কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যেসব চাকরিকে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে ফেলবে

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা
রয়টার্স

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই সারা পৃথিবীতে মানুষের কাজ কেড়ে নেবে কি না, এ নিয়ে বিস্তর তর্কবিতর্ক চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের চাকরির বাজার কীভাবে এআই দ্বারা প্রভাবিত হবে এবং কোন ধরনের কাজ সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হবে, নতুন এক প্রতিবেদনে সে বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।

সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মোট শ্রম সময়ের ৩০ শতাংশই পূরণ করবে এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক খবরে এ কথা বলা হয়েছে।

ম্যাককিনসে গ্লোবাল ইনস্টিটিউট পরিচালিত সমীক্ষায় বলা হয়েছে, এআই অর্থনীতির অটোমেশন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করবে।

তাদের বলা হয়েছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখনই বিপুল মানুষের চাকরি খেয়ে নেবে, বিষয়টি এমন নয়, তবে অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে অটোমেশন ত্বরান্বিত করবে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে দাপ্তরিক সহযোগিতা, গ্রাহকসেবা ও খাদ্য সরবরাহের কাজে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই ২০৩০ সালের মধ্যে অতিরিক্ত ১ কোটি ২০ লাখ কাজ উত্তরণ পর্ব পার করবে।

এতে বলা হয়, ভবিষ্যতে স্বাস্থ্য সেবা খাতে সবচেয়ে বেশি মানুষের কাজ হতে পারে। ম্যাককিনসের ধারণা, স্বাস্থ্য সেবা ও স্বাস্থ্য কারিগরি খাতে ৩৫ লাখ নতুন কর্মসংস্থান হবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে সফটওয়্যার প্রকৌশলী, ডেটাবিজ্ঞানী, সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষক, বায়োমেডিক্যাল প্রকৌশলী, পরিবেশবিজ্ঞানীদের কাজের সুযোগ ৩০ শতাংশ বাড়বে।

তবে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি খাতে বিপুলসংখ্যক কর্মী ছাঁটাই করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও প্রযুক্তিতে দক্ষ মানুষের কাজের সুযোগ বাড়বে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ, অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে ডিজিটালাইজেশন বাড়বে।

ব্যাংক, বিমা, ওষুধ ও স্বাস্থ্যসেবা খাতে বড় ধরনের ডিজিটাল রূপান্তর ঘটছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। ফলে এসব খাতে দক্ষ কর্মীদের চাহিদা বাড়বে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, যোগাযোগ সেবা খাতের কাজে ২০৩০ সালের মধ্যে ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে।

অন্যদিকে সবচেয়ে বেশি কাজ হারাবে দাপ্তরিক সহায়তা, গ্রাহকসেবা ও খাদ্যসহায়তা খাত।

প্রতিবেদনের মূল্যায়ন, যুক্তরাষ্ট্রে ২০৩০ সালের মধ্যে কেরানির কাজের চাহিদা ১৬ লাখ কমবে। ৮ লাখ ৩০ হাজার খুচরা বিক্রয়কর্মী, ৭ লাখ ১০ হাজার প্রশাসনিক সহকারী ও ৬ লাখ ৩০ হাজার ক্যশিয়ারের চাকরি যাওয়ার পাশাপাশি এটা ঘটবে।

বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, যেসব চাকরিতে একই কাজ বারবার করতে হয়, যেমন ডেটা বা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ বা প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ—এসব কাজ অটোমেশনের কারণে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হবে।

নিম্ন মজুরির কাজ সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। যেসব কাজের বার্ষিক মজুরি ৩০ হাজার ৮০০ ডলার থেকে ৩৮ হাজার ২০০ ডলার এবং সেই সব কাজ যাঁরা করেন, তাঁদের চাকরি পরিবর্তনের সম্ভাবনা ১০ থেকে ১৪ গুণ বেশি।

এ ক্ষেত্রে নারীদের অবস্থা আরও সঙিন হবে। কারণ, তাঁদের চাকরি পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেড় গুণ বেশি। এ ছাড়া সামগ্রিকভাবে উচ্চ মজুরির কাজের চাহিদা বাড়তে পারে, সে জন্য শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধির বিকল্প নেই।

তবে এআই মানুষের কাজ খেয়ে নেবে কি না, সে বিষয়ে সামগ্রিক উপসংহারে পৌঁছাতে না পারলেও ম্যাককিনসে সেই আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছে না। স্বল্প মেয়াদে অনেক মানুষের কাজ চলে যেতে পারে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন বা পরিবর্তন অনেক ক্ষেত্রে বিঘ্ন ঘটায়, তবে শেষ পর্যন্ত তা অর্থনৈতিক ও কর্মসংস্থান প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে সহায়ক।