প্রতিদিন গড়ে ১৫৮৮ কোটি টাকার শুল্ক–কর আদায় করতে হবে

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কার্যালয়
ফাইল ছবি

চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) শুল্ক-কর আদায়ের চিত্র মোটেও সন্তোষজনক নয়। এই সময়ে প্রতিদিন গড়ে মাত্র ৮২৩ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে। ফলে কর বিভাগকে বাকি তিন মাসে দ্বিগুণ গতিতে শুল্ক-কর আদায় করতে হবে।

শুল্ক-কর আদায়ের চিত্র বলছে, লক্ষ্য পূরণ করতে হলে এপ্রিল থেকে জুন এই তিন মাসে এনবিআরকে প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ৫৮৮ কোটি টাকার শুল্ক-কর আদায় করতে হবে। বাজেটে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার কর আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে এনবিআরকে। এই বিশাল লক্ষ্য অর্জনে আদায়ের গতি বেশ বাড়াতে হবে শুল্ক-কর কর্মকর্তাদের। বছরের শেষ প্রান্তিকে সব মিলিয়ে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা আদায় করতে হবে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম শর্ত হলো রাজস্ব আদায় বাড়াতে হবে। সে জন্য আগামী অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের স্বাভাবিক প্রবণতার বাইরে জিডিপির অতিরিক্ত দশমিক ৫ শতাংশ বেশি রাজস্ব আদায় করতে হবে।

কিন্তু এখন পর্যন্ত বাস্তব চিত্র ভিন্ন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি বরং খারাপ হচ্ছে। বিশেষ করে শুল্ক ও আয়কর খাতে লক্ষ্য অনুযায়ী রাজস্ব আদায় হচ্ছে না। মার্চ মাসে আগের বছরের তুলনায় আদায় কমে গেছে। বছরের প্রথম ৯ মাসে সার্বিকভাবে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি থাকলেও তা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র এক-তৃতীয়াংশ।

শুল্ক ও আয়করে কম

রাজস্ব আদায় পরিস্থিতির একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। যেমন, গত মার্চ মাসে শুল্ক ও আয়কর খাতে আগের বছরের মার্চ মাসের তুলনায় আদায় কমেছে। এ দুই খাতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

গত মার্চ মাসে আমদানি পর্যায়ে আমদানি শুল্ক আদায় হয়েছে ৮ হাজার ১৮২ কোটি টাকা, যা আগের বছরের মার্চ মাসের তুলনায় ১১৪ কোটি টাকা কম। এ বছরের মার্চ মাসে আয়করসহ প্রত্যক্ষ কর আদায় হয়েছে ১০ হাজার ৭৮৯ কোটি টাকা, যা আগের বছরের মার্চ মাসের চেয়ে ২৬৩ কোটি টাকা কম।

কোভিডের সময় ২০২০ সাল ছাড়া যা গত এক দশকের মধ্যে এমন ঘটনা ঘটেনি। কোভিডের পর অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথে হাঁটছে বিভিন্ন দেশ। তবে বাংলাদেশের চিত্র ভিন্ন। রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি তাই বলে। অথচ বছরের শেষ কয়েক মাসে রাজস্ব আদায়ে গতি থাকে। এবার সেই অবস্থা নেই।

গত মার্চ মাসে আমদানি শুল্ক ও আয়কর কমে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে সার্বিক রাজস্ব আদায়ে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) সময়ে সব মিলিয়ে শুল্ক-কর আদায় হয়েছে ২ লাখ ২৫ হাজার ৫১৩ কোটি টাকা। এই সময়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ। অথচ চলতি অর্থবছরের এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অর্জনে সাড়ে ২৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে।

বড় লক্ষ্য আসছে

এনবিআরের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ‘মার্চ মাসের মতো এপ্রিল মাসেও রাজস্ব আদায় পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি। ভ্যাট ছাড়া আয়কর ও আমদানি শুল্ক খাতে তেমন প্রবৃদ্ধি নেই। বছর শেষে ৩০-৪০ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি হবে।’

দেশে সাধারণত অর্থবছরের শেষের দুই বা তিন মাসে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি পায় এবং বছর শেষে প্রবৃদ্ধি দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছায়। তবে এনবিআরের এই কর্মকর্তা মনে করেন, রাজস্ব আদায়ের বর্তমান যে গতি, তাতে করে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি শেষ পর্যন্ত এক অঙ্কের ঘরেই আটকে থাকতে পারে।  

এমন অবস্থায় আগামী অর্থবছরের এনবিআরকে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্য দেওয়া হচ্ছে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান রাজস্ব প্রশাসন দিয়ে এত বড় লক্ষ্য অর্জন করা যাবে না। এনবিআরকে অটোমেশনে যেতেই হবে। যেখানে করদাতা ও করগ্রহীতার মধ্যে কোনো দেখাদেখি হবে না। তাঁর মতে, এমন অবস্থায় রাজস্ব আহরণ হলে বছর শেষে কমপক্ষে ৪০ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি হতে পারে।

৯ মাসে বড় ঘাটতি

চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) সময়ে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি হয়েছে ২৯ হাজার কোটি টাকা। এই সময়ে এনবিআরের লক্ষ্য ছিল ২ লাখ ৫৪ হাজার ৫১৭ কোটি টাকা আদায়। তবে এনবিআর আদায় করতে পেরেছে ২ লাখ ২৫ হাজার ৫১৩ কোটি টাকা।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ৯ মাসে সবচেয়ে বেশি আদায় হয়েছে সম্পূরক শুল্ক বা ভ্যাট। এর পরিমাণ মোট ৮৬ হাজার ৯০৫ কোটি টাকা। দ্বিতীয় স্থানে থাকা আয়কর আদায় হয়েছে ৭১ হাজার ২২৭ কোটি টাকা। আর আমদানি পর্যায়ে আমদানি শুল্কসহ অন্যান্য কর আদায়ের পরিমাণ ৬৭ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা।

শুধু ভ্যাটেই প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ শতাংশের বেশি। অন্য দিনে আয়করে প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ এবং আমদানি শুল্কে ৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ।