৬ মাসে ঘাটতি ১৫ হাজার কোটি টাকা 

চলতি অর্থবছরের অর্ধেক সময় পেরিয়ে গেলেও লক্ষ্যের মাত্র ৩৮ শতাংশ অর্জন করেছে এনবিআর। ছয় মাসে আদায় ১ লাখ ৪২ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা।

এনবিআরের প্রধান কার্যালয়
ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) রাজস্ব খাতের সংস্কারের শর্ত দিয়েছে। অর্থনীতির চাহিদামতো যাতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে অর্থের জোগান দেওয়া যায়, সে জন্য এই সংস্কার চায় আইএমএফ। সরকারের প্রতিবছরের খরচের জন্য যত টাকা দরকার, তার বড় অংশ জোগান দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। কিন্তু এনবিআর কখনোই তার লক্ষ্য অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করতে পারে না। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ২৪ শতাংশ। কিন্তু গত ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) শুল্ক-কর আদায়ে মাত্র ১১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের অর্ধেক সময় পেরিয়ে গেলেও লক্ষ্যের মাত্র ৩৮ শতাংশ অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। এমনকি গত জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে শুল্ক-কর আদায়ের যে লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছিল, তা থেকেও ১৫ হাজার ১১৩ কোটি টাকা ঘাটতি আছে।

কর আদায় বাড়াতে হলে শুল্ক ও আয়কর আইন যুগোপযোগী করতে হবে। যে আইন করা হচ্ছে, তা কর আদায় বাড়াতে খুব বেশি ভূমিকা রাখতে পারবে না।
আমিনুর রহমান, সাবেক সদস্য, এনবিআর 

গত জুলাই-ডিসেম্বরে সব মিলিয়ে ১ লাখ ৪২ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকার শুল্ক-কর আদায় হয়েছে। এ সময়ে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল ১ লাখ ৫৮ হাজার ৮৬ কোটি টাকা। গত ছয় মাসে মাসওয়ারি গড়ে সাড়ে ২৩ হাজার কোটি টাকা আদায় হয়েছে।

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে শুল্ক-কর কর্মকর্তাদের ২ লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করতে হবে। তাতে প্রতি মাসে গড়ে ৩৮ হাজার কোটি টাকা আদায় করতে হবে। চলতি অর্থবছরে সব মিলিয়ে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। এনবিআর–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, অন্যবারের মতো এবারও এনবিআরের লক্ষ্য কমাতে হবে। কারণ, শেষ পর্যন্ত এত রাজস্ব আদায় সম্ভব হবে না।

জানতে চাইলে এনবিআরের কর বিভাগের সাবেক সদস্য আমিনুর রহমান সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বর্তমান রাজস্ব প্রশাসন দিয়ে বিশাল রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অর্জন করা যাবে না। কর আদায় বাড়াতে হলে শুল্ক ও আয়কর আইন যুগোপযোগী করতে হবে। যে আইন করা হচ্ছে, তা কর আদায় বাড়াতে খুব বেশি ভূমিকা রাখতে পারবে না।’

রাজস্ব লক্ষ্য অর্জিত না হলে অর্থমন্ত্রীর হাতে বিকল্পও আছে। সে ক্ষেত্রে প্রতিবারের মতো বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) কাটছাঁট করার পথেই হাঁটতে হবে অর্থমন্ত্রীকে। ইতিমধ্যে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সেই কাজ শুরুও করেছে।

এদিকে এডিপি বাস্তবায়নের চিত্রে দেখা যাচ্ছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকার এডিপির মাত্র ২৩ শতাংশ খরচ হয়েছে। দেশের সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ তাদের প্রকল্পের অনুকূলে গত জুলাই-ডিসেম্বরে সব মিলিয়ে ৬০ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা খরচ করেছে। এখন প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তাদেরও প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে টি-টোয়েন্টি ম্যাচের ব্যাটসম্যানের মতো খেলতে হবে।