সরকারের শেষ একনেকে প্রকল্প পাসের রেকর্ড

গতকাল একনেক সভায় মোট ৩৯ হাজার ৯৪ কোটি টাকার ৪৪টি প্রকল্প পাস হয়েছে। ২০১৮ সালে নির্বাচনের আগে সর্বোচ্চ ৩৮টি প্রকল্প পাস হয়েছিল।

বর্তমান সরকারের অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) শেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে রেকর্ড ৪৪টি প্রকল্প পাস হয়েছে। এর আগে এক একনেক বৈঠকে এত প্রকল্প পাস হয়নি। ২০১৮ সালে নির্বাচনের আগে এক এননেক বৈঠকে সর্বোচ্চ ৩৮টি প্রকল্প পাস হয়েছিল।

ঢাকার শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে একনেক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, সামনে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। তাই নির্বাচনের আগে আর একনেক সভা হবে না।

একনেক সভায় পাস হওয়া ৪৪টি প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ৯৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার ২৯ হাজার ৯৫৩ কোটি টাকা দেবে, বিদেশি ঋণ পাওয়া যাবে ৭ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা। এ ছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা দেবে ১ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা।

কেন এত প্রকল্প পাস করা হলো, একনেক সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রকল্প তৈরিতে পরিপক্ব হয়ে গেছি। প্রকল্প তৈরি করে করে পেকে পেকে দুর্দান্ত হয়ে গেছি।’

এ বিষয়ে পরিকল্পনাসচিব সত্যজিত কর্মকার বলেন, পাস হওয়া ৪৪টি প্রকল্পের মধ্যে ১৪টি সংশোধিত প্রকল্প। এগুলো পাস না করলে কাজ বন্ধ হয়ে যেত। আটটি প্রকল্প নিয়ে উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে ঋণচুক্তি হয়ে গেছে। আজ (গতকাল) এসব পাস না হলে টাকা পাওয়া যেত না। নির্বাচনের সঙ্গে এসব প্রকল্প পাসের সম্পর্ক নেই। আর লোকদেখানোর কিছু নেই। 

যেসব প্রকল্প পাস হলো

গতকাল একনেক সভায় যেসব প্রকল্প পাস হয়েছে, এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ঢাকার শেরেবাংলা নগর প্রশাসনিক এলাকায় বহুতল সরকারি অফিস ভবন নির্মাণ; ঢাকার তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীদের জন্য ১২৩টি ফ্ল্যাট নির্মাণ; চট্টগ্রাম শহরে জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন; বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর অর্থনৈতিক অঞ্চলের সঙ্গে লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী ও ফেনী জেলার সংযোগকারী সড়ক যথাযথ মানে উন্নীতকরণ; ইলিয়টগঞ্জ-মুরাদনগর-রামচন্দ্রপুর (জেড-১০৪২) জেলা মহাসড়কটি যথাযথ মানে ও প্রশস্ততায় উন্নীত করা; রাজউক পূর্বাচল ৩০০ ফুট মহাসড়ক থেকে মাদানি অ্যাভিনিউ-সিলেট মহাসড়ক পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ; সাতক্ষীরা-সখীপুর-কালীগঞ্জ (জেড-৭৬০২) মহাসড়ক ও কালীগঞ্জ-শ্যামনগর-ভেটখালী (জেড-৭৬১৭) মহাসড়ক যথাযথ মানে উন্নীতকরণ; চার লেনে উন্নীত ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কের (এন-১) (দাউদকান্দি-চট্টগ্রাম অংশ) ৪ (চার) বছরের জন্য পারফরম্যান্স বেজড অপারেশন ও দৃঢ়করণ।

বিদ্যুৎ ও পানিতে ভর্তুকি তুলে দেওয়া হবে

বিদ্যুৎ ও পানিতে ভর্তুকি তুলে দেওয়া হবে। এই ভর্তুকি তুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে গ্রাহকের এলাকা, আয় ও পারিবারিক অবস্থান—এই তিন দিক বিবেচনা করা হবে। এর ভিত্তিতে বিদ্যুৎ ও পানির দাম ঠিক করা হবে। ধীরে ধীরে ভর্তুকির ধারণা থেকে সরে আসা হবে।

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এমন নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেছেন।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা জানিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিদ্যুৎ ও পানি সবাই ব্যবহার করেন। সবাই এর উপকারভোগী। আমি আবদুল মান্নান যেমন ব্যবহার করি, তেমনি একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মীও ব্যবহার করেন। মান্নান সাহেব যে দাম দিচ্ছেন, নিম্ন
আয়ের একজন লোকও সেই দাম দিচ্ছেন। এটা বাস্তবসম্মত নয়। ধীরে ধীরে ভর্তুকির ধারণা থেকে সরে আসতে হবে।’