শতভাগ কাগুজে নোটবিহীন লেনদেন অনেকের জন্য চ্যালেঞ্জিং হবে

আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে শুল্ক–কর হ্রাস বা বৃদ্ধি করা হয়েছে। আবার শেয়ারবাজারে মূলধনি মুনাফার ওপর কর আরোপ করা হয়। বাজেটের এসব উদ্যোগের প্রভাব কী হতে পারে—তা নিয়ে কথা বলেছেন সংশ্লিষ্ট খাতের উদ্যোক্তা ও খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁদের অভিমত নিয়ে এবারের মূল আয়োজন।

ফাহিম মাশরুর সাবেক সভাপতি, বেসিস ও প্রধান নির্বাহী, বিডিজবস

বাজেটে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের জন্য যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সেগুলোকে আমি ইতিবাচকভাবেই দেখছি। এ বছর এ খাতের বড় দাবি ছিল কর অব্যাহতির মেয়াদ বৃদ্ধি। সরকার ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) খাতসংশ্লিষ্টদের দাবি বিবেচনায় নিয়ে কর অব্যাহতির মেয়াদ তিন বছর বাড়িয়েছে। তবে সে জন্য ক্যাশলেস বা নগদবিহীন লেনদেনের শর্ত আরোপ করা হয়েছে। দেশে একটা ধারণা আছে যে অনেকে কর ফাঁকির জন্য আইসিটি খাতকে ব্যবহার করে। এই ঝুঁকি কমানোর জন্য নগদবিহীন লেনদেনের শর্ত যুক্ত করা হয়েছে। তবে এ খাতের লেনদেনকে শতভাগ কাগুজে নোটবিহীন করার ক্ষেত্রে যে সমস্যা আছে, তার সমাধান করতে রাজস্ব বোর্ডসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তা লাগবে।

তথ্যপ্রযুক্তি খাতের লেনদেনকে কাগুজে নোটবিহীন করার সরকারের উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানায়। তবে এই উদ্যোগ যেন বাস্তবায়ন করা যায়, সে জন্য সহায়ক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। কাগুজে নোটবিহীন লেনদেন চালু করতে হলে এ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর লেনদেন শতভাগ ডিজিটাল হতে হবে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে আমাদের ব্যাংকিং ব্যবস্থায় সমস্যা রয়েছে। অনেক লেনদেনের নিষ্পত্তি তাৎক্ষণিকভাবে করা যায় না। আবার শুক্র ও শনিবারের বিষয়ও থাকে। সে ক্ষেত্রে অনেক প্রতিষ্ঠান নগদে লেনদেন করতে বাধ্য হয়। ব্যাংকের মাধ্যমে যাতে ২৪ ঘণ্টাই লেনদেন করা যায়, সে জন্য কাজ করতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংককে।  

শতভাগ কাগুজে নোটবিহীন লেনদেন তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অনেক প্রতিষ্ঠানের জন্য চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। এই শর্ত পরিপালনে কমপক্ষে এক বছর সময় দরকার। আগামী জুলাই থেকে নতুন বাজেট বাস্তবায়ন শুরু হবে। তাই আগামী অর্থবছর কত শতাংশ লেনদেন নগদবিহীন করতে হবে, তার একটি সীমা বেঁধে দেওয়া যায়। কারণ, আমাদের ইকোসিস্টেম ও লেনদেনের অবকাঠামো পুরোপুরি প্রস্তুত নয়।

তথ্যপ্রযুক্তি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোকেও আগামী তিন বছর পর কর দিতে হবে-সেটা মাথায় রেখে এখন থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে। ব্যাংক বা অন্য কোনো খাতে বিনিয়োগ পাওয়া যায় না, সে কারণেই এবার কর অব্যাহতি সুবিধা চাওয়া হয়েছিল। তাই আইসিটি মন্ত্রণালয়, অ্যাসোসিয়েশন বা এ খাত নিয়ে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের এখন ব্যাংকিং পদ্ধতি নিয়ে কথা বলা শুরু করতে হবে; যাতে প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংক থেকে বিনিয়োগ পায়। 

বাজেটে মুঠোফোনে কথা বলা ও ইন্টারনেট সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। এটা একটা বড় আঘাত। বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কোম্পানি বা ছোট উদ্যোক্তারা মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী। এখন সেখানে খরচ বেড়ে গেলে স্মার্টফোনের ব্যবহারও কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। টক টাইমের ওপর শুল্ক থাকতে পারে, কিন্তু ইন্টারনেটের ওপর বাড়তি খরচ তুলে নেওয়া উচিত।

ফাহিম মাশরুর

সাবেক সভাপতি, বেসিস ও প্রধান নির্বাহী, বিডিজবস