সৌদি আরামকোর শেয়ার বিক্রি, প্রথম দিনেই বিপুল সাড়া

সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন তেল কোম্পানি আরামকোছবি: রয়টার্স

সৌদি আরব তার বিশাল তেল কোম্পানি আরামকোর শেয়ার বাজারে ছাড়ার প্রথম দিনেই বিপুল সাড়া পড়েছে। রোববার যে পরিমাণ শেয়ার বাজারে ছাড়া হয়েছে, প্রথম কয়েক ঘণ্টায় চাহিদা তার চেয়ে বেশি দেখা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই শেয়ার বিক্রি থেকে ১ হাজার ৩১০ কোটি ডলার আসতে পারে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, সৌদি আরবের সম্পদের প্রতি আন্তর্জাতিক আগ্রহ কতটা, এই শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে তার একটি ধারণা পাওয়া যাবে। যেসব ব্যাংক এই শেয়ার বিক্রির বিষয়টি ব্যবস্থাপনা করছে, তারা আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত শেয়ার কেনার আদেশ গ্রহণ করবে। এরপর শুক্রবার নির্ধারিত হবে প্রতি শেয়ারের শেষ পর্যন্ত দাম কত পড়বে।

আগামী রোববার রিয়াদের সৌদি একচেঞ্জে আরামকোর শেয়ার লেনদেন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সৌদি আরবের অর্থনীতির খোলনলচে পাল্টানোর চেষ্টা করছেন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। এ কারণে সৌদি আরবের বিষয়ে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কতটা, তা বোঝা যাবে আরামকোর এই শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে। সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআই আকৃষ্ট করার জন্য দেশটি যে লক্ষ্য ঠিক করেছে, প্রায়ই সেই লক্ষ্য পূরণ হচ্ছে না।

মূলত তেলের ওপর নির্ভর করে সৌদি অর্থনীতি। মোহাম্মদ বিন সালমান মনে করেন, দেশটি ‘তেলে নেশাসক্ত’ হয়ে পড়েছে। সৌদি বাদশাহ সালমানের এই পুত্র দেশটির যুবরাজ হলেও কার্যত তিনিই সৌদি আরব শাসন করেন। তেলের এই আসক্তি থেকে সৌদি আরব কতটা মুক্ত হতে পারছে, আরামকোর শেয়ার বিক্রি সেই চেষ্টাকে প্রতিফলিত করছে।

বিশ্লেষক ও বিভিন্ন সূত্র বলছে, সৌদি আরবের সার্বভৌম সম্পদ তহবিল পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড (পিআইএফ) শেয়ার বিক্রি থেকে লাভবান হবে বলে মনে করা হচ্ছে। সৌদি যুবরাজ যে বিশাল কর্মযজ্ঞ চালাচ্ছেন, তাতে অর্থ জোগাচ্ছে এই তহবিল। খেলাধুলা থেকে শুরু করে আগামী দিনের শহর—এই সবকিছুর পেছনে শত শত কোটি ডলার ঢালা হচ্ছে এই তহবিল থেকে।

আরামকোর শেয়ারের দাম অবশ্য কিছুটা কমে গেছে। রোববার সকালের দিকে শেয়ারের দাম প্রায় ২ শতাংশ কমে দাঁড়ায় ২৮ দশমিক ৪ রিয়ালে, যা ৭ দশমিক ৫৩ ডলারের সমপরিমাণ।

সৌদি আরব আরামকোর ১৫৪ কোটি ৫০ লাখ শেয়ার বিক্রি করবে, যা কোম্পানিটির মোট শেয়ারের শূন্য দশমিক ৬৪ শতাংশ। প্রতিটি শেয়ারের প্রস্তাবিত দাম ২৬ দশমিক ৭০ রিয়াল থেকে ২৯ রিয়াল পর্যন্ত। প্রস্তাবিত সর্বোচ্চ দামে শেয়ার বিক্রি হলে মোট ১ হাজার ২০০ কোটি ডলার আসবে। রয়টার্স জানতে পেরেছে, যে পরিমাণ শেয়ার ছাড়ার প্রস্তাব করা হয়েছে, চাহিদা তার চেয়ে বেশি।

ব্যাংকগুলো এখন আরও ১০০ কোটি ডলার মূল্যের অতিরিক্ত শেয়ার ছাড়ার প্রস্তাব করতে পারে। যদি সব শেয়ার বিক্রি হয়, তাহলে এই কোম্পানিতে সৌদি সরকারের মালিকানা শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ কমবে। আরামকো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় তেল রপ্তানিকারক কোম্পানি।

বিশ্বের বড় কয়েকটি বিনিয়োগ ব্যাংক আরামকোর শেয়ার বিক্রির বিষয়টি ব্যবস্থাপনা করছে। এর মধ্যে রয়েছে সিটি, গোল্ডম্যান স্যাকস, এইচএসবিসি, জেপি মরগ্যান, ব্যাংক অব আমেরিকা ও মরগ্যান স্ট্যানলি। এ ছাড়া সৌদি ন্যাশনাল ব্যাংক, আল রাজি ক্যাপিটাল, রিয়াদ ক্যাপিটাল ও সৌদি ফ্রানসির মতো স্থানীয় প্রতিষ্ঠানকেও এ কাজে নিয়োজিত করা হয়েছে।

এম ক্লেইন অ্যান্ড কোম্পানি এবং মোয়েলিস শেয়ার বিক্রিতে স্বাধীন আর্থিক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছে।

আরও বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক ব্যাংক শেয়ারের ক্রেতা খুঁজে দেওয়ার জন্য সেবা দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে ইউবিএসের প্রতিষ্ঠান ক্রেডিট সুইসের সৌদি আরব শাখা, বিএনপি পারিবাস, ব্যাংক অব চায়না ইন্টারন্যাশনাল ও চায়না ইন্টারন্যাশনাল ক্যাপিটাল করপোরেশন।

চাহিদা থাকলে মোট শেয়ারের ১০ শতাংশ বিক্রি করা হবে খুচরা বিনিয়োগকারীদের কাছে।

আরামকোর শেয়ার বিক্রি এমন দিনে শুরু হলো, যেদিন ওপেক প্লাস গোষ্ঠী তেল উৎপাদন নীতি নিয়ে আলোচনায় বসছে। কয়েক মন্ত্রী রিয়াদে আলোচনায় বসছেন বলে জানিয়েছে ওপেক প্লাসের কয়েকটি সূত্র।

তেল রপ্তানিকারকদের সংগঠন ওপেকে মূলত নেতৃত্ব দেয় সৌদি আরব। রাশিয়ার নেতৃত্বে সহযোগী কয়েকটি দেশ এই গোষ্ঠীতে যোগ দেওয়ায় এটি এখন পরিচিত ওপেক প্লাস নামে। এসব দেশ এখন প্রতিদিন ৫৮ লাখ ৬০ হাজার ব্যারেল তেল কম উৎপাদন করছে, যা বিশ্বের চাহিদার ৫ দশমিক ৭ শতাংশ।

তেলের উৎপাদন যতটা হ্রাস করা হয়েছে, তা ২০২৪ সাল, এমনকি সম্ভবত ২০২৫ সাল জুড়ে বজায় রাখা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। রোববারের বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে দুটি ওপেক প্লাস সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে। তেলের চাহিদার প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া, উঁচু সুদের হার ও যুক্তরাষ্ট্রে তেলের উৎপাদন বৃদ্ধি—এসব কারণে বিশ্বে তেলের দাম কম। ওপেক তেলের দাম বাড়াতে উৎপাদন কম রাখতে চায়।

সৌদ আরব প্রতিদিন প্রায় ৯০ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল উৎপাদন করে। এটি তার উৎপাদন সক্ষমতার ৭৫ শতাংশ। আরামকোর ৮২ শতাংশ শেয়ারের মালিক সৌদি সরকার, পিআইএফের হাতে ১৬ শতাংশ (যার ১২ শতাংশ সরাসরি পিআইএফ নিয়ন্ত্রণ করে) এবং বাকি শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে।