ব অর্থনীতির পরিধি বাড়াতে মার্কিন ডলার বেছে নিয়েছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত পাঁচটি, যুক্তরাজ্য নিয়ন্ত্রিত দুটি ও নেদারল্যান্ডস নিয়ন্ত্রিত একটি অঞ্চলে মার্কিন ডলারকে নিজস্ব মুদ্রা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। 

নিয়ন্ত্রিত আট অঞ্চলে ডলার

ক্যারিবীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত পাঁচটি দ্বীপে মার্কিন ডলারকে সরকারি মুদ্রা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এগুলো হলো ক্যারিবীয় দ্বীপ পুয়ের্তো রিকো ও ইউএস ভার্জিন আইল্যান্ড এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ আমেরিকান সামোয়া, গুয়াম ও নর্দার্ন মারিয়ানা আইল্যান্ড। 

এসব দ্বীপ মূলত সরাসরি যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত ভূখণ্ড। এ কারণে দ্বীপগুলোর সরকারি মুদ্রাও মার্কিন ডলার। অঞ্চলগুলো যুক্তরাষ্ট্রের আইন ও আর্থিক পদ্ধতি অনুসরণ করে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে ডলার মুদ্রণ ও সরবরাহ করে থাকে।

এ ছাড়া যুক্তরাজ্য নিয়ন্ত্রিত দুটি অঞ্চল ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড ও তুর্কস অ্যান্ড কাইকোস এবং নেদারল্যান্ডস নিয়ন্ত্রিত বোনেয়ারের মুদ্রা হিসেবে মার্কিন ডলার ব্যবহৃত হয়। এসব ভূখণ্ডে পণ্য, পরিষেবা, কর ও ঋণের জন্যও মার্কিন ডলারে লেনদেনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। 

স্বাধীন দেশে ডলার 

স্বাধীন দেশগুলোর মধ্যে আফ্রিকার দেশ জিম্বাবুয়েতে মূল্যস্ফীতি একসময় সব সীমা ছাড়িয়ে যায়। তখন দেশটির মুদ্রার নাম ছিল জিম্বাবুয়েন ডলার। বলা হয়, জিম্বাবুয়ের নাগরিকেরা সাধারণ বাজারের জন্যও ব্যাগ ভর্তি করে অর্থ নিয়ে যেতেন। দেশটির স্থবির অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে ২০০৯ সালে জিম্বাবুয়েন ডলার বিলুপ্ত করে মার্কিন ডলারকে সরকারি মুদ্রা হিসেবে ঘোষণা করেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবে। 

পরবর্তী সময়ে ২০১৫ সালের দিকে আবার জিম্বাবুয়েন ডলারকে সরকারি মুদ্রা করা হয় দেশটিতে। কিন্তু মূল্যস্ফীতির চাপে থাকায় পুনরায় ২০১৯ সাল থেকে মার্কিন ডলারে ফিরে যায় জিম্বাবুয়ে। বর্তমানে দেশটির ৭০ শতাংশের বেশি লেনদেন সংঘটিত হয় মার্কিন ডলারে। দেশটি সাধারণত ট্রেড মানে বাণিজ্যের মাধ্যমে মার্কিন ডলার সংগ্রহ করে। তবে প্রয়োজন হলে নিজেরা মার্কিন ডলারের নিজস্ব ভার্সনের মুদ্রা ছাপায় দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক। 

লাতিন আমেরিকার দেশ ইকুয়েডর ২০০০ সালের দিকে সরকারি মুদ্রা হিসেবে মার্কিন ডলারকে গ্রহণ করে। ওই সময় দেশটির আর্থিক অবস্থা একেবারে শোচনীয় অবস্থায় চলে যায়। তখন ব্যাংকগুলোর দেউলিয়া হওয়াসহ মুদ্রার অবমূল্যায়ন ও সরকারের রাজস্ব ঘাটতি মোকাবিলায় মার্কিন ডলারকে সরকারি মুদ্রা হিসেবে গ্রহণ করে দেশটি। পণ্য বাণিজ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইকুয়েডরের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। সে অনুযায়ী দেশটিতে ডলারের বড় জোগান আসে।

মধ্য আমেরিকার দেশ এল সালভাদরের গল্পটা আবার ভিন্ন রকম। দেশটি ২০০১ সালে মার্কিন ডলারকে পুরোপুরি সরকারি মুদ্রা হিসেবে ঘোষণা করে। মজার বিষয় হলো, তখন দেশটিতে মূল্যস্ফীতি ছিল অনেক কম, অর্থনীতি ছিল ক্রমবর্ধমান, ব্যাংকিং ব্যবস্থা ছিল মজবুত এবং সরকারি ও বিদেশি ঋণও ছিল সীমার মধ্যে। কিন্তু দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিল রেখে বিদেশি বিনিয়োগ ও বাণিজ্য আরও বাড়াতে ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। 

১৯০৩ সালে কলম্বিয়ার কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে মধ্য আমেরিকার দেশ পানামা। তখন থেকেই নিজস্ব মুদ্রা পানামানিয়ান বালবোয়ারের পাশাপাশি মার্কিন ডলারের ব্যবহারও শুরু করে দেশটি। তবে দীর্ঘ সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ থাকায় দেশটিতে মার্কিন ডলারের ব্যবহার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়, যা আজও রয়ে গেছে। 

জাতিসংঘের অন্তর্বর্তী প্রশাসন ২০০০ সালের জানুয়ারি মাসে পূর্ব তিমুরের সরকারি মুদ্রা হিসেবে মার্কিন ডলারকে গ্রহণ করে। ২০০২ সালে দেশটি স্বাধীন হওয়ার পরেও এই ব্যবস্থা বজায় রাখা হয়। মূলত একটি শক্তিশালী, স্থিতিশীল ও সারা বিশ্বে ব্যাপকভাবে স্বীকৃত মুদ্রা বলেই ডলারকে বেছে নিয়েছে দেশটি।

প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশ মাইক্রোনেশিয়া ১৯৭৯ সালে মার্কিন ডলারকে মুদ্রা হিসেবে গ্রহণ করে। পর্যটনের জন্য বিখ্যাত এই দেশটিতে ডলারই একমাত্র স্বীকৃত মুদ্রা। বর্তমানে দেশটির পণ্য, পরিষেবা, কর ও ঋণ ইত্যাদি সব আর্থিক খাতেই মার্কিন ডলার ব্যবহৃত হয়। 

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কমপ্যাক্ট অব ফ্রি অ্যাসোসিয়েশনের অংশ হিসেবে ১৯৯৪ সালে পালাউ একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রে পরিণত হয়। তখন পর্যন্ত দেশটিতে অন্য কোনো সরকারি মুদ্রা ছিল না। ফলে ওই বছরের অক্টোবর থেকে পালাউতে সরকারি মুদ্রা হিসেবে মার্কিন ডলার ব্যবহার হয়ে আসছে। একই পদ্ধতিতে মার্শাল আইল্যান্ডও ১৯৮৬ সাল থেকে মার্কিন ডলারকে নিজস্ব মুদ্রা হিসেবে ব্যবহার করছে। 

সূত্র: আইএমএফ, বিবিসি, ব্লুমবার্গ, এনপিআর, আইরিশ টাইমস, ট্রাভেলেক্স ও মনিটো।