সাক্ষাৎকার

ডিজিটাল বাংলাদেশের আগে দরকার ডিজিটাল সরকার

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির টানা দুবার সভাপতির দায়িত্ব পালন শেষ করলেন রিজওয়ান রাহমান। ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে সভাপতির পদ ছাড়ার পরদিন রাজধানীর গুলশানে তাঁর দীর্ঘ সাক্ষাৎকার নেন প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক শুভংকর কর্মকার। এ সময় রিজওয়ান রাহমান বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট, ব্যাংক ও শেয়ারবাজারের অস্থিরতা, বিনিয়োগ পরিস্থিতি, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক উত্তেজনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন। দুই বছর ঢাকা চেম্বারকে নেতৃত্ব দেওয়ার সময়কে তিনি জীবনের চমৎকার অভিজ্ঞতা বলে উল্লেখ করেন।

প্রশ্ন :

শিল্প খাতে তিন-চতুর্থাংশ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন কুটির, অতিক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি (সিএমএসএমই) শিল্পের উদ্যোক্তারা। অথচ অধিকাংশ ব্যাংকই তাঁদের ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে খুব একটা আগ্রহ দেখায় না। এফবিসিসিআই, ঢাকা চেম্বারসহ কয়েকটি ব্যবসায় সংগঠনের নেতারা দীর্ঘদিন ধরেই বিষয়টি সমাধানের কথা বলছেন। তবে খুব বেশি অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। আসলে সমস্যাটা কোথায়?

রিজওয়ান রাহমান: ছোট উদ্যোক্তাদের গলার আওয়াজ আসলে কম। সে জন্যই অধিকাংশ সময় তাঁরা বঞ্চিত থাকছেন। ছোটদের অর্থায়নসংক্রান্ত সমস্যার সমাধান করতে হলে প্রথমেই সিএমএসএমইর সংজ্ঞা পরিবর্তন করতে হবে। সিএমএসকে (কুটির, অতিক্ষুদ্র ও ছোট) আলাদা করা প্রয়োজন। কারণ, মাঝারি শিল্পে অনেক বড় বড় কোম্পানি রয়েছে। মাঝারি কোম্পানির মূলধন ৫০-৭৫ কোটি টাকা হয়ে থাকে। আমাদের মতো দেশে এত টাকার কোম্পানি কিন্তু সোজা কথা না। তাই মাঝারি শিল্পকে বৃহৎ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত করে দিলে কোনো সমস্যা হবে না। আমার ধারণা, সিএমএসএমই খাতের ব্যাংকঋণের ৮৫ শতাংশ নিয়ে যায় মাঝারি শিল্প। বাকি ১৫ শতাংশ ভাগ হয় কুটির, অতিক্ষুদ্র ও ছোটদের মধ্যে। এটি নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের ব্যর্থতা। কোনো তহবিল গঠনের সময়ই যদি বলা হয়, ১০০ কোটি টাকার ঋণ কুটির, অতিক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প সমান হারে পাবে, তাহলেই সমস্যা মিটে যায়। এ জন্য আইন পরিবর্তন করা লাগে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি প্রজ্ঞাপনই যথেষ্ট। অর্থায়নের আরেকটা সমস্যা হচ্ছে, হিসাব কিংবা কাগজপত্র (ডকুমেন্টস) দিতে ছোটরা ব্যর্থ হয়। এখন ফুচকাওয়ালার কাছে যদি আপনি নিরীক্ষা প্রতিবেদন চান, তাহলে তো হবে না। এখানে ছোটদের ছাড় দিতে হবে।

প্রশ্ন :

বাণিজ্যযুদ্ধ, করোনাভাইরাস ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে চীন থেকে অনেক বিদেশি বিনিয়োগকারী সরে আসছেন। বাংলাদেশ এই বিনিয়োগ খুব একটা নিতে পারছে না। বিনিয়োগ আনার জন্য তো সরকার বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) গঠন করেছে। কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না কেন?

রিজওয়ান রাহমান: বিনিয়োগ বোর্ড ও বেসরকারীকরণ কমিশনকে একীভূত করে বিডা গঠন করা হয়। তবে একীভূত হওয়ার আগে বিনিয়োগ বোর্ড ও বেসরকারীকরণ কমিশন সাত-আট বছর ঘুমিয়েছে। সেই সময় আর ফিরে আসবে না। বর্তমানে বাংলাদেশ দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে। অসুবিধা হচ্ছে, বিডার ক্ষেত্রেও আমরা বেশ পিছিয়ে। দুঃখ লাগে, যখন বিডার বিদায়ী নির্বাহী চেয়ারম্যান বললেন, তাঁর সঙ্গে কেউ কাজ করেননি। কোনো একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে চিঠি দিয়ে তিনি উত্তর পেয়েছেন এক বছর পর। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে বিডা পরিচালিত হয়। এটাকে কেউ পাত্তা দেয় না, শুনতেই তো কেমন লাগে। মূল সমস্যা হচ্ছে, মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব। বিডা তো একা কাজ করে না। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের মাধ্যমেই কাজ হয়। তাদের মধ্যে সমন্বয় দরকার। পাশাপাশি বিডার সব সেবা দ্রুত অটোমেটেড করতে হবে।
২০১৯ সালে বিডা এক দরজায় সেবা (ওএসএস) চালু করে। তবে তা সম্পূর্ণরূপে অটোমেটেড না। সেবা নিতে ঘুরিয়ে–পেঁচিয়ে বিডাতে একবার না একবার হাজিরা দিতেই হয় বিনিয়োগকারীদের। সেবাকে মনুষ্যবিহীন করতে হবে। অটোমেশনের পেছনে কোনো মানুষ থাকবে না। মানুষ না থাকলেই দুর্নীতি কমবে, সময় বাঁচবে। তবে সরকারের একটি চক্র অটোমেশনের বিরুদ্ধে কাজ করে। এই চক্রের সঙ্গে ওপরের সারির কর্মকর্তাদের চেয়ে নিচের দিকের কর্মচারীরা জড়িত বেশি। আয়ের উৎস বন্ধ হবে, এই ভয়ে চক্রটি বিরোধিতা করে। এ জন্যই অটোমেশনটা চ্যালেঞ্জিং। তাই ডিজিটাল বাংলাদেশের আগে ডিজিটাল সরকার দরকার।

সরকারের একটি চক্র অটোমেশনের বিরুদ্ধে কাজ করে। এই চক্রের সঙ্গে ওপরের সারির কর্মকর্তাদের চেয়ে নিচের দিকের কর্মচারীরা জড়িত বেশি। আয়ের উৎস বন্ধ হবে, এই ভয়ে চক্রটি বিরোধিতা করে। এ জন্যই অটোমেশনটা চ্যালেঞ্জিং। তাই ডিজিটাল বাংলাদেশের আগে ডিজিটাল সরকার দরকার।

প্রশ্ন :

তাহলে বিদেশি বিনিয়োগ আনতে কী করা দরকার?

রিজওয়ান রাহমান: বিদেশি বিনিয়োগকারী কোনো দেশে বিনিয়োগ করার আগে মোটাদাগে তিনটি বিষয়কে বেশি গুরুত্ব দেয়। সেগুলো হচ্ছে—স্থানীয় বাজার, করব্যবস্থা ও পণ্য রপ্তানির জন্য বাজার–সুবিধা। ১৬ কোটির বিশাল জনগোষ্ঠীর কারণে আমাদের স্থানীয় বাজার খুবই সম্ভাবনাময়। গত কয়েক বছরে করপোরেট কর সাড়ে ৭ শতাংশ কমলেও সমস্যা বেড়েছে ১৫ শতাংশ। এগুলো নিয়ে কথা বললে আমাদের হয়রানির মুখেও পড়তে হয়। এশিয়ায় দেশগুলোয় গড় করপোরেট কর ২১ দশমিক ৬ শতাংশ। ভারত, লাওস, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডে করপোরেট কর ২০ শতাংশের নিচে। আমাদের দেশে কি সোনার তরি আছে যে বিদেশিরা বিনিয়োগ করতে আসবেন? বিদেশি বিনিয়োগ আনতে যে যতই রোড শো করুক না কেন, শেষ পর্যন্ত বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কিন্তু আমাদের কাছে ফোন করে, করপোরেট কর কত? ফলে তাদের খুশি করার আগে দেশের ব্যবসায়ীদের খুশি করুন। আমরাই বিদেশি বিনিয়োগ আনতে দূতের মতো কাজ করব।

প্রশ্ন :

আপনি করপোরেট করের বিষয়ে বললেন। আমাদের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর নিয়ে তো ব্যবসায়ীদের অনেক অভিযোগ। এখানে শৃঙ্খলা আনার উপায় কী?

রিজওয়ান রাহমান: যুক্তরাষ্ট্রে আয়কর রিটার্ন একজন কর্মকর্তার কাছে জমা দিতে হয়। রিটার্ন নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে তা শোনেন আরেকজন। পরে কোনো নথিপত্র লাগলে অন্য এক কর্মকর্তাকে দিতে হয়। মানে হচ্ছে, একজন করদাতার সঙ্গে একজন কর কর্মকর্তার একবারই দেখা হয়। যেন উভয়ের মধ্যে কোনো প্রকার করমর্দন না হয়। আবার অনেক দেশে ডাকবাক্সে রিটার্ন জমা দিতে হয়। তিন মাস পর ডাকবাক্সেই রিটার্ন জমার স্লিপ চলে আসে। তারা পারলে বাংলাদেশ কেন পারবে না? করোনা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ তো দেখিয়ে দিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই সমস্যার সমাধান করতে পারবেন। তিনি যদি একবার বলেন, তাহলেই সবাই সোজা হয়ে যাবে।
বর্তমানে এনবিআরের কর্মকর্তারা রাজস্ব আদায়েই বেশি ব্যস্ত থাকেন। করজাল বাড়ানো নিয়ে তাঁদের মাথাব্যথা নেই। এনবিআরের প্রতি আমার অনুরোধ, রাজস্ব আদায়ের অযৌক্তিক লক্ষ্যমাত্রা দিয়েন না। যখনই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয় না, তখনই কর কর্মকর্তারা আমরা যাঁরা নিয়মিত কর দিই, তাঁদের চিপে লক্ষ্যে পৌঁছাতে চান। ফলে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা না দিয়ে করদাতার সংখ্যা ২৫ লাখ থেকে ৫০ লাখে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য দেওয়া উচিত। ১৬ কোটি মানুষের দেশে মাত্র ২৫ লাখ কর দিচ্ছেন, তার চেয়ে হাস্যকর কী হতে পারে। সব কথার শেষ কথা, এনবিআরে অটোমেশন করতে হবে। এটির কোনো বিকল্প নেই।

প্রশ্ন :

ডলার–সংকটের কারণে অর্থনীতি চাপের মধ্যে আছে। ডলার বাঁচাতে আমদানির ওপর নানা রকম বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। সরকারের এমন উদ্যোগ কি আপনি সমর্থন করেন?

রিজওয়ান রাহমান: নিত্যপণ্যের বাইরে অন্যান্য পণ্যের আমদানি বন্ধ রাখা হয়েছে। আমাদের দেশে রপ্তানিকারকদের আওয়াজ বেশি। সেই তুলনায় আমদানিকারকদের আওয়াজ কম। তাঁরাও তো অর্থনীতির চাকা ঘোরাচ্ছেন। তাঁদের ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতে হচ্ছে। কারখানার ভাড়া ও শ্রমিকের মজুরি দিতে হচ্ছে। দেশে রপ্তানিকারকদের চেয়ে আমদানিকারকের সংখ্যা তিন-চার গুণ বেশি। ফলে এটার একটা সমাধান হওয়া দরকার। ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে হবে। সংকট কাটাতে আমাদের ডলারেও ঋণ নিতে হবে।

প্রশ্ন :

অর্থনীতির ওপর চাপ বৃদ্ধির পর অর্থ পাচার নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। অর্থ পাচার বন্ধের দায়িত্ব কার?  

রিজওয়ান রহমান: বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ কর্তাব্যক্তি মন্তব্য করেছেন, বড় লোকেরা টাকা বাইরে নিয়ে যাচ্ছেন। এই বড়লোকেরা কারা? বাংলাদেশ ব্যাংক জানে না! মন্তব্য না করে বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত সরাসরি অ্যাকশনে যাওয়া। আজকে যে টাকা পাচার হচ্ছে, তার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকই দায়ী। তাদের তদারকি ও কমপ্লায়েন্সের অভাবেই এটি হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকি ব্যবস্থা একেবারেই ‘হরিবল’। নতুবা তারা ইচ্ছে করেই অর্থ পাচার বন্ধে কোনো কাজ কাজ করছে না। তারা জানে, কারা বিদেশে টাকা পাচার করছে।

প্রশ্ন :

ইসলামী ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যাংক থেকে বেনামে অনেক টাকা বের করে নেওয়া হয়েছে। একের পর এক ঘটনা ঘটছে। বন্ধ হচ্ছে না কেন?

রিজওয়ান রাহমান: কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জবাবদিহি করতে হবে। হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়া অপরাধ নয়। সেই টাকা যে জন্য নেওয়া হয়েছিল, সেখানে খরচ হয়েছে কি না, তা দেখতে হবে। বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে সেটি বের করা কঠিন না। আমরা পত্রপত্রিকায় দেখলাম, ২৪ বছরের একজন তরুণ ইসলামী ব্যাংক থেকে ৯০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। আট মাস আগে খোলা একটি কোম্পানির নামে প্রায় হাজার কোটি টাকা নিয়ে নেওয়া হয়েছে। এই ঋণ অনুমোদন করেছে ব্যাংকটির পর্ষদ। সে জন্য পর্ষদের সবাই দায়ী। আবার বাংলাদেশ ব্যাংক কেন বাধা দেয়নি, সে জন্য তারাও দায়ী। আসলে সিস্টেমে সমস্যা রয়েছে। সে জন্যই এমন ঘটনা বন্ধ হচ্ছে না।

আমাদের সাশ্রয়ী হতে হবে। মুনাফার কথা আপাতত বাদ দিতে হবে। কারণ, আমরা সত্যি সত্যি একটি সংকটের মধ্যে আছি। তবে সুদহার একবারে বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া যাবে না। তাহলে সেটি অস্বাভাবিক অবস্থায় চলে যাবে। নিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়াতে হবে।

প্রশ্ন :

মূল্যস্ফীতি সামলানো যাচ্ছে না। তারপরও ব্যাংকঋণের সুদহার ৯ শতাংশ ধরে রাখা হয়েছে। মানুষ ব্যাংকে টাকা রেখে ক্ষতির মুখে পড়ছে। এটা কি যৌক্তিক হচ্ছে? সুদের হার বাড়লে কি ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়বেন?

রিজওয়ান রাহমান: এ সরকারের আমলেই আমরা ১৬ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়েছি। ব্যবসা করে সেই ঋণ ফেরতও দিয়েছি। ফলে ৯ শতাংশ সুদকে ১১ বা ১২ শতাংশ করলে কী সমস্যা। আমাদের সাশ্রয়ী হতে হবে। মুনাফার কথা আপাতত বাদ দিতে হবে। কারণ, আমরা সত্যি সত্যি একটি সংকটের মধ্যে আছি। তবে সুদহার একবারে বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া যাবে না। তাহলে সেটি অস্বাভাবিক অবস্থায় চলে যাবে। নিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়াতে হবে।

প্রশ্ন :

শেয়ারবাজারে মন্দাভাব চলছে। কয়েক দিন পরপরই আমরা দেখি শেয়ারবাজারে একধরনের অস্থিরতা। বিনিয়োগকারীরা আস্থাহীন হয়ে পড়েন। কেন এমন হচ্ছে? সংকট কোথায়?

রিজওয়ান রাহমান: শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থার তদারকি একেবারেই শূন্য। ছোট কোম্পানিগুলোকে তদারকি করা হলেও মরা বাজারে যারা ২০০-৩০০ কোটি টাকা লেনদেন করে, তাদের কিছু হয় না। আমার একটি কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত। ৩৬ বছর আগে তালিকাভুক্ত এই কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন সংশ্লিষ্ট খাতের তৃতীয় সর্বোচ্চ। কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ১৯-২০ টাকা। একই খাতের একটি কোম্পানি, যার ব্যবসা নেই, সঞ্চয় নেই, তার শেয়ারের দাম ১৩৫ টাকা। এই কারসাজির জন্য উদ্যোক্তারা জড়িত নন—বিএসইসি যদি তেমনটা মনে করে, তাহলে তাদের চেয়ে বড় বোকা আর কেউ নেই। নিয়ন্ত্রক সংস্থা জানে, কোনটা ভালো আর কোনটা খারাপ কোম্পানি। তাহলে সমাধান কী? সরকারের অনেক সফলতা থাকলেও তারা শেয়ারবাজারকে ঠিক করতে পারেনি। বিএসইসিকে বলতে চাই, আপনি রোড শো পরে করেন, আগে বাজার ঠিক করেন। রোড শো করা নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাজ নয়। এটার জন্য বিডা আছে। আমাদের বাজার ছোট হওয়ায় সহজেই কারসাজির ঘটনা ঘটে। যার কারণে চোর–বাটপাররা পার পেয়ে যায়। তবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রান্তিক বিনিয়োগকারী। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে শেয়াবাজারকেন্দ্রিক ধারণায় পরিবর্তন আনতে হবে। নতুন নতুন মিউচুয়াল ফান্ড সৃষ্টি করতে হবে।

প্রশ্ন :

রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ হওয়ার কোনো লক্ষণ নেই। ডলার–সংকট কাটছে না। জ্বালানি নিয়েও ভুগতে হচ্ছে। মূল্যস্ফীতিও ভোগাচ্ছে। সামনেই আবার জাতীয় নির্বাচন। রাজনীতির মাঠও গরম। নতুন বছরে আপনাদের প্রত্যাশা কী?

রিজওয়ান রাহমান: আমাদের বাংলাদেশের কিসমতটাই খারাপ। করোনা থেকে সুন্দরভাবে ঘুরে দাঁড়ালাম। ঠিকঠাকভাবেই পুনরুদ্ধারে পথেও ছিলাম। কিন্তু খেয়ে ফেলল ডলার–সংকট, মূল্যস্ফীতি আর জ্বালানিসংকট। এটা আমাদের দোষ না। নতুন বছরে অনেকগুলো দুশ্চিন্তা আছে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে—জাতীয় নির্বাচন। আমরা আনন্দ-উল্লাসের নির্বাচন দেখতে চাই। যেখানে সব রাজনৈতিক দল অংশ নেবে, জনগণ ভোট দেবে। কয়েক মাস ধরেই সরকারি ও বিরোধী দল রাজপথে। আমরা মনে করি, দেশের উন্নয়নের জন্যই তারা রাজপথে আছেন। তাদের মনে রাখতে হবে, দেশের অর্থনীতির চাকা কিন্তু ব্যবসায়ীরাই ঘোরান। এমন কিছু করা যাবে না, যাতে অর্থনীতি পেছনের দিকে যায়। অর্থনীতি পেছনের দিকে যায়, এমন কোনো কাজ রাজনৈতিক দলগুলো করবে না বলেই আমাদের প্রত্যাশা। এ ক্ষেত্রে সরকারি দলের দায়িত্বটা অনেক বেশি; তারা অনেকটা বড় ভাইয়ের মতো। অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে ছোট ভাইয়ের মতো দেখতে হবে তাদের। সরকারি দল ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় আছে। তাদের তো ভয় পাওয়ার কথা না। জনগণ তাদের জয়যুক্ত করে ক্ষমতায় আনতে পারে। আবার না–ও আনতে পারে। জনগণই সিদ্ধান্ত নিক, সেটিই দেশের জন্য মঙ্গল।

প্রশ্ন :

সামনের দিনে বাংলাদেশের সম্ভাবনা কেমন দেখছেন?

রিজওয়ান রাহমান: আমাদের বেসরকারি খাত জ্বালানিসংকট, ডলার–সংকট—সবকিছু পেরিয়ে এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশের মতো বিনিয়োগের বিপরীতে উচ্চ আয় (রিটার্ন অব ইনভেস্টমেন্ট) আর কোথাও নেই। সব মিলিয়ে এখানকার স্থানীয় বাজার খুবই আকর্ষণীয়। ঘুষ, উচ্চ করহার, দুর্নীতির মধ্যেও ব্যবসা করে মুনাফা করছে সবাই। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের মধ্যে বাংলাদেশ শাখা তাদের বেস্ট পারফরমার। দেশের বাইরে থেকে নারকেল তেল আমদানি করে বোতলজাত করে প্যারাস্যুট ব্র্যান্ড। এক বছরে ৪০০ কোটি টাকা লভ্যাংশ বিদেশে পাঠিয়েছে প্যারাস্যুটের মূল কোম্পানি ম্যারিকো। তারা বাংলাদেশে যত অর্থ বিনিয়োগ করেছে, তার ১০ গুণ মুনাফা বিদেশে নিয়ে গেছে। ফলে বাংলাদেশের সম্ভাবনার শেষ নেই।