মন্দার আশঙ্কায় কমছে বিশ্ব বাজারে জ্বালানির দাম

জ্বালানি তেল
ফাইল ছবি: রয়টার্স

উন্নত দেশগুলোতে মন্দা ঘনিয়ে আসছে আর তার ছাপ পড়তে শুরু করেছে তেলের বাজারে। বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম এখন প্রায় প্রাক-যুদ্ধ পর্যায়ের সমান। বেশ কিছুদিন ধরেই জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ৯০ ডলারের নিচে। আজ এই প্রতিবেদন লেখার সময় ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ছিল ৮৮ ডলার, যা ৮৭ ডলারেও নেমে এসেছিল চলতি সপ্তাহে।

পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম এখন ব্যারেলপ্রতি ৮০ ডলারে নেমে এসেছে। একইভাবে অন্যান্য জ্বালানির দামও এর আশপাাশে বিরাজ করছে। সূত্র অয়েল প্রাইস ডট কম

মূল বিষয়টি হচ্ছে চাহিদা ও সরবরাহ। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রদিবেদনে জানা যাচ্ছে, আগামী বছর বিশ্বের উন্নত দেশগুলো মন্দার কবলে পড়বে। ২০২০ সালের পর আবারও অর্থনৈতিক সংকোচনের মুখে পড়বে তারা। রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণে উন্নত দেশগুলোতে জ্বালানির দাম অনেকটা বাড়তি। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মান সরকার বিপুল পরিমাণে জ্বালানি ভর্তুকি দিয়েছে, তাতেও মন্দার আশঙ্কা দূর করতে পারছে না তারা। সেই সঙ্গে আছে চীনের শূন্য কোভিড নীতি।  

বিশ্বের বৃহত্তম জ্বালানি তেল আমদানিকারক দেশ হচ্ছে চীন। তার পরেই আছে ভারত। ফলে জ্বালানিবাজারে এ দুটি দেশের বিপুল প্রভাব। চীনের জ্বালানি চাহিদা কমে গেলে বিশ্ববাজারে জ্বালানির চাহিদা কমে যায়। সম্প্রতি বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম হ্রাস পাওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে চীনের লকডাউন। দেশটির বিভিন্ন স্থানে লকডাউন আরোপ করার কারণে দেশটির অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্তিমিত হয়েছে।

সেই সঙ্গে আছে সরবরাহ সংকট। ফলে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কিছুটা নিম্নমুখী। মার্কিন বিনিয়োগ ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাকস বলেছে, চীনের শূন্য কোভিড নীতির কারণে বিশ্ববাজারে তেলের চাহিদা হ্রাস পাবে। এ বাস্তবতায় তারা আগামী বছরের জন্য তেলের দামের পূর্বাভাস ব্যারেলপ্রতি ১০ ডলার হ্রাস করেছে।

এদিকে ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি ফোরাম বলেছে, রাশিয়ার ওপর পশ্চিমাদের পূর্ণাঙ্গ নিষেধাজ্ঞা আগামী মাসে কার্যকর হওয়ার কারণে রাশিয়ার তেল সরবরাহ দিনে এক থেকে তিন মিলিয়ন ব্যারেল হ্রাস পেতে পারে। ওপেকভুক্ত দেশগুলোও জ্বালানি উৎপাদন হ্রাস করছে।

তাতে বাজারে তেলের দাম একেবারে পড়ে যাবে না। করোনার শুরুতে সারা পৃথিবী যখন লক ডাউনে ছিল, তখন জ্বালানি তেলের দাম শূন্যেরও নিচে চলে গিয়েছিল। ২০২০ ও ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময় পরর‌্যন্ত জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৫০ ডলারের নিচেই ছিল।

২০২০ সালের মাঝামাঝি সময় যখন বিশ্বজুড়ে করোনার বিধিনিষেধ উঠে যায়, তখন থেকে জ্বালানির দাম বাড়তে শুরু করে। গত বছরের অক্টোবরের শেষ দিকে দুই ধরনের তেলের দামই ৮০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। সে সময় বাংলাদেশ সরকারও ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে নতুন ৮০ টাকা নির্ধারণ করে।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে একপর্যায়ে ব্যারেল প্রতি তেলের দর ১৩৯ ডলারে ওঠে। এরপর থেকে বিভিন্ন উদ্যোগে ওঠানামার মধ্যেই তেলের দর ১১০ থেকে ১১৫ ডলারের মধ্যে ছিল। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে গড়ে প্রতি ব্যারেল তেলের দাম ছিল ৪২ ডলার। ২০২১ সালের অক্টোবরে এই দাম ৮৫ ডলারে ওঠে।

এদিকে বিশ্ব বাজারে জ্বালানির দাম বৃদ্ধির পর বাংলাদেশ সরকার গত এক বছরে কয়েক দফায় জ্বালানির দাম বৃদ্ধি করে, যদিও বিশ্ববাজারে দাম কমার পর দেশে একবার সামান্য হারে দাম কমানো হয়। বিশ্ব বাজারে তেলের দাম কমতে শুরু করলে বাংলাদেশেও দাম সমন্বয় করা হবে বলে জানিয়েছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

তাঁর বক্তব্য ছিল, 'আমরা তেলের দাম বাড়াইনি, কেবল সমন্বয় করেছি।' কিন্তু বিশ্ব বাজারে গত কয়েক মাস ধরে জ্বালানির দর কমতির দিকে থাকলেও দেশে এখনো জ্বালানির দর সমন্বয়ের কথা শোনা যায়নি, বরং সম্প্রতি বিদ্যুতের পাইকারি দর বৃদ্ধি করা হয়েছে।