ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা সাড়ে ৪ লাখ টাকা চায় এফবিসিসিআই

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পরামর্শক কমিটির ৪৪তম সভায় অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীসহ অতিথিরা। এনবিআর ও বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই) আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার একটি হোটেলে এই সভার আয়োজন করেছবি: প্রথম আলো

আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা এক লাখ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই)।

বর্তমানে সাধারণভাবে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা হচ্ছে সাড়ে তিন লাখ টাকা, যা জ্যেষ্ঠ নাগরিক ও নারীদের জন্য চার লাখ টাকা। এফবিসিসিআই তা বাড়িয়ে সাধারণভাবে সাড়ে চার লাখ টাকা এবং জ্যেষ্ঠ নাগরিক ও নারীদের জন্য পাঁচ লাখ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে। মূল্যস্ফীতি এবং স্বল্প আয়ের মানুষের প্রকৃত আয় কমে যাওয়ার বিষয় বিবেচনা করে ব্যবসায়ী–শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠনটি এমন প্রস্তাব দেয়।

আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পরামর্শক কমিটির ৪৪তম সভায় এফবিসিসিআই এই প্রস্তাব পেশ করে। এনবিআর ও এফবিসিসিআই যৌথভাবে সভাটির আয়োজন করে। এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান ছিলেন বিশেষ অতিথি। এফবিসিসিআিইয়ের সভাপতি মাহবুবুল আলম সভায় ১২ পৃষ্ঠার একটি লিখিত বক্তব্য দেন।

অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী সভায় ব্যবসায়ীদের উপস্থাপিত কোনো দাবি নিয়েই কোনো কথা বলেননি। বাজেটের দর্শন নিয়েও তেমন কিছু বলেননি তিনি। অন্য যেকোনো অনুষ্ঠান শেষে অর্থমন্ত্রী সাধারণত যা বলে থাকেন, আজও সে রকমই বললেন। আর সেটি হচ্ছে, ‘দেখা যাক কী করি, কতটুকু করতে পারি।’

অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান রপ্তানি বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, ‘এটি বাড়াতে হবে। নইলে ডলার আসবে কোথা থেকে?’ তিনি কর ন্যায়পাল নিয়োগের বিষয়টি ভেবে দেখবেন বলে উল্লেখ করেন।

মোট প্রায় আড়াই ঘণ্টার অনুষ্ঠানে ৪০ মিনিটের মতো কথা বলেন আয়কর, মূল্য সংযোজন কর (মূসক) ও শুল্ক- এনবিআরের এই তিন বিভাগের তিন সদস্য। ব্যবসাবান্ধব করার স্বার্থে এনবিআর গত বছর যেসব নীতি পদক্ষেপ নিয়েছে, তারা পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে সেগুলো তুলে ধরে।

এর পক্ষে যুক্তি দিয়ে এনবিআরের চেয়ারম্যান বলেন, ‘অনেকেই বলেন যে আমরা কিছু করি না। আমরা যে কিছু করি, তা দেখানোর জন্য এ আয়োজনটা ছিল।’

চ্যালেঞ্জ ও অগ্রাধিকার
এফবিসিসিআই বলেছে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও বাজার তদারকি; বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ের প্রবাহ বৃদ্ধি এবং রপ্তানি সম্প্রসারণ, বহুমুখীকরণ, নতুন বাজার সংযোজন, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও উৎপাদনশীলতা বাড়ানো; সুদের হার স্থিতিশীল রাখাসহ আর্থিক ও ব্যাংক খাতের সংস্কার; বাণিজ্য সহজীকরণ কার্যক্রম জোরদার; কর-জিডিপির অনুপাত বৃদ্ধি; রাজস্বনীতির সংস্কার, মুদ্রা ও রাজস্বনীতির মধ্যে সমন্বয়; সর্বস্তরে সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সর্বোপরি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাই জাতীয় অর্থনীতিতে এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ।

এসবের পরিপ্রেক্ষিতে এফবিসিসিআই কিছু অগ্রাধিকারের কথা বলেছে। এগুলো হচ্ছে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতাসক্ষমতা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান দৃঢ় করতে ব্যবসায়ের খরচ (কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস) কমিয়ে আনা, বিনিয়োগ সুরক্ষা, বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি, সুষম বিনিয়োগ সহায়ক মুদ্রা ও শুল্ক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণ এবং শিপিং খরচসহ সব ধরনের পরিবহন খরচ কমানো। এ ছাড়া বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের স্থায়ী পরিকাঠামো উন্নয়নে স্বচ্ছতা ও সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। কর আদায়ের ক্ষেত্রে হয়রানি ও জটিলতা দূর করা প্রয়োজন। এ ছাড়া ব্যবসাবান্ধব কর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে আগামী বাজেটে বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার বলে সংগঠনটি মনে করে।

এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘বর্তমানে জাতীয় অর্থনীতি একটি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়ালেও করোনার পরে দীর্ঘ মেয়াদে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। চলমান রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ এবং মধ্যপ্রাচ্য সংকটের মধ্যেও স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণ ঘটছে বাংলাদেশের। এত সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার মাধ্যমেই আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতিধারাকে এগিয়ে নিতে হচ্ছে। এ জন্য দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যসহায়ক পরিবেশকে আরও সুদৃঢ় ও জোরদার করা জরুরি হয়ে পড়েছে। কারণ, অর্থনীতি সঠিক গতিতে চললেই সরকার কাঙ্ক্ষিত হারে রাজস্ব আহরণ করতে পারবে।

মাহবুবুল আলম বলেন, দেশে বর্তমানে প্রায় এক কোটি টিআইএনধারী আছেন। এর মধ্যে আনুমানিক ৩৫ লাখ আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন। যাঁদের আয় করমুক্ত সীমার ওপরে আছে তাঁদের আয়কর রিটার্ন দাখিলের আওতায় আনা দরকার। বিনিয়োগ বাড়াতে এবং প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে সুদের হার স্থিতিশীল রাখতে হবে। বৈদেশিক অর্থায়নে এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। অপ্রয়োজনীয় ও অনুৎপাদনশীল প্রকল্প গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে। এ ছাড়া অর্থ পাচার বা মানি লন্ডারিং রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির প্রয়োজন।