পেঁয়াজের চড়া বাজার নিয়ন্ত্রণে অভিযানে নেমেছে ভোক্তা অধিদপ্তর

পেঁয়াজ রপ্তানিতে ভারত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পর বাংলাদেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম রাতারাতি বেড়ে গেছে। এক দিনের ব্যবধানেই ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ অন্তত ৫০ টাকা বেড়েছে। এর জেরে বেড়েছে দেশি পেঁয়াজের দামও। কোথাও কোথাও দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২০০ টাকায়। বাজার দ্রুত অস্থির হয়ে ওঠার পর তা নিয়ন্ত্রণে এবার অভিযানে নেমেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন এই সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, আজ শনিবার সকাল থেকে ঢাকা মহানগর এলাকায় বিভিন্ন বাজারে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের চার কর্মকর্তার নেতৃত্বে চারটি দল অভিযান পরিচালনা করেছে। সংস্থাটির জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মকর্তারা অভিযান চালিয়েছেন দেশের আরও কিছু জায়গায়। পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত এ অভিযান চলবে বলে সংস্থাটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এক দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়ে ২০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে, এমন খবর আমাদের কাছে এসেছে। এখন আমরা বাজারে বাজারে গিয়ে দেখব, কত দামে এই পেঁয়াজ কেনা ছিল। এক দিনে বাজারে মূল্য এত বৃদ্ধির কথা নয়। আগে কম দামে পেঁয়াজ কিনে এখন চড়া দামে বিক্রি করা হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে। কোনো অনিয়ম পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আজ সকালে রাজধানীর মালিবাগ, মগবাজার, রামপুরা ও কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, একেক বাজারে বিক্রেতারা পেঁয়াজের একেক রকম দাম রাখছেন। বেশির ভাগ বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়। আর ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম রাখা হচ্ছে মানভেদে ১৬০ থেকে ১৯০ টাকা। চীন থেকে আমদানি করা বড় আকারের পেঁয়াজও বাজারে আছে, যার দাম পড়েছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি। দেশি পেঁয়াজের দাম বেশি ও মান এখন ততটা ভালো না হওয়ায় অনেক ক্রেতাকে আমদানি করা পেঁয়াজ কিনতে দেখা গেছে।

বাজারে পাতাসহ অল্প কিছু নতুন পেঁয়াজও এসেছে। পেঁয়াজের দাম বাড়ার সুযোগে তার দামও কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়ে ৮০ থেকে ৯০ টাকায় উঠেছে।

সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) আজকের বাজারদরের তালিকা বলছে, দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা আর আমদানি করা পেঁয়াজ ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সংস্থাটির হিসাবে, গত বছর এই সময়ে দেশি ও আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। সেই হিসাবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দেশি পেঁয়াজ এখন ৩১১ শতাংশ ও আমদানি করা পেঁয়াজ ২৬৭ শতাংশ বেশি দামে ক্রেতাদের কিনতে হচ্ছে।

পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি বাজারে আলুর দামও বেড়েছে। সম্প্রতি দেশের বাজারে সরবরাহ কমে যাওয়ার পর ভারত থেকে আলু আমদানি করা হচ্ছিল। আলু রপ্তানিতে যদিও ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কোনো বিধিনিষেধ নেই, তারপরও দেশে পুরোনো আলুর দাম আরেক দফা বেড়েছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আজ পুরোনো আলু বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। দুই দিন আগেও এর দাম ছিল ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা।

রামপুরা বাজারের আলু বিক্রেতা আবদুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘নতুন আলু আসার পর পুরোনো আলুর দাম কমতে শুরু করেছিল। আজ পাইকারিতে আলুর দাম পড়েছে ৫২ টাকা। রুগ্‌ণ-পচা আলু বাদ দিয়ে প্রতি কেজি ৬০ টাকার নিচে বিক্রি করলে আমাদের লাভ থাকে না।’

টিসিবির হিসাবে, বর্তমানে পুরোনো আলুর খুচরা দাম প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। গত বছরের এই সময়ে এই আলু পাওয়া গেছে ২২ থেকে ২৫ টাকায়। সেই হিসাবে, গত বছরের তুলনায় ক্রেতাদের এখন ১১৩ শতাংশ বেশি দাম দিয়ে আলু কিনতে হচ্ছে।

শীতের শুরুতে বাজারে নতুন আলু আসতে শুরু করলেও চাহিদার তুলনায় সরবরাহ এখনো কম। বাজারে আজ মানভেদে নতুন আলু বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৬০ থেকে ১০০ টাকায়। তবে পুরোনো আলুর দাম বাড়ার ফলে বেড়ে গেছে নতুন আলুর দামও। নতুন আলু গত বৃহস্পতিবারের তুলনায় কোথাও কোথাও ১০ থেকে ২০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে।