দাম বাড়ছে আমদানিনির্ভর পণ্যের

এক মাসে নতুন করে ডাল, চিনি, আটা, ময়দা ও ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে।

দেশে ডলার-সংকট চলমান রয়েছে। যেসব নিত্যপণ্য আমদানি করতে হয়, সেগুলোর ঋণপত্র খুলতে অনেক ব্যবসায়ী নির্ধারিত দামে ডলার কিনতে পারছেন না। দিতে হচ্ছে বাড়তি দাম। এর প্রভাব পড়ছে নিত্যপণ্যের বাজারে। ডলারের বাজারে অস্থিরতায় গত এক মাসে নতুন করে ডাল, চিনি, আটা, ময়দা ও ভোজ্যতেলের মতো আমদানি করা পণ্যের দাম বেড়েছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিশ্ববাজারে নিত্যপণ্যের দাম মোটামুটি কমে এসেছে। কিন্তু ডলারের বাড়তি দামের কারণে খুচরা বাজারে বেড়েছে আমদানি করা নিত্যপণ্যের দাম।

রাজধানীর মালিবাগ, মগবাজার, রামপুরা, নিউমার্কেট কাঁচাবাজার ও কারওয়ান বাজারে গরুর মাংস এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৫০-৬০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৭২০ থেকে ৭৫০ টাকায়।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, গত এক মাসে আমদানি করা নিত্যপণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে পেঁয়াজের। বৃদ্ধির হার কেজিতে ৩০ শতাংশ। এরপর রয়েছে চিনি। দেশে চিনির চাহিদার প্রায় পুরোটাই আমদানি করে মেটানো হয়। খুচরা বাজারে চিনির দাম কেজিতে বেড়েছে ১১ শতাংশ। এ ছাড়া খোলা আটা ৮ শতাংশ, খোলা ময়দা ৯ শতাংশ, মাঝারি দানার মসুর ডাল ২ শতাংশ ও খোলা সয়াবিন তেলের দর প্রায় ২ শতাংশ হারে বেড়েছে।

বিশ্ব খাদ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, সেপ্টেম্বরের তুলনায় অক্টোবরে বিশ্বে খাদ্য মূল্যসূচক কিছুটা কমেছে। সেপ্টেম্বরে সার্বিক খাদ্য মূল্যসূচক ছিল ১২১ দশমিক ৩, অক্টোবরে এসে যা দাঁড়িয়েছে ১২০ দশমিক ৬-এ। চিনির মূল্যসূচক ৩ দশমিক ৫ পয়েন্ট কমে ১৫৯ দশমিক ২-এ নেমে এসেছে। ভোজ্যতেলের সূচক ১২০ দশমিক শূন্য ৯ থেকে কমে হয়েছে ১২০। আর গম-ভুট্টার মতো শস্যদানার মূল্যসূচক ১২৬ দশমিক ৩ থেকে কমে ১২৫-এ নেমেছে।

আরও পড়ুন

ভোগ্যপণ্য বিপণনকারী শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি টি কে গ্রুপের পরিচালক মো. শফিউল আতহার প্রথম আলোকে বলেন, আমদানি দায় পরিশোধের জন্য ডলার সংগ্রহ করতে এখন নানা জটিলতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ভোগ্যপণ্য আমদানি স্বাভাবিক রাখতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিলেও তার বাস্তবায়ন দেখা যাচ্ছে না। ডলারের দাম বেশি হওয়ার ফলে পণ্যের দামে তা সমন্বয় করতে হচ্ছে।

বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহের ওপর নির্ভর করে ঋণপত্র খোলা হচ্ছে। আমদানি করার পর দায় মেটানো না গেলে ব্যাংকের জন্য সমস্যা হবে। তাই পরিস্থিতি বুঝে ঋণপত্র খোলা হচ্ছে। তবে অতিপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি ঠিক রাখার চেষ্টা আছে।
রাষ্ট্রমালিকানাধীন জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুল জব্বার

ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এক মাস ধরে ডলারের বাজারে নতুন করে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। খোলাবাজারে এ সময় ডলারের দাম ১২৪ থেকে ১২৬ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল, এক মাস আগে যে দাম ছিল ১১৪ থেকে ১১৫ টাকার মধ্যে। গত কয়েক দিনে ডলারের দাম খানিকটা কমে এলেও পণ্য আমদানিতে প্রতি ডলারে দাম দিতে হচ্ছে ১১৯ থেকে ১২০ টাকা। যদিও আমদানিতে ডলারের আনুষ্ঠানিক দর ১১১ টাকা।

রাষ্ট্রমালিকানাধীন জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুল জব্বার প্রথম আলোকে বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহের ওপর নির্ভর করে ঋণপত্র খোলা হচ্ছে। আমদানি করার পর দায় মেটানো না গেলে ব্যাংকের জন্য সমস্যা হবে। তাই পরিস্থিতি বুঝে ঋণপত্র খোলা হচ্ছে। তবে অতিপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি ঠিক রাখার চেষ্টা আছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, গত অক্টোবরে দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ, যা গত ১১ বছর ৯ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। গত তিন মাস ধরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২ শতাংশের ওপর রয়েছে। অক্টোবরে সার্বিক মূল্যস্ফীতিও কিছুটা বেড়ে ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ হয়েছে।

মূল্যস্ফীতি বেশি থাকলে ব্যবসায়ীদের মধ্যে অতি মুনাফার প্রবণতা দেখা যায় উল্লেখ করে সাবেক বাণিজ্যসচিব ও কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান প্রথম আলোকে বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সাহসী মুদ্রানীতি প্রয়োজন। কিন্তু নির্বাচনের আগে শক্ত মুদ্রানীতি আসার সম্ভাবনা কম। তবে আমদানি করা পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির পেছনে ডলার বাজারের অস্থিরতাই বড় কারণ বলে মনে করেন তিনি।

গরুর উৎপাদন ভালো। এ ছাড়া মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমার ফলে চাহিদাও কমেছে। সব মিলিয়ে ছয় মাস আগের তুলনায় মাংসের দাম কোথাও কোথাও ২৫ শতাংশের মতো কমেছে।
বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মোর্তুজা

কমছে গরুর মাংসের দাম

বাজারে গরুর মাংসের চাহিদা কমে গেছে। ফলে গরুর মাংসের দাম বাজারভেদে ৫০ থেকে ১৮০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। রাজধানীর মালিবাগ, মগবাজার, রামপুরা, নিউমার্কেট কাঁচাবাজার ও কারওয়ান বাজারে গরুর মাংস এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৫০-৬০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৭২০ থেকে ৭৫০ টাকায়। তবে শনির আখড়া, রায়েরবাগ, মুজাহিদনগর, মেরাজনগর, জুরাইন, লালবাগ, হাজারীবাগ ও কাপ্তান বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম দুই মাসের ব্যবধানে ১৫০-১৮০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায়।

বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মোর্তুজা প্রথম আলোকে বলেন, গরুর উৎপাদন ভালো। এ ছাড়া মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমার ফলে চাহিদাও কমেছে। সব মিলিয়ে ছয় মাস আগের তুলনায় মাংসের দাম কোথাও কোথাও ২৫ শতাংশের মতো কমেছে।