২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

ডিমের দাম কমছে, ডজন ১৪৫-১৫০ টাকা

ডিমফাইল ছবি

ঢাকার বাজারে ফার্মের ডিমের দাম কমতে শুরু করেছে। কারওয়ান বাজারে শুক্রবার এক ডজন ডিম বিক্রি হয় ১৪৫ টাকায়। মঙ্গলবারও ঢাকার বিভিন্ন বাজারে ডিমের ডজন ছিল ১৮০-১৯০ টাকা। সেই হিসাবে দুই দিনের ব্যবধানে ডিমের দাম কমেছে ডজনে ৩৫ থেক ৪৫ টাকা। অবশ্য পাড়া–মহল্লার দোকানে এখনো ডিমের ডজন ১৫০ টাকার ওপরে।

এদিকে ঢাকার ডিমের দুই পাইকারি বাজার—কাপ্তানবাজার ও তেজগাঁওয়ের আড়তদারেরা অভিযোগ করেন, ডিম উৎপাদনকারী বড় কোম্পানিগুলো প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ডিম সরবরাহ করছে না। সরকার–নির্ধারিত দরে উভয় বাজারে প্রতিদিন ১০ লাখ করে মোট ২০ লাখ ডিম দেওয়ার কথা থাকলেও বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ১১ লাখ ডিম সরবরাহ করা হয়েছে। এতে ডিমের দাম কমছে কিছুটা ধীরে। সরবরাহ বেশি থাকলে দ্রুতই দাম কমে আসত।

শুক্রবার সন্ধ্যায় কারওয়ান বাজারের ডিম ব্যবসায়ী নাহিদ হাসান জানান, তেজগাঁওয়ের আড়ত থেকে শুক্রবার সকালে ১১ টাকা ১০ পয়সা পাইকারি দরে একেকটি ডিম কিনেছেন তিনি; আর বিক্রি করছেন প্রতি ডজন ১৪৫ টাকায়। এই বাজারের আরেক ব্যবসায়ী আবু বকর সিদ্দিক জানান, তেজগাঁও আড়ত থেকে তিনি প্রতি পিস ডিম ১১ টাকা ২০ পয়সা দরে কিনেছেন। আর প্রতি ডজন বিক্রি করছেন ১৪৫ টাকায়। তাতে ডজনে খুচরা ব্যবসায়ীরা ১২ টাকা পর্যন্ত মুনাফা করেছেন।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তর সম্প্রতি ডিমের ‘যৌক্তিক দাম’ নির্ধারণ করে দেয়। নির্ধারিত দাম অনুসারে, প্রতিটি ডিমের দাম উৎপাদন পর্যায়ে ১০ টাকা ৫৮ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ১১ টাকা ১ পয়সা ও খুচরা পর্যায়ে ১১ টাকা ৮৭ পয়সা (ডজন ১৪২ টাকা ৪৪ পয়সা) হওয়ার কথা। তবে বাজারে বিক্রি হচ্ছে কমপক্ষে ১২ টাকায়।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কার্যালয়ে মঙ্গলবার ডিমের দাম ও সরবরাহ নিয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ডিম উৎপাদনকারী বড় কোম্পানি ও ছোট খামারিরা সরকার–নির্ধারিত দামে সরাসরি পাইকারি আড়তে ডিম পাঠাবেন। তারপর পোলট্রিশিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের উদ্যোক্তাদের সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ কো-অর্ডিনেশন কমিটির (বিপিআইসিসি) সভায় সিদ্ধান্ত হয়, প্রতিদিন ঢাকার দুই পাইকারি বাজার তেজগাঁও ও কাপ্তানবাজারের আড়তে সরাসরি ১০ লাখ করে ২০ লাখ ডিম সরবরাহ করবে ১৫টি প্রতিষ্ঠান।

গত বুধবার রাত থেকে কাপ্তানবাজারে উৎপাদক কোম্পানিগুলো সরাসরি ডিম সরবরাহ শুরু করে। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে তেজগাঁওয়ে সরাসরি ডিম সরবরাহ শুরু করে উৎপাদক কোম্পানিগুলো।

তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি আমানত উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডায়মন্ড, কাজী, পিপলস ও প্যারাগন গ্রুপ বৃহস্পতিবার তেজগাঁওয়ে চার লাখ ডিম সরবরাহ করেছে। পরিবহন খরচসহ প্রতিটি ডিমের দাম পড়েছে ১০ টাকা ৯১ পয়সা। আমরা পাইকারিতে ১১ টাকায় বিক্রি করেছি। বড় কোম্পানিগুলো প্রতিদিন ১০ লাখ করে ডিম দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। সেই অনুযায়ী ডিম না পেলে তো হবে না। কারণ, প্রতি রাতে ১৫ লাখ ডিম বিক্রি হয় তেজগাঁওয়ে।’

অন্যদিকে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে কাপ্তানবাজারে সাত লাখ ডিম সরবরাহ করে বড় বড় উৎপাদক কোম্পানি। সেখানেও প্রতিটি ডিম ১০ টাকা ৯১ পয়সায় সরবরাহ করা হয়। সেই ডিম ১১ টাকা ১০ পয়সায় পাইকারি দরে বিক্রি করেছেন আড়তদারেরা।

কাপ্তানবাজারের ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বড় উৎপাদক কোম্পানিগুলোর খামারে দিনে ১ কোটি ২০ লাখ ডিম উৎপাদিত হয়। তারা সরকার–নির্ধারিত দরে সরাসরি আড়তে দিচ্ছে ১০-১৫ শতাংশ। সেটিকে বাড়িয়ে ৩০-৩৫ শতাংশ করতে হবে। বাকি ডিমও সরকার–নির্ধারিত দরে বিক্রির জন্য কোম্পানিগুলোকে বাধ্য করা প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, কাপ্তানবাজারে অন্য কোনো অঞ্চলের ডিম এখনো আসছে না। টাঙ্গাইল, পাবনা ও কিশোরগঞ্জ অঞ্চলের ডিম এখনো ১১ টাকা ২০ পয়সা থেকে ১১ টাকা ৩০ পয়সায় বিক্রি হচ্ছে। পরিস্থিতির উন্নতি হতে আরও কয়েক দিন লাগবে।

উৎপাদক কোম্পানিগুলো প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ডিম সরবরাহ করছে না কেন—জানতে চাইলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আবদুল জব্বার মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডিম কম দেওয়ার বিষয় নিয়ে আমরা করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কথা বলেছি। প্রতিষ্ঠানগুলো জানিয়েছে, কিছু অসামঞ্জস্যের কারণে আড়তে কম পরিমাণে ডিম সরবরাহ করা হয়। তবে শুক্রবার (গত রাত) থেকে সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’