স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দে ৫১টি নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৪৮তম

বাজেটপ্রতীকী ছবি

গত ১০ বছরে বিশ্বের ৫১টি নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে বাজেটের তুলনায় স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান ৪৮তম। ভুটান তাদের মোট জাতীয় বাজেটের ৮ দশমিক ০৫ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দেয়। তবে বাংলাদেশে এই আনুপাতিক বরাদ্দ ৩ দশমিক ৩২ শতাংশ। এমনই তথ্য উঠে এসেছে উন্নয়ন সমন্বয়ের ‘শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে জাতীয় বাজেট’ শীর্ষক আলোচনা সভায়।

আজ বুধবার বিকেলে রাজধানীর বাংলামোটরে উন্নয়ন সমন্বয় কার্যালয়ের খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ কনফারেন্স কক্ষে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভাটি সঞ্চালনা করেন উন্নয়ন সমন্বয়ের জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহযোগী মাহবুব হাসান। এ সময় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন উন্নয়ন সমন্বয়ের গবেষণা পরিচালক আবদুল্লাহ নাদভী। আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্য ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ হালিদা হানুম আখতার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কাজী ফারুক হোসেন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কামরুল হাসান।

জাতীয় বাজেট সামনে রেখে তিন পর্বের এই সংলাপের দ্বিতীয় পর্বের বিষয় ‘শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে জাতীয় বাজেট’ শীর্ষক আলোচনা সভার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আবদুল্লাহ নাদভী। তিনি বলেন, যে দেশগুলো স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশ হয়েছে, তারা এই উত্তরণের আগের বছরগুলোতে গড়ে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে যথাক্রমে জাতীয় বাজেটের ১৬ শতাংশ ও ৯ শতাংশ বরাদ্দ দিয়েছে। অথচ বাংলাদেশের ২০২৬-এ উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার কথা থাকলেও এখানে এই দুই খাতে গড়ে জাতীয় বাজেটের ১২ শতাংশ ও ৩ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ফলে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ছাড়াই বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় নামতে হবে।

আবদুল্লাহ নাদভী আরও বলেন, গত ১০ বছরে বাজেটে শিক্ষা খাতের বরাদ্দ মরক্কো, ঘানা ও ক্যামেরুনের মতো ২৬টি নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ২২তম। বাংলাদেশে এই খাতে বরাদ্দের পরিমাণ বাজেটের ১১ দশমিক ৯৪ শতাংশ। তিনি আরও বলেন, চলতি অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১১ দশমিক ৯ শতাংশ। তবে এই খাতের সঙ্গে প্রযুক্তি খাতে বরাদ্দসহ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৯ শতাংশ।

অনুষ্ঠানে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ হালিদা হানুম আখতার বলেন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বাজেটের যে বিনিয়োগ করা হয়, তার সুফল পেতে সময় লাগে। দেশে এত কিছু নিয়ে সংস্কার কমিশন গঠিত হলেও শিক্ষা নিয়ে কোনো সংস্কার কমিশন নেই। এটি বেশ দুঃখের ব্যাপার। আমাদের দেশের কাঠামোগত পরিবর্তন করতে হলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা ঠিক করতে হবে এবং জবাবদিহির মধ্যে আনতে হবে।

সভায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ফারুক হোসেন বলেন, আমাদের দেশে শিক্ষা একটি বাজারপণ্যের মতো হয়ে গেছে। বর্তমানে গ্রামে কোনো শিক্ষক পড়াতে চান না। কারণ, দেশে একজন প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকের বেতন ১২ হাজার টাকা। বাজেট বরাদ্দ দিলে হবে না, প্রয়োজন তার সঠিক বাস্তবায়ন।

আলোচনা সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কামরুল হাসান বলেন, আমাদের তরুণ প্রজন্মকে উন্নত করতে হলে আমাদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য দুটিরই মানোন্নয়ন প্রয়োজন। তবে দেশে এই দুই খাতই মারাত্মকভাবে অবহেলিত।

এ সময় তিনি আরও বলেন, মেধাবীদের পড়ালেখার পেছনে যে খরচ হয় তা দেশের কৃষকসহ সব ধরনের মানুষের করের টাকা। তাই আমরা এই মেধাবী শিক্ষার্থীদের ধরে রাখতে পারছি না। যা জাতীয় সম্পদের অপচয়।