দেশে প্রতিবছর বাড়ছে পরিবেশবান্ধব কারখানা

বাগান পেরিয়ে নান্দনিক স্থাপত্যের দোতলা প্রশাসনিক ভবন
ছবি: প্রথম আলো

পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তা সাজ্জাদুর রহমান মৃধার হাত ধরে ২০১২ সালে প্রথম পরিবেশবান্ধব কারখানার যাত্রা শুরু হয় বাংলাদেশে। পাবনার ঈশ্বরদী ইপিজেডে তিনি স্থাপন করেন ভিনটেজ ডেনিম স্টুডিও। তাঁর দেখানো পথ ধরে দেশে ইতিমধ্যে পরিবেশবান্ধব পোশাক কারখানা ও বস্ত্রকল হয়েছে ১৭১টি। এর মধ্যে চলতি বছরে পরিবেশবান্ধব কারখানার তালিকায় যুক্ত হয়েছে ১৫টি প্রতিষ্ঠান।

বর্তমানে বিশ্বে অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে বাংলাদেশেই সবচেয়ে বেশি পরিবেশবান্ধব পোশাক ও বস্ত্রকল রয়েছে। তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের পাশাপাশি শিপইয়ার্ড, জুতা ও ইলেকট্রনিক পণ্য খাতেও আছে পরিবেশবান্ধব কারখানা। বাণিজ্যিক ভবনও হচ্ছে পরিবেশবান্ধব, তবে সংখ্যায় কম।

বিশ্বের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান পরিবেশবান্ধব স্থাপনার সনদ দিয়ে থাকে। তাদের মধ্যে অন্যতম একটি যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি)। তারা ‘লিড’ নামে পরিবেশবান্ধব স্থাপনার সনদ দিয়ে থাকে। লিড–এর পূর্ণাঙ্গ রূপ লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন। সনদটি পেতে একটি প্রকল্পকে ইউএসজিবিসির তত্ত্বাবধানে নির্মাণ থেকে উৎপাদন পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে সর্বোচ্চ মান রক্ষা করতে হয়। এ জন্য নতুন ভবন নির্মাণ কিংবা পুরোনো ভবন সংস্কার করেও আবেদন করা যায়।

১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইউএসজিবিসি। সংস্থাটির অধীনে কলকারখানার পাশাপাশি বাণিজ্যিক ভবন, স্কুল, হাসপাতাল, বাড়ি, বিক্রয়কেন্দ্র, প্রার্থনাকেন্দ্র ইত্যাদি পরিবেশবান্ধব স্থাপনা হিসেবে গড়ে তোলা যায়। লিড সনদের জন্য ৯টি শর্ত পরিপালনে মোট ১১০ পয়েন্ট আছে। এর মধ্যে পয়েন্ট ৮০–এর ওপরে হলে ‘লিড প্লাটিনাম’, ৬০-৭৯ হলে ‘লিড গোল্ড’, ৫০-৫৯ হলে ‘লিড সিলভার’ এবং ৪০-৪৯ হলে ‘লিড সার্টিফায়েড’ সনদ মেলে। বাংলাদেশের পরিবেশবান্ধব স্থাপনাগুলো অধিকাংশই ইউএসজিবিসির অধীনে সনদ পেয়েছে।

তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর তথ্যানুযায়ী, গত ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে লিড সনদ পাওয়া ১৭১টি পোশাক ও বস্ত্র কারখানার মধ্যে ৫৩টি লিড প্লাটিনাম, ১০৪টি গোল্ড, ১০টি সিলভার ও ৪টি সার্টিফায়েড সনদ পেয়েছে। পাইপলাইনে রয়েছে আরও পাঁচ শতাধিক কারখানা।

পরিবেশবান্ধব কারখানা প্লামি ফ্যাশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফজলুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিবছরই পরিবেশবান্ধব পোশাক কারখানার তালিকায় নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান যুক্ত হওয়াটা খুবই ইতিবাচক। এতে সামাজিক ও পরিবেশগত সুবিধা পাচ্ছি আমরা। তবে ব্যবসায়ে এর কোনো ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে না। এ ক্ষেত্রে দেশ হিসেবে পরিবেশবান্ধব পোশাক কারখানার ব্র্যান্ডিং না করতে পারাটাই মূল সমস্যা।

কিছু প্রতিষ্ঠান নিজেরা চেষ্টা করে ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পোশাকের বাড়তি দাম নিতে পারছে। তবে অধিকাংশই পারছে না।’

ফজলুল হক আরও বলেন, ব্যবসায়িক সুবিধা নিতে পারলে পরিবেশবান্ধব পোশাক কারখানা স্থাপনে আরও বেশি আগ্রহী হতেন উদ্যোক্তারা।