এক পৃষ্ঠা সংশোধন ১০ মাসেও হয়নি

আইন সংশোধন হলে মোটরসাইকেল, যাত্রীবাহী বাস, ব্যক্তিগত ও অফিশিয়াল গাড়ি, ট্রাকসহ কোনো যানবাহনই বিমা ছাড়া সড়কে চলতে পারবে না।

বর্তমানে বিমা পলিসি ছাড়াই যে দেশের সব যানবাহন রাস্তায় চলছে, এ সুযোগ আর থাকছে না। কারণ, সুযোগটি না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। তবে এ জন্য বিদ্যমান সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮–এর একটি ধারা সংশোধন দরকার। এক পৃষ্ঠার এ সংশোধনের খসড়াও তৈরি হয়েছে। কিন্তু ১০ মাসেও খসড়াটি মন্ত্রিসভার কোনো বৈঠকে উপস্থাপিত হয়নি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২৩ সালের ১ মার্চ অনুষ্ঠিত জাতীয় বিমা দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিমা ছাড়া যানবাহন যাতে চলাচল করতে না পারে, সে ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী ওই দিন বলেছেন, ‘আমরা এ ব্যাপারে দেখব যে যথাযথ বিমা ছাড়া সড়কে কোনো যানবাহন যেন না চলে।’

প্রায় পাঁচ বছর ধরে আমরা আইন সংশোধনের দাবি জানিয়ে আসছি। সংশোধনটি হয়ে গেলে একদিকে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে, অন্যদিকে মানুষ সুরক্ষা পাবেন।
নাসির উদ্দিন আহমেদ, প্রথম সহসভাপতি, বিআইএ

প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের পর গত মার্চেই আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। আইন সংশোধনের পক্ষে যুক্তি দিয়ে বিভাগটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে জানায়, বিশ্বের কোনো দেশই বিমা ছাড়া সড়কে কোনো যানবাহন চলতে দেয় না। পরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ও তা অনুমোদন করে।

যান চলাচলে আগেও বিমা করা বাধ্যতামূলক ছিল। ২০১৮ সালে সড়ক পরিবহন আইন করে তা তুলে দেওয়া হয়। আইন সংশোধন করা হলে মোটরসাইকেল, যাত্রীবাহী বাস, ব্যক্তিগত ও অফিশিয়াল গাড়ি, ট্রাকসহ কোনো ধরনের যানবাহনই বিমা ছাড়া সড়কে চলাচল করতে পারবে না। চলাচল করলে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা গুনতে হবে। আইন অমান্য করলে মামলাও করতে পারবে পুলিশ।

বিদ্যমান সড়ক পরিবহন আইনে যানবাহনের যাত্রীর জন্য বিমা করাকে বাধ্যতামূলকের পরিবর্তে ঐচ্ছিক করা হয়েছে। তবে আইনের আরেক উপধারায় ‘যথানিয়মে বিমা করবেন’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু তা লঙ্ঘন করার ক্ষেত্রে কোনো শাস্তির বিধান রাখা হয়নি।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ প্রাথমিক কাজ করে দেওয়ার পর আইন সংশোধনের কাজ করার মূল দায়িত্ব এখন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের। বিভাগটির সচিব আমিন উল্লাহ নূরী গত আগস্টে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, সব গোছানো শেষ। এটা এখন যেকোনো দিন মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপিত হবে। সেখান থেকে পাস হয়ে এলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য তা যাবে আইন মন্ত্রণালয়ে।

এদিকে আগামী ১ মার্চ আবার আসছে বিমা দিবস। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠেয় বিমা দিবসের অনুষ্ঠানে রেওয়াজ অনুযায়ী প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধানমন্ত্রী। এক বছরেও এক পৃষ্ঠার আইন সংশোধনের কাজটি না হলে প্রধানমন্ত্রী আবার এ নিয়ে কথা বলতে পারেন—এমন আশঙ্কায় রয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।

এ বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান এখনো অন্ধকারে রয়েছে। সূত্রগুলো জানায়, কয়েকবার তাগিদ দিয়েও সাড়া না পেয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ গত ১৮ ডিসেম্বর আবার চিঠি দিয়েছে সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরীকে। চিঠিতে বলা হয়, ‘বিদ্যমান সড়ক পরিবহন আইনে বিমাসংশ্লিষ্ট একটি নতুন ধারা সংযোজন বা সংশোধনের জন্য কোনো কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে কি না, সে বিষয়ে অগ্রগতি জানানোর জন্য অনুরোধ করা হলো।’

কিন্তু কোনো তাগিদেরই জবাব পায়নি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ প্রধানমন্ত্রীর চাওয়াটি বাস্তবায়ন করতে চায় কি চায় না, এটা নিয়েও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এখন সন্দিহান।

সচিব আমিন উল্লাহ নূরীর কাছে আইন সংশোধনের সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইলে গত বুধবার তিনি মুঠোফোনে বলেন, ‘খসড়াটি আমরা মন্ত্রিসভায় পাঠিয়েছি। আশা করছি, নতুন যে মন্ত্রিসভা গঠিত হচ্ছে, সেই মন্ত্রিসভার বৈঠকে তা অনুমোদন পাবে। এরপর ১ মার্চের আগেই আইন সংশোধনের কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে আশা করা যায়।’

সচিবের সঙ্গে কথা বলার পরদিন বৃহস্পতিবারই নতুন মন্ত্রিসভা গঠিত হয়েছে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্য অনুযায়ী, দেশের সড়ক ও মহাসড়কে চলাচলকারী বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের মোট সংখ্যা এখন ৫৭ লাখের মতো। বিমা করা বাধ্যতামূলক না থাকায় এ যানবাহনগুলো থেকে প্রতিবছর কর ও মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) বাবদ ৮৪৯ কোটি টাকা ও স্ট্যাম্প ডিউটি বাবদ ২৮ কোটি টাকা অর্থাৎ ৮৭৮ কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত থাকছে সরকার।

বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) প্রথম সহসভাপতি নাসির উদ্দিন আহমেদ এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রায় পাঁচ বছর ধরে আমরা আইন সংশোধনের দাবি জানিয়ে আসছি। সংশোধনটি হয়ে গেলে একদিকে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে, অন্যদিকে মানুষ সুরক্ষা পাবেন।’