পুনর্বিমা প্রিমিয়াম অনাদায়ি ৮৫৯ কোটি টাকা

নন–লাইফ বিমা কোম্পানিগুলো পুনর্বিমা পলিসির প্রিমিয়াম দিতে চায় না সাধারণ বীমা করপোরেশনকে।

সাধারণ বীমাছবি: সংগৃহীত

বেসরকারি ৪৫টি নন–লাইফ বিমা কোম্পানির পুনর্বিমাকারী সংস্থা সাধারণ বীমা করপোরেশন (এসবিসি)। রাষ্ট্রীয় খাতের একমাত্র পুনর্বিমাকারী সংস্থা এটি। সংস্থাটির প্রিমিয়াম আয় প্রতিবছর যে হারে বাড়ছে, তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি প্রিমিয়াম অনাদায়ি থাকছে। শুধু তা–ই নয়, বেসরকারি কোম্পানিগুলোর বড় অঙ্কের দাবিও বকেয়া থাকছে এসবিসিতে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পাঠানো এসবিসির সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন থেকে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। এতে ১০ বছরের চিত্র তুলে ধরছে এসবিসি।

ঝুঁকি কমানোর জন্য দেশের শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোকে বাধ্যতামূলক অগ্নিবিমা, নৌবিমা ইত্যাদি করতে হয় বেসরকারি বিমা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে। কোম্পানিগুলোর এসবিসিতে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে প্রিমিয়াম দেওয়ার নিয়ম, যদিও বেশির ভাগ কোম্পানিই এ নিয়ম লঙ্ঘন করে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

‘পুনর্বিমা পলিসির বিপরীতে মোট প্রিমিয়াম ও প্রিমিয়াম আদায়ের তুলনায় অনাদায়ি ও বকেয়া দাবি বেশি থাকছে এটা ঠিক। তবে এসবিসির মুনাফাও বাড়ছে, যেমন ২০২১ সালে মুনাফা হয়েছে ৩৫৯ কোটি টাকা।’
সৈয়দ শাহরিয়ার আহসান, এসবিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)

বেসরকারি বিমা কোম্পানিগুলোকে আবার তাদের ঝুঁকি কমানোর জন্য পুনর্বিমা করতে হয় এসবিসিতে। পলিসির আকার কম থাকলে এসবিসি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে চুক্তি করে। পলিসির আকার বেশি হলে একটি অংশের ব্যাপারে চুক্তি করার পর বাকি অংশ বিমার আওতায় আনতে করতে হয় ফ্যাকালটেটিভ।

বিমা দাবি উঠলে এসবিসি যাতে ঝুঁকিতে না পড়ে, সে জন্য সংস্থাটি পুনর্বিমা করে থাকে বিদেশের ব্রোকার বা বিমা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে। এসবিসিকে তখন বিদেশি কোম্পানিকে পুনর্বিমা প্রিমিয়াম দিতে হয়। এভাবেই চলে আসছে পুরো প্রক্রিয়া।

এসবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১২ সালে সংস্থাটির মোট প্রিমিয়াম ছিল ৫৭৬ কোটি টাকা। ওই বছর সংস্থাটি ১৬৩ কোটি টাকা প্রিমিয়াম আদায় করতে পেরেছে। অনাদায়ি প্রিমিয়াম ছিল ২২৮ কোটি টাকা। আবার ওই বছর এসবিসির কাছে কোম্পানিগুলোর বকেয়া দাবি ছিল ১৩৯ কোটি টাকা।

৯ বছর পর ২০২১ সালে এসে এসবিসির মোট প্রিমিয়াম দাঁড়ায় ১ হাজার ১৪৬ কোটি টাকা আর প্রিমিয়াম আদায় হয় ৩০৭ কোটি টাকা। ৮৫৯ কোটি টাকা প্রিমিয়ামই অনাদায়ি থেকে যায়। এসবিসির কাছে বেসরকারি বকেয়া দাবির পরিমাণও বেড়ে দাঁড়ায় ৭৩৭ কোটি টাকা।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোট প্রিমিয়াম ও প্রিমিয়াম আদায় ১০ বছরে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। তবে অনাদায়ি প্রিমিয়াম বেড়ে চার গুণ হয়েছে। আর বকেয়া দাবিও বেড়ে পাঁচ গুণ ছাড়িয়েছে।

‘এসবিসি দাবি পরিশোধে দেরি করে, আর কোম্পানিগুলোও সময়মতো প্রিমিয়াম দেয় না। উভয় পক্ষকে বসে এর সমাধান করতে হবে।
শেখ কবির হোসেন, বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) সভাপতি ও সোনার বাংলা ইনস্যুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যান

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে এসবিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ শাহরিয়ার আহসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুনর্বিমা পলিসির বিপরীতে মোট প্রিমিয়াম ও প্রিমিয়াম আদায়ের তুলনায় অনাদায়ি ও বকেয়া দাবি বেশি থাকছে এটা ঠিক। তবে এসবিসির মুনাফাও বাড়ছে, যেমন ২০২১ সালে মুনাফা হয়েছে ৩৫৯ কোটি টাকা।’

অনাদায়ি প্রিমিয়াম ও বকেয়া দাবি বেশি হওয়ার পেছনে বেসরকারি কোম্পানিগুলোর সময়মতো পুনর্বিমা প্রিমিয়াম না দেওয়ার প্রবণতাকে দায়ী করেন এসবিসির এমডি। বলেন, বহু বছর ধরে চলে আসা অসুস্থ এই চর্চা চলছে। ভালো খবর যে কিছু কোম্পানি সময়মতো প্রিমিয়াম দিচ্ছে। যারা দিচ্ছে না, তাদের কোনো দাবি থাকলে প্রিমিয়াম কেটে রেখে দাবির বাকি টাকা দেওয়া হচ্ছে।

এসবিসির দায় স্বীকার

প্রতিবেদনে এসবিসি বলেছে, এসবিসি সব সময়ই প্রিমিয়াম আদায়ের ক্ষেত্রে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। পুনর্বিমা দাবি পরিশোধের ক্ষেত্রে এসবিসি কয়েকটি ধাপে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে পরিশোধ করে থাকে। এটি সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া বলে প্রচুর দাবি বকেয়া থেকে যাচ্ছে।

এসবিসি বরং কোম্পানিগুলোর পরিবর্তে কিছুটা দায় নিজের ঘাড়েও নিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসবিসি থেকে পুনর্বিমার অর্থ পেতে বিলম্ব হয় বলেই পুনর্বিমার ত্রৈমাসিক ভিত্তিক প্রিমিয়াম পরিশোধে তাদের প্রবল অনীহা। তবে পুনর্বিমা চুক্তি নবায়নের সময় সব কোম্পানি যাতে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে প্রিমিয়াম পরিশোধ করে, সে ব্যাপারে তাদের তাগিদ দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) সভাপতি ও সোনার বাংলা ইনস্যুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘এসবিসি দাবি পরিশোধে দেরি করে, আর কোম্পানিগুলোও সময়মতো প্রিমিয়াম দেয় না। উভয় পক্ষকে বসে এর সমাধান করতে হবে।

মাঝখানে এসবিসি কোম্পানিগুলোর তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছিল, আমরা অপারগতা প্রকাশ করেছি। কারণ, তথ্য চাইলে চাইতে পারে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ), এসবিসি নয়।