ঈদের আগে লাগামছাড়া মাংসের বাজার

পবিত্র ঈদুল ফিতরের ঠিক আগে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে উঠেছে মাংসের বাজার। রোজার শেষ সপ্তাহে আবার বেড়েছে সব ধরনের মাংসের দাম। ব্রয়লার মুরগির কেজি আড়াই শ টাকায় উঠেছে। সোনালি মুরগির দাম ছাড়িয়েছে কেজি ৩৫০ টাকা। আর বাজারে গরুর মাংস আবারও ৮০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। খাসির মাংসও কোথাও কোথাও বিক্রি হচ্ছে আগের চেয়ে বেশি দামে।

ক্রেতা ও বিক্রেতারা বলছেন, ঈদ উৎসবের সময় মাংসের চাহিদা বেড়ে যায়, বেশি বাড়ে মুরগির চাহিদা। এই বাড়তি চাহিদাকে পুঁজি করে মাংসের দাম দফায় দফায় বাড়ানো হচ্ছে। গত তিন দিনে বাজারে প্রতিদিনই কোনো না কোনো মাংসের দাম বেড়েছে।

গতকাল শনিবার রাজধানীর পলাশী বাজার, নিউমার্কেট কাঁচাবাজার, কাঁঠালবাগান বাজার ও কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২৪০-২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। অনেকটা একই হারে বেড়েছে সোনালি মুরগির দাম। প্রতি কেজি সোনালি মুরগির দাম এখন ৩৫০ থেকে ৩৬০ টাকা। এসব বাজারের বিক্রেতাদের দাবি, চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় খামারিরা মুরগির দাম বাড়িয়েছেন।

তবে দাম বাড়ার জন্য খামারিরা দায়ী করছেন উৎপাদন খরচ বৃদ্ধিকে। প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, মুরগির বাচ্চার বাজারে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। খাবার আর ওষুধের দামও বাড়তি। ফলে ঈদের আগে মুরগির দাম যে বাড়বে, তা আগে থেকেই বোঝা যাচ্ছিল। উৎপাদন খরচ বেশি হলেও এসব দিকে নজর দেওয়ার কেউ নেই।

ঈদের আগে মাংসের দাম বাড়ায় ক্রেতারা স্বভাবতই ক্ষুব্ধ। নিউমার্কেট কাঁচাবাজারে ক্রেতা মাহমুদ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঈদের মতো উৎসব এলে দাম বাড়ানো ব্যবসায়ীদের পুরোনো অভ্যাস। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৫০ টাকা বেশি দিয়ে মুরগি কিনলাম। সমস্যা হলো, এটা দেখার কেউ নেই।’

মুরগির সঙ্গে বেড়েছে গরুর মাংসের দামও। বাজারে গরুর মাংস আবারও ৮০০ টাকা কেজি বিক্রি হতে দেখা গেছে। শবে বরাতের সময় গরুর মাংস এই দামে বিক্রি হয়েছিল। গতকাল কোনো কোনো বাজারে অবশ্য গরুর মাংস ৭৫০ টাকা, কোথাও ৭৮০ টাকায়ও বিক্রি হয়েছে। খাসির মাংস সাধারণত ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হলেও গতকাল বিক্রেতাদের কেউ কেউ এই মাংসের দাম ১ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত চেয়েছেন।

পলাশী বাজারের মাংস বিক্রেতা তপন মুনশি প্রথম আলোকে জানান, গরু ও খাসির দাম বাড়ায় তিনি মাংসের দাম বাড়িয়েছেন। তিনি গরুর মাংস বিক্রি করেছেন ৮০০ টাকা কেজি। একই কথা জানালেন কাঁঠালবাগান বাজারের বিক্রেতা ভাষান খান। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, আশপাশের তিন দোকানে সকাল থেকে মোট ছয়টি গরু বিক্রি হয়েছে। একদাম ৮০০ টাকা কেজি। তবে কারওয়ান বাজারের অনেক বিক্রেতা গরুর মাংস বিক্রি করেছেন ৭৫০ টাকা কেজি।

বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মুর্তজা প্রথম আলোকে বলেন, অধিকাংশ জায়গায় গরুর মাংস ৭৫০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। তবে কেউ কেউ ৮০০ টাকায়ও বিক্রি করছেন।

ঈদের সময় দাম বাড়ানো ব্যবসায়ীদের পুরোনো অভ্যাস। সমস্যা হলো, এটা দেখার কেউ নেই।
ক্রেতা মাহমুদ হাসান

ঈদের আগে মাংসের দাম বাড়ায় ক্রেতারা স্বভাবতই ক্ষুব্ধ। নিউমার্কেট কাঁচাবাজারে ক্রেতা মাহমুদ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঈদের মতো উৎসব এলে দাম বাড়ানো ব্যবসায়ীদের পুরোনো অভ্যাস। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৫০ টাকা বেশি দিয়ে মুরগি কিনলাম। সমস্যা হলো, এটা দেখার কেউ নেই।’