অচল হয়ে যেতে পারে শ্রীলঙ্কা: কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নর

কয়েক ঘণ্টা চেষ্টার পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ঢুকতে পেরে বিক্ষোভকারীদের উচ্ছ্বাস। কলম্বো, শ্রীলঙ্কা
ছবি: রয়টার্স

শ্রীলঙ্কার অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। দেশটিতে এখন কার্যত কোনো সরকার নেই। এই বাস্তবতায় দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর নন্দলাল বিক্রমাসিংহের সতর্কবাণী, দেশে স্থিতিশীল সরকার না আসলে পুরো শ্রীলঙ্কা বন্ধ বা শাটডাউন হয়ে যেতে পারে।

তবে এই মুহূর্তে শ্রীলঙ্কা বড় ধরনের অনিশ্চয়তার মুখে আছে। বৈদেশিক মুদ্রার সংকট থাকায় পেট্রোলের মতো অত্যাবশ্যকীয় পণ্য কেনা সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে। আবার আইএমএফের কাছ থেকে বেইল আউট চাচ্ছে দেশটি। কিন্তু দেশে শক্তিশালী সরকার না থাকলে সেই আলোচনাও কতটা আলোর মুখ দেখবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে। খবর বিবিসির

অর্থনৈতিক সংকটে কারণে গণবিক্ষোভের মুখে শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। এরপর ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিয়েছেন রনিল বিক্রমাসিংহে। তিনি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কারফিউ জারি করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার বার অর্পণ করেছেন সেনাবাহিনীর হাতে। তবে শ্রীলঙ্কার অনেক মানুষ মনে করেন, বর্তমান এই সংকটে রনিল বিক্রমাসিংহেরও হাত আছে। ফলে অনেকে আবার তাঁর পদত্যাগ দাবি করছেন।

শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি কার্যত ধসে পড়েছে। খাবার, জ্বালানিসহ অন্যান্য মৌলিক দ্রব্যাদির দাম আকাশ ছুঁয়েছে।

নন্দলাল বিক্রমাসিংহেও চলতি বছরের এপ্রিল মাসে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। বিবিসিকে তিনি বলেন, স্থিতিশীল সরকার ছাড়া কীভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করা যাবে, তার কোনো পথ দেখছেন না তিনি। তিনি বলেন, ‘আমরা তিন জাহাজ ডিজেলের অর্থায়ন করেছি, সামনে হয়তো আরও দুই-এক জাহাজের অর্থায়ন আমরা করতে পারব। কিন্তু এরপর আমাদের পক্ষে আর কিছু করা সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। আর সেটা যদি আমরা করতে না পারি, তাহলে পুরো দেশ অচল হয়ে পড়বে। মোদ্দা কথা হলো, পুরো দেশ বন্ধ হয়ে যাবে। সে জন্য আমাদের একজন প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভা প্রয়োজন, যাঁরা সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন...তা না হলে মানুষ ভুগবে’।

আকাশছোঁয়া দ্রব্যমূল্য

বেহাল অর্থনৈতিক পরিস্থিতির চাপে নুয়ে-পড়া শ্রীলঙ্কায় আলুর দাম প্রতি কেজি ৪৩০ শ্রীলঙ্কার রুপি। এই বিপুল পরিমাণ দাম দিয়েই নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যশস্য এবং সবজি কিনে খেতে হচ্ছে সে দেশের মানুষকে। আগের দামের তুলনায় বর্তমান দামে আকাশ-পাতাল তফাত।

২০১৯-এর নভেম্বরে বিভিন্ন পণ্যের যে দাম ছিল, মাত্র আড়াই বছরের ব্যবধানে তা হয়েছে আকাশছোঁয়া। তবে সব থেকে বেড়েছে ডালের দাম, প্রায় ৪১৭ শতাংশ। আগে শ্রীলঙ্কার মুদ্রায় প্রতি কেজি ডালের দাম ছিল ১২০ রুপি। এখন তা বেড়ে হয়েছে ৬২০ রুপি। আগে আলুর দাম ছিল ২৪০ রুপি, এখন তা ৭৯ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৪৩০ রুপি। ব্যাপক হারে বেড়েছে নিত্যব্যবহার্য চিনির দামও। এক ধাক্কায় ১০০ রুপি থেকে বেড়ে ৩৪০ রুপি প্রতি কেজি। চালের দাম বেড়েছে ১৪৪ শতাংশ-৯০ থেকে বেড়ে ২২০ রুপি। এ ছাড়া উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে মাছ, কাঁচালঙ্কা, নারকেল তেল, নারিকেলসহ একাধিক পণ্যের দাম। তবে আগের তুলনায় দাম কমেছে লাল পেঁয়াজের।

প্রসঙ্গত অর্থনৈতিক সংকটের সঙ্গে লড়াই করছে শ্রীলঙ্কার মানুষ। তা নিয়ে সে দেশের বাসিন্দাদের মধ্যে রোষের আগুন ধিক ধিক করে জ্বলছিল। সম্প্রতি তা বেড়ে দাবানলের আকার নিয়েছে। জনগণের বিক্ষোভের সামনে নতিস্বীকার করে ইতিমধ্যেই দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে। দেশ ছাড়ার পর ই–মেইল করে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন তিনি।