অবশেষে ট্রানজিট নীতি হচ্ছে 

বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে সমন্বিত ট্রানজিট পলিসি প্রণয়নের বৈঠক হচ্ছে।

সীমান্ত পাড়ি দিচ্ছে ভারতের একটি পণ্যবাহী ট্রাক
ফাইল ছবি

প্রতিবেশী এক দেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে (ট্রানজিট) তৃতীয় কোনো দেশের সঙ্গে পণ্য আমদানি-রপ্তানি করতে চায় বাংলাদেশ। একই ধরনের সুবিধা বাংলাদেশ অন্য দেশগুলোকে দিতেও চায়। শুধু দক্ষিণ এশিয়া নয়, পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো পর্যন্ত ট্রানজিট ও আন্তযোগাযোগ বিস্তৃত করা সরকারের লক্ষ্য। সরকারের দিক থেকে মনে করা হচ্ছে রেল, সড়ক ও নৌ—এ তিন পথেই প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে এ যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব এবং এতে সব দেশই লাভবান হবে।

এমন উদ্দেশ্য মাথায় রেখে প্রথমবারের মতো দেশে সমন্বিত ট্রানজিট পলিসি বা নীতি করতে যাচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আজ মঙ্গলবার বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষের সভাপতিত্বে সচিবালয়ে এ বিষয়ে বৈঠক রয়েছে। এতে রেলপথ মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন।

বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালের মধ্যে মোটরযান চুক্তি (বিবিআইএন-এমভিএ) হয়েছিল ২০১৫ সালের ১৫ জুন। এ চুক্তি কার্যকর হলে চার দেশ একে অন্যের জমি ব্যবহার করে পণ্য ও যাত্রী পরিবহন করতে পারত। ভুটানের বিরোধিতার কারণে বহুল আলোচিত এ চুক্তি কার্যকর হয়নি। বিবিআইএনে প্রস্তাবিত পথগুলোর বেশির ভাগই বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোর ট্রানজিট সহায়ক। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানায়, আজ অনুষ্ঠেয় বৈঠকে বিবিআইএনে প্রস্তাবিত পথের ব্যবহার নিয়েও আলোচনা হবে।

বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশের স্বার্থ সংরক্ষণ করে আমরা প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ট্রানজিটের সুদূরপ্রসারী কার্যক্রম হাতে নিতে চাই। বর্তমানে কোনো ট্রানজিট নীতি নেই। এখন যে সমন্বিত নীতি করতে যাচ্ছি, তা আমাদের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর জন্য পথনির্দেশক হিসেবে কাজ করবে। এ ক্ষেত্রে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) বাণিজ্য সহায়তা চুক্তি বা টিএফএ অনুসরণ করা হবে।’

জানা গেছে, ট্রানজিট নীতি করার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গত বছরের ৫ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর সময়ে ভারত সফরকালে ‘বাংলাদেশ-ভারত যৌথ ইশতেহারের ট্রানজিট/কানেকটিভিটি (আন্তযোগাযোগ)’–বিষয়ক অনুশাসনকে ভিত্তি হিসেবে নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এরপর ২০২২ সালের ২৯ ডিসেম্বর বিষয়টিকে এগিয়ে নিতে বাণিজ্যসচিব একটি আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক করেন। সে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, বৈদেশিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে পণ্য পরিবহন ও আঞ্চলিক যোগাযোগ সমন্বয়ে কাজ করবে
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। 

আজ বৈঠকের পর সবার মতামতের ভিত্তিতে একটি খসড়া দাঁড় করানো হবে। এরপর হবে একটি কারিগরি কমিটি। কারিগরি কমিটির সুপারিশসংবলিত প্রতিবেদন যাবে মূল কমিটিতে। মূল কমিটি খুঁটিনাটি দেখে তা অনুমোদনের জন্য পাঠাবে মন্ত্রিসভা কমিটিতে। 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, যথাযথ ট্রানজিট ব্যবস্থার উন্নয়নে রেলপথের মধ্যে বাংলাদেশের আখাউড়া ও ভারতের আগরতলা এবং স্থলবন্দরের মধ্যে বাংলাদেশের তামাবিল, গোয়াইনঘাটের বিষয়ে বিশেষ নজর দিতে হবে। সম্ভাব্য ট্রানজিট এলাকায় রাস্তা প্রশস্ত নেই। ফলে ভারত ও বাংলাদেশ অংশে এগুলোর উন্নয়ন জরুরি।

সূত্রগুলো জানায়, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যে বাণিজ্য চুক্তি নবায়ন হয়েছে, তাতে উভয় দেশ পরস্পরকে তৃতীয় দেশের জন্য ট্রানজিট সুবিধা দেওয়ার কথা বলা আছে। কিন্তু এ বিষয়ে যথেষ্ট সমীক্ষা ও কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়নি। ভারত ২০১৭ সালে একপক্ষীয়ভাবে একটি ট্রানজিট প্রস্তাবনা দিয়েছিল। এটা কাজে লাগিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্য দিয়ে তৃতীয় দেশে ট্রানজিট পাওয়ার বিষয়টি সম্ভাব্য ট্রানজিট নীতিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ হচ্ছে এ অঞ্চলের কেন্দ্রবিন্দু এবং বাংলাদেশকে সবারই লাগবে। তবে কোনো দেশের স্বার্থ দেখার চেয়ে নিজের স্বার্থ বড় করে দেখার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ এখন যে সমন্বিত ট্রানজিট নীতি করার উদ্যোগ নিয়েছে, তা স্বাগত জানানোর মতো।

সেলিম রায়হান বলেন, ‘বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিবেশী মিয়ানমারও। নেপাল, ভুটান ও ভারত তো আছেই। যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হলে বাংলাদেশিদের পক্ষে মিয়ানমার হয়ে থাইল্যান্ড যাওয়া খুবই সহজ। এখন দেখা যাক সমন্বিত ট্রানজিট নীতির খসড়ায় কী কী থাকছে।’