বঙ্গবাজারের অস্থায়ী স্থাপনা ভাঙা শুরু

১০৬ কাঠা জমির ওপর ৩৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ তলা বিপণিবিতান নির্মাণ করা হবে। নতুন বিপণিবিতানে দোকান থাকবে ৩২১৫টি।

অস্থায়ী স্থাপনা ভেঙে নতুন বহুতলবিশিষ্ট বিপণিবিতান গড়ে তোলা হবে। গতকাল বিকেলে ঢাকার বঙ্গবাজারের অস্থায়ী মার্কেটদীপু মালাকার

বছরখানেক আগে ঢাকার ফুলবাড়িয়ার বঙ্গবাজার আগুনে পুড়ে পুরোপুরি ভস্মীভূত হয়ে যায়। এরপর সেখানে বাঁশ ও ত্রিপল দিয়ে অস্থায়ী স্থাপনা তৈরি করে দেওয়া হয়। তাতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। সেই সুযোগ আর থাকছে না। কারণ, বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের জায়গায় গড়ে উঠবে বহুতল ভবন। এ জন্য অস্থায়ী স্থাপনা ভাঙার কাজ শুরু করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। অবশ্য এই স্থাপনা ভাঙার কথা ঈদের আগেই ব্যবসায়ীদের জানানো হয়েছে।

ডিএসসিসি গতকাল সোমবার বঙ্গবাজারের অস্থায়ী স্থাপনা ভাঙার কাজ শুরু করেছে। যদিও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের একটি পক্ষ এখনই বঙ্গবাজার ভাঙার পক্ষে ছিলেন না। সে জন্য ঈদের পরে মালামাল সরিয়ে নেওয়ার কথা থাকলেও তাঁদের অনেকেই তা করেননি।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ঈদের পরে বঙ্গবাজার ভাঙার বিষয়টি অস্থায়ীভাবে বসা ব্যবসায়ীদের জানানো হয়েছিল। ইতিমধ্যে অনেক ব্যবসায়ী মালামাল সরিয়ে নিয়েছেন। এক মাথা থেকে ভাঙার কাজ চলছে। ফলে ব্যবসায়ীরা চাইলে মালামাল সরানোর সুযোগ পাবেন বলে তিনি জানান।

বঙ্গবাজারে অস্থায়ীভাবে বসা ব্যবসায়ীদের অনেকের দাবি, সব পুড়ে নিঃস্ব হওয়ার পর গত এক বছরে তাঁরা ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি। কোনো ক্ষতিপূরণও পাননি। এ অবস্থায় ব্যবসা অন্যত্র সরানো হলে তাঁদের আরও ক্ষতির মুখে পড়তে হতে পারে। এই ঈদেও তেমন ব্যবসা করতে পারেননি তাঁরা। অনেক ব্যবসায়ী সামনের ঈদ (ঈদুল আজহা) পর্যন্ত ব্যবসা করার সুযোগ চেয়েছেন। তবে এসব বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা প্রকাশ্যে কথা বলতে চান না।

গতকাল রাতে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে অস্থায়ী স্থাপনা ভাঙার কাজ চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলতি মাসের কোনো এক দিন বঙ্গবাজারে বহুতল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের সময় দেবেন বলে কথা রয়েছে। সে জন্য কিছু কাজ এগিয়ে রাখতে হচ্ছে।

বিষয়টি নিয়ে গতকাল বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স ব্যবসায়ী সমিতির একাধিক নেতার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁরা তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেননি।

গত বছরের ৪ এপ্রিল ঢাকার বঙ্গবাজার ভয়াবহ এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, অগ্নিকাণ্ডে ভস্মীভূত বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের চারটি ইউনিটে (বঙ্গবাজার, গুলিস্তান, মহানগর ও আদর্শ) সব মিলিয়ে দোকান ছিল ২ হাজার ৯৬১টি। এ ছাড়া মহানগর শপিং কমপ্লেক্সে ৭৯১টি, বঙ্গ ইসলামিয়া মার্কেটে ৫৯টি ও বঙ্গ হোমিও কমপ্লেক্সে ৩৪টি দোকান আগুনে পুড়ে গেছে। সব মিলিয়ে ৩ হাজার ৮৪৫টি দোকানের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সহায়তার জন্য একটি উন্মুক্ত তহবিল গঠন করা হয়েছিল। আইএফআইসি ব্যাংকে সেই হিসাব পরিচালিত হচ্ছে।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই) এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশসহ অনেক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি তহবিলটিতে অনুদান দিয়েছিল। সব মিলিয়ে সেই হিসাবে জমা হয়েছে ৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার এক বছর অতিবাহিত হলেও তহবিলের সেই টাকা এখনো বিতরণ করা হয়নি।

বহুতল ভবন যেমন হবে

ডিএসসিসির প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আগুনে পুড়ে যাওয়া ঢাকার ফুলবাড়িয়ার বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের জায়গায় ১০ তলা বিপণিবিতান নির্মাণ করা হবে। এ জন্য ৩৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। বঙ্গবাজারে ১০৬ কাঠা জমির ওপর নতুন বিপণিবিতানটি নির্মাণ করতে অন্তত চার বছর সময় লাগবে। সে অনুযায়ী এই বিপণিবিতানের নির্মাণকাজ ২০২৮ সালে শেষ হতে পারে। বিপণিবিতানের নির্মাণ ব্যয় দোকানমালিকদের কাছ থেকে চার কিস্তিতে নেওয়া হবে।

বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের চারটি মার্কেটে ২ হাজার ৯৬১টি বৈধ দোকান ছিল। বৈধ বরাদ্দপত্র ও প্রয়োজনীয় নথি দেখাতে পারলে ক্ষতিগ্রস্ত মালিকদের সবাই নতুন বিপণিবিতানে দোকান পাবেন বলে জানান ডিএসসিসির কর্মকর্তারা।

নতুন বিপণিবিতানে মোট দোকান হবে ৩ হাজার ২১৫টি। অর্থাৎ বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের তুলনায় নতুন বিপণিবিতানে অতিরিক্ত ২৪৬টি দোকান হবে। পুড়ে যাওয়া মার্কেটে দোকানের আকার ছিল সর্বনিম্ন ১৭ বর্গফুট, সর্বোচ্চ ২২ বর্গফুট। নতুন বিপণিবিতানে প্রতিটি দোকানের আকার হবে ৮০ থেকে ১২০ বর্গফুট।