চালের বাজারে যে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হচ্ছে

চালের বাজারফাইল ছবি

চালের বস্তায় ধানের জাত ও মিলগেটের মূল্য লিখতে হবে। সেই সঙ্গে থাকতে হবে উৎপাদনের তারিখ ও প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের নাম। এমনকি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের অবস্থান (জেলা ও উপজেলা) এবং ওজনের তথ্যও উল্লেখ করতে হবে। এ নির্দেশনা আজ রোববার থেকে কার্যকর হওয়ার কথা জানিয়েছে সরকার। চালকলের মালিকেরাও জানান, সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন তাঁরা।

জানা গেছে, বাজারে চালের দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার গত ফেব্রুয়ারিতে এ নির্দেশনা দিয়েছে, যা আজ থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। এতে চালের বাজারে আরও স্বচ্ছতা আসবে এবং সেটা বাজার স্থিতিশীল রাখতে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছে সরকার।

এদিকে গতকাল শনিবার খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ইসমাইল হোসেন স্বাক্ষরিত আরেক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সম্প্রতি দেশের চাল উৎপাদনকারী কয়েকটি জেলা পরিদর্শন করে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে বাজারে একই জাতের ধান থেকে উৎপাদিত চাল ভিন্ন ভিন্ন নামে ও দামে বিক্রি হচ্ছে। এ সমস্যার সমাধানে উদ্যোগটি নেওয়া হয়েছে।

চালকলের মালিকেরা এ নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য ইতিমধ্যে উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানান বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক এইচ আর খান পাঠান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সরকারের নির্দেশনা শতভাগ বাস্তবায়ন করতে চাই। সে লক্ষ্যে আজ (রোববার) থেকে সারা দেশের মিলমালিকেরা কাজ করছেন।’

তবে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ধানের জাত ও মিলগেটের মূল্য, উৎপাদনের তারিখ ও প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের নাম, প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের অবস্থান এবং ওজনের তথ্য উল্লেখ রয়েছে এমন চালের বস্তা এখনো ঢাকার বাজারে আসেনি বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

রামপুরা বাজারের চাল ব্যবসায়ী আবদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঈদের পরে মাত্র দোকান খুলেছি। বস্তার গায়ে দাম লেখা নতুন চাল এখনো পাইনি। বাজার ভালোভাবে চালু হলে তখন আসতে পারে বলে শুনেছি।’

বাজারদর নিয়ে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তৈরি করা সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে, প্রতি কেজি মোটা চাল (স্বর্ণা ও চায়না ইরি) বর্তমানে ৫০–৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি মানের চাল (পাইজাম ও লতা) ৫৫–৫৮ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আর সরু চালের (মিনিকেট ও নাজির) কেজি ৬৫ থেকে ৭৬ টাকা। বাজারে অবশ্য আরও বেশি দামের সরু চালও আছে।

সরকারি নির্দেশনায় যা বলা আছে
চালের দাম অযৌক্তিক পর্যায়ে গেলে বা হঠাৎ বৃদ্ধি পেলে মিলমালিক, পাইকারি বিক্রেতা ও খুচরা বিক্রেতারা একে অপরকে দোষারোপ করে থাকেন। তখন ভোক্তারা ন্যায্যমূল্যে পছন্দমতো চাল কিনতে অসুবিধায় পড়েন। অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন।

এ অবস্থা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে চালের বাজারমূল্য সহনশীল ও যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে ধানের নামেই যাতে চাল বাজারজাতকরণ করা হয়, সেটি নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

এ–সংক্রান্ত কার্যক্রমে তদারকির সুবিধার্থে গত ২১ ফেব্রুয়ারি জারি করা সরকারি নির্দেশনায় কয়েকটি বিষয় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মিলমালিকের গুদাম থেকে বাণিজ্যিকভাবে চাল সরবরাহের প্রাক্কালে চালের বস্তার ওপর মিলসহ জেলা ও উপজেলার নাম, উৎপাদনের তারিখ, মিলগেটের মূল্য এবং ধানের জাত উল্লেখ করতে হবে। বস্তার ওপর এসব তথ্য কালি দিয়ে লিখতে হবে।

চাল উৎপাদনকারী মিলমালিকের সরবরাহ করা সব প্রকারের চালের বস্তা ও প্যাকেটে ওজন তথা পরিমাণ (৫০, ২৫, ১০, ৫ ও ১ কেজি) উল্লেখ থাকতে হবে। করপোরেট প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও একই নির্দেশনা প্রতিপালন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে মিলগেটের দামের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠান চাইলে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যও উল্লেখ করতে পারবে।

এর ব্যত্যয় ঘটলে খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, মজুত, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ, বিপণন (ক্ষতিকর কার্যক্রম প্রতিরোধ) আইন, ২০২৩-এর ধারা ৬ ও ধারা ৭ মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে।

আইনটির ধারা-৬-এর অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার সুযোগ রয়েছে। আর ধারা-৭-এর শাস্তি হিসেবে রয়েছে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড অথবা ১৫ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সংগ্রহ শাখা থেকে গত ২১ ফেব্রুয়ারি নির্দেশনাটি জারি করা হয়। নির্দেশনার কপি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব, অর্থ বিভাগের সচিবসহ দেশের সব বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে পাঠানো হয়েছে।