রিহ্যাবের নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শেষ, এখন ফলাফলের অপেক্ষা

রিহ্যাবের ভোটগ্রহণ শেষে ভোট গণনা চলছেছবি: প্রথম আলো

বড় কোনো অঘটন ছাড়াই আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) দুই বছর মেয়াদি পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ বিকেল চারটায় শেষ হয়েছে। ৪৭৬ ভোটারের মধ্যে প্রায় ৮৬ শতাংশ বা ৪০৯ জন নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।

রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে কয়েক স্তরের নিরাপত্তার মধ্যে আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়। শুরুতে ভোটকক্ষে ভোটারদের ব্যালট দেওয়ার স্থানে নিজেদের প্রতিনিধি বা এজেন্ট রাখা নিয়ে কিছুটা জটিলতা হয়। একটি প্যানেলের নেতারা এজেন্ট রাখার বিষয়ে বিরোধিতা করেন। অন্য তিন প্যানেলের প্রার্থীরা এজেন্ট দেওয়ার দাবি জানান। একপর্যায়ে নির্বাচন বোর্ড এজেন্ট রাখার অনুমতি দিলে জটিলতার অবসান হয়। এতে করে মিনিট দশেক ভোট গ্রহণে কিছুটা ব্যাঘাত হয় বলে জানান একাধিক প্রার্থী।

সকাল সাড়ে দশটায় ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ভোটকেন্দ্র বা কেআইবির মূল ফটকের বাইরে বিভিন্ন প্যানেলের পক্ষে কয়েক শ কর্মী প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। ভেতরে শুধু প্রার্থী ও ভোটারদের প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে। নিচতলা থেকে পরিচয়পত্র নিয়ে সাততলায় গিয়ে ভোট দিচ্ছেন ভোটাররা। অবশ্য দুপুর ১২টার দিকে দেখা যায়, ভোটকেন্দ্রের নিচতলায় বিভিন্ন প্যানেলের ব্যাজ পরে বেশ কয়েকজন তরুণ প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, প্রথম ১ ঘণ্টায় ১৩১ ও পরের ১ ঘণ্টায় ৬১টি ভোট পড়ে। তারপর ভোটারদের উপস্থিতি কিছুটা কম ছিল। দুপুরের পর ভোটারের উপস্থিতি আবার বাড়তে থাকে। শেষ পর্যন্ত ৪০৯ ভোটার ভোট দেন।

এবারের নির্বাচনে চারটি প্যানেলে অংশ নিয়েছেন প্রার্থীরা। প্যানেলগুলো হচ্ছে জাপান গার্ডেন সিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. ওয়াহিদুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন ‘আবাসন ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদ’, সেঞ্চুরি রিয়েলটির চেয়ারম্যান এম জি আর নাসির মজুমদারের নেতৃত্বে ‘ডেভেলপারস ফোরাম’, বিশ্বাস বিল্ডার্সের এমডি নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে ‘নবজাগরণ’ এবং হামিদ রিয়েল এস্টেট কনস্ট্রাকশনের এমডি ইন্তেখাবুল হামিদের নেতৃত্ব ‘জয় ধারা’ প্যানেল।

রিহ্যাবের পরিচালনা পর্ষদের ২৯টি পদের মধ্যে ঢাকায় ২৬টির বিপরীতে ৮৬ জন প্রার্থী হয়েছেন। আর চট্টগ্রামের ৩টি পরিচালক পদের বিপরীতে আছেন ৭ জন। জয় ধারা ও আবাসন ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদ সব কটি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।

ডেভেলপারস ফোরাম ও নবজাগরণ প্যানেল যথাক্রমে ১০ ও ১৯ জন প্রার্থী দিয়েছে; চট্টগ্রাম অঞ্চলে তাদের কোনো প্রার্থী নেই।

বেলা পৌনে ১১টার একটু আগে নিজেদের প্যানেলের প্রার্থীদের নিয়ে একসঙ্গে ভোট দেন জয় ধারার নেতা ইন্তেখাবুল হামিদ। ভোট দেওয়ার পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সুষ্ঠু ও সুন্দর ভোট হচ্ছে। এভাবে ভোট হলে ভালো ফলাফল আসবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।

অন্যদিকে আবাসন ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের নেতা মো. ওয়াহিদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হচ্ছে। অনেক দিন রিহ্যাবে ভোট হয় না। ভোটের প্রথম এক ঘণ্টায় যে পরিবেশ ছিল, সেটা বজায় থাকলে যাঁরাই জয়ী হোক, আমরা মেনে নেব।’

নবজাগরণের নেতা নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, রিহ্যাবের নির্বাচন মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। অনেক দিন পর নির্বাচন হচ্ছে। অনেকেই ভোট দিতে আসছেন। প্রশাসন শক্ত অবস্থানে থাকলে ভোট সুষ্ঠু হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বেলা ১১টার দিকে ডেভেলপারস ফোরামের নেতা এম জি আর নাসির মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, সুন্দর পরিবেশে ভোট হচ্ছে। তবে শেষ পর্যন্ত এমন পরিবেশ থাকবে কি না, সে বিষয়ে কিছুটা শঙ্কাও প্রকাশ করেন তিনি।

রিহ্যাবে একসময় উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হতো। ২০১৪ সালে ভোট ছাড়াই সভাপতি পদে আসেন আলমগীর শামসুল আলামিন। পরের তিন মেয়াদেও সমঝোতার ভিত্তিতে কমিটি হয়েছে এই সংগঠনে। ফলে ১০ বছর পর ভোট হওয়ায় সাধারণ সদস্যদের মধ্যে এই নির্বাচন ঘিরে বেশ আগ্রহের সৃষ্টি হয়।

বরিশাল থেকে ভোট দিতে এসেছিলেন বাকলা ডেভেলপারসের স্বত্বাধিকারী আবদুল আজিজ হাওলাদার। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ভোট দিয়ে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনেক দিন পর রিহ্যাবের নেতা নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সুযোগ পেয়েছি। সে জন্যই বরিশাল থেকে এসেছি।’ তিনি আরও বলেন, যেকোনো সংগঠনে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নেতৃত্বের নির্বাচন হলে সেটি সামনের দিকে এগিয়ে যায়। আর কেবল ভোটের মাধ্যমেই সংগঠনের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা সম্ভব।

রিহ্যাবের এই নির্বাচন গত সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। সেই নির্বাচনের কমিশন গঠন এবং ভোটার তালিকায় অনিয়ম নিয়ে মামলা-পাল্টা মামলার ঘটনাও ঘটে। একপর্যায়ে নির্বাচন স্থগিত হয়। অবশেষে উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত হয় সংগঠনের সব ব্যাংক হিসাব। একই সঙ্গে নভেম্বরের শেষ দিকে রিহ্যাবের তৎকালীন কমিটির বর্ধিত মেয়াদ স্থগিত করে প্রশাসক বসায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তারপর নতুন করে নির্বাচন কমিশন গঠন ও তফসিল ঘোষণা হয়। নির্বাচনপ্রক্রিয়ার একপর্যায়ে প্রভাবশালী একটি পক্ষ সমঝোতার মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচনের চেষ্টা করে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য সেটি ভেস্তে যায়।

জানতে চাইলে রিহ্যাবের নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান সুব্রত কুমার দে বেলা ১১টার পর প্রথম আলোকে বলেন, ভোট স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু হবে। নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য আছেন। সিসি ক্যামেরার আওতায় আছে পুরো ভোটকেন্দ্র। ভোটকেন্দ্রের নিচে বড় পর্দায় ভোটকক্ষের চিত্র সরাসরি দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফলে ভোট নিয়ে শঙ্কার কোনো কারণ নেই।