বাজেট আলোচনা মে মাসে শুরু করা যেতে পারে, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রীর পরামর্শ

রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ‘ট্রান্সফরমিং বাংলাদেশ’স পার্টিসিপেশন ইন ট্রেড অ্যান্ড গ্লোবাল ভ্যালু চেইন’ বা ‘বৈশ্বিক মূল্য সংযোজন ব্যবস্থা ও বাণিজ্যে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের রূপান্তর’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম
ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় সংসদে বাজেটের ওপর আলোচনা এক মাস নয়, বরং আরও লম্বা সময় ধরে হওয়া উচিত বলে মনে করেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম। তিনি আরও পরামর্শ দেন যে বাজেট আলোচনা মে মাসের মাঝামাঝি শুরু করা যেতে পারে।

ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘বাজেটের নানা বিষয় থাকে, যেগুলো নিয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা করা যেতে পারে। তাতে আমার মনে হয়, বাজেটের আলোচনা এক মাসে সীমাবদ্ধ না রেখে মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু করা যেতে পারে। এ বিষয়ে সংসদের নির্দেশনা থাকলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সেভাবে প্রস্তুতি নিয়ে রাখবে।’

আজ রোববার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ‘ট্রান্সফরমিং বাংলাদেশ’স পার্টিসিপেশন ইন ট্রেড অ্যান্ড গ্লোবাল ভ্যালু চেইন’ বা ‘বৈশ্বিক মূল্য সংযোজন ব্যবস্থা ও বাণিজ্যে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের রূপান্তর’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণের পাশাপাশি দেশের কর জিডিপির অনুপাত বাড়ানো প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এডিবির প্রতিবেদন নিয়ে শামসুল আলম বলেন, ‘এখানে রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণে জোর দেওয়া হয়েছে, সরকারেরও এ বিষয়ে পরিকল্পনা আছে। সেভাবে কাজও এগোচ্ছে। যেমন সম্প্রতি চামড়া, পাট, ওষুধ ও ইলেকট্রনিকের মতো খাত থেকে এক বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলারের মতো রপ্তানির আয়ও এসেছে। তাতে আমরা আশাবাদী। তবে এটা ঠিক, এখানে আরও কাজ করার সুযোগ আছে।’

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, পোশাকশিল্পের পাশাপাশি অন্য খাতেও গুরুত্ব দিতে হবে। নতুন বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে আসতে হবে। এফডিআই এলে শুধু পুঁজি আসে না, প্রযুক্তি ও দক্ষতাও আসে।

রাজস্ব বাড়াতে করনীতির সংস্কার প্রয়োজন উল্লেখ করে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকারের ব্যয় মেটাতে রাজস্ব বাড়ানো প্রয়োজন। সে জন্য করনীতি নিয়ে আরও আলোচনা হওয়া দরকার। দেশে কর-জিডিপির অনুপাত কম। সেখানে উন্নতি করতে হবে। কিছু জায়গায় শুল্ক অনেক বেশি, তা নিয়েও আলোচনা হওয়া উচিত। আর রাজস্ব ঘাটতি সাধারণত ৫ শতাংশের মধ্যে থাকলেও এবারে তা বাড়লেও সেটা ৬ শতাংশের ওপরে হওয়া উচিত নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আইএমএফ যেকোনো শর্ত দিলেই আমরা যে মেনে নিচ্ছি বা নেব, এমন কিন্তু নয়। আমাদের অর্থনৈতিক সংস্কারের জন্য যেটুকু প্রয়োজন, যাচাই-বাছাই করে সেটুকু নেওয়া হচ্ছে। তারা আমাদের সহযোগী। আমাদের প্রয়োজনেই তাঁদের সঙ্গে আমরা কাজ করছি, নানা কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে।’

অনুষ্ঠানের প্যানেল আলোচনায় পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) চেয়ারম্যান জায়েদী সাত্তার বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতির চাপ বিদ্যমান। এর মধ্যে আমেরিকা ও চীনের মধ্যে রেষারেষির প্রভাবও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি ঠিক পথে রাখতে বাংলাদেশের রপ্তানিতে বৈচিত্র্য বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।

এ ক্ষেত্রে জায়েদী সাত্তার আন্তর্জাতিক ভ্যালু চেইনে গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি আঞ্চলিক ভ্যালু চেইনেও গুরুত্ব দিতে পরামর্শ দেন। তাহলে রপ্তানির ক্ষেত্রে সুবিধা পাওয়া যাবে, আবার এফডিআইও আসবে বলে তিনি মনে করেন।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এডিবির প্রধান অর্থনীতিবিদ আলবার্ট এফ পার্ক, এডিবির জ্যেষ্ঠ পরিসংখ্যানবিদ মাহিনথান জে মাসিসংঘাম ও এডিবির অর্থনীতিবিদ পারমিলা এ শ্রীভেলি।

উপস্থাপনায় বলা হয়, যদিও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ভালো, দেশের রপ্তানিযোগ্য পণ্য বেশ কম। এসব পণ্যের মূল্য সংযোজনও কম হওয়ার ফলে দেশের অর্থনীতিতে বড় পরিবর্তন নিয়ে আসা বেশ চ্যালেঞ্জিং। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পোশাকশিল্পের চেয়ে উৎপাদনশীল অন্যান্য খাতে এফডিআই আনতে কাজ করতে পারে।

চামড়া ও আইসিটি খাত বড় রপ্তানি বাজার পেতে পারে এবং ভবিষ্যতে বাংলাদেশের ডিজিটাল উৎপাদনশীল খাতের রপ্তানি বাড়বে বলে ধারণা করছে এডিবি।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিন্টিং, ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংক ইনস্টিটিউটের আরেফ সুলেমান প্রমুখ।