স্টার্টআপ কোম্পানি গঠনের সুযোগ বিমা খাতে

বিমা খাতের উন্নয়নের সঙ্গে সম্পর্কিত যেকোনো বিষয়ে এখন নতুন নতুন উদ্ভাবন আশা করছে সরকার। উদ্ভাবন হতে পারে বিমাপণ্য বিক্রি, বিমা দাবি নিষ্পত্তি অথবা নতুন নতুন বিমাপণ্য তৈরির ক্ষেত্রে।

দেশে চালু কোনো বিমা কোম্পানি যেমন উদ্ভাবন করতে পারবে, তেমনি কোনো স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানও তা করতে পারবে। যেহেতু বিমা বা ইনস্যুরেন্স খাতের ব্যাপার, তাই স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানকে বলা হবে ইনস্যুরটেক। এখানেই শেষ নয়। যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে যদি নতুন ধরনের কোনো ধারণা থাকে, তারাও তা নিয়ে আসতে পারবেন।

এ উদ্দেশে বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) গত সপ্তাহে ‘রেগুলেটরি স্যান্ডবক্স’নামের একটি নীতিমালা জারি করেছে।

আইডিআরএ রেগুলেটরি স্যান্ডবক্সের সংজ্ঞা দিয়েছে এভাবে, রেগুলেটরি স্যান্ডবক্স হচ্ছে এমন একটি ব্যবস্থা, যাতে নতুন ব্যবসায়িক ধারা সৃষ্টির জন্য তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে নতুন বিমা পরিকল্প বা সেবা উদ্ভাবনের জন্য পরীক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে। নীতিমালায় আইডিআরএ বলেছে, বিমা খাতের সুশৃঙ্খল বিকাশ এবং গ্রাহকস্বার্থ সংরক্ষণে সহায়তা করবে ইনস্যুরটেক।

আইডিআরএর পরিচালক ও মুখপাত্র জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বিমা শিল্পে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের নতুন দ্বার উন্মুক্ত করতে চাচ্ছি। এ উদ্দেশ্যেই নীতিমালাটি করা। এর আওতায় বিমা শিল্পের বাইরের যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের জন্যও এ খাতের স্বার্থে নতুন নতুন উদ্ভাবনীমূলক ধারণা তৈরির সুযোগ তৈরি হলো এখন।’

আইডিআরএ বলেছে, তথ্যপ্রযুক্তি খাত দ্রুত বিকাশমান। তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষে বিমা গ্রাহকেরাও দ্রুত ও স্বচ্ছতার সঙ্গে উন্নত সেবা পেতে পারেন। এ খাতে অগ্রগতি হচ্ছে। তবে আরও উদ্ভাবনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইন্স্যুরটেকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়লেও বাংলাদেশ এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে বলে উল্লেখ করেছে আইডিআরএ। নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি বলেছে, বিমা খাতের বিকাশ এবং বিমা গ্রাহকদের স্বার্থ সংরক্ষণের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে বিমাসেবায় সম্পৃক্ত করতেই এ নীতিমালা জারি করা হলো।

সেবা দেওয়ার অনুমোদন পেতে আইডিআরএর কাছে আবেদন করতে হবে। রেগুলেটরি স্যান্ডবক্সে আবেদনের শ্রেণি বিভাগের কথা বলা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে বিমা পরিকল্প উদ্ভাবন, বিমাপণ্য বিপণন (ই-কমার্সসহ), বিমা দাবি নিষ্পত্তি, অবলিখন ও আইডিআরএ নির্ধারিত অন্য যেকোনো ধরনের বিমাসেবা।

অনুমোদন দেওয়ার ক্ষেত্রে যেসব মানদণ্ড বিবেচনায় নেবে আইডিআরএ, সেগুলো হচ্ছে আইডিআরএর সন্তুষ্টি, তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে কোনো উদ্ভাবন বিমাশিল্পের জন্য উপকারী হওয়া, একটি নিরাপদ ও সংরক্ষিত ব্যবস্থার মাধ্যমে বিমায় অন্তর্ভুক্তি, বিমা খাতে গ্রাহকসংখ্যা (পেনিট্রেশন) বৃদ্ধি ইত্যাদি।

তবে নীতিমালায় এ–ও বলা হয়েছে, আইডিআরএর অনুমোদন ছাড়া কোনো তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ইন্স্যুরেটক বা স্টার্ট-আপ বিমাকারীর সঙ্গে বিমাপণ্য বা বিমাসেবা দেওয়ার কার্যক্রমে যুক্ত হতে পারবে না। আইডিআরএর অনুমোদন তিন বছরের জন্য বলবৎ থাকবে। তবে আইডিআরএ সন্তুষ্ট হলে নির্ধারিত শর্তে অনুমোদনের সময় বাড়াতে পারবে।

বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) প্রথম সহসভাপতি ও মেঘনা লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির ভাইস চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, এত দিন কোনো নীতিমালা ছিল না, এখন হলো। ভালো হলো যে এখন ছোট ছোট স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান অথবা কোনো ব্যক্তি প্রযুক্তির সহায়তায় বিমাপণ্য বিক্রি থেকে শুরু করে এই খাতে যেকোনো ধরনের সেবা দেওয়ার উপায় বের করতে পারবেন।

নাসির উদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, ‘আজ অনেক বড় হয়ে গেলেও ফেসবুক, গুগল, উবার একসময় স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানই ছিল। আশা করছি, আমাদের দেশেও এ ধরনের প্রতিষ্ঠান তৈরি হবে, যারা শুধু দেশের বিমা খাত নয় আন্তর্জাতিক পর্যায়েও সেবা দিতে সক্ষম হবে।’