নতুন ঠিকানায় ব্যবসায় টিকে থাকা নিয়ে ব্যবসায়ীদের শঙ্কা

বৈধ বরাদ্দপত্রর ও প্রয়োজনীয় নথি দেখাতে পারলে ক্ষতিগ্রস্ত মালিকদের সবাই নতুন বিপণিবিতানে দোকান পাবেন বলে জানা গেছে।

অস্থায়ী স্থাপনা উচ্ছেদের পর কিছু ব্যবসায়ী ফুটপাত ও ফ্লাইওভারের নিচে দোকান নিয়ে বসেছেন। গতকাল রাজধানীর বঙ্গবাজার এলাকায়দীপু মালাকার

ঢাকার ফুলবাড়িয়ার বঙ্গবাজার বছরখানেক আগে আগুনে পুড়ে পুরোপুরি ভস্মীভূত হওয়ার পর সেখানে বাঁশ ও ত্রিপল দিয়ে অস্থায়ী স্থাপনা তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল। গত রোজার ঈদের পর সেই স্থাপনা ভেঙে নতুন ভবন তৈরির কাজে হাত দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। সে জন্য অস্থায়ীভাবে বসা ব্যবসায়ীদের অনেকে ব্যবসা অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন। তবে অনেকেই এখনো নতুন জায়গায় দোকান খুঁজে পাননি। ব্যবসা নিয়ে তাঁরা অনিশ্চয়তার মধ্যে আছেন।

ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা আলাপকালে প্রথম আলোকে জানান, বঙ্গবাজারে অস্থায়ীভাবে বসলেও গত এক বছরে তাঁরা ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি। কোনো ক্ষতিপূরণও পাননি। এখন আবার অন্যত্র সরে গেলে ব্যবসা আরও কমে যেতে পারে। কারণ, নতুন জায়গায় ক্রেতা তুলনামূলক কম হয়। এ ছাড়া স্থান পরিবর্তনের জন্য নতুন বিনিয়োগেরও প্রয়োজন, যা তাঁদের অনেকের জন্য বেশ কষ্টসাধ্য।

গত এক বছর নানাভাবে চেষ্টা করেছি। কিন্তু সেভাবে মূলধন জোগাড় করতে পারিনি। আর্থিকভাবে আর দাঁড়াতে পারিনি। এখানে বাকি-বকেয়া নিয়ে ব্যবসা করেছি। ভাড়ার চাপ ছিল না। এখন নতুন জায়গায় গেলে টাকা লাগবে। সুতরাং নতুন দোকান নেওয়া সম্ভব নয়।
আবু বকর সিদ্দিক, স্বত্বাধিকারী, এসবিএস প্যান্ট হাউস

অস্থায়ী স্থাপনা থেকে ইতিমধ্যে বঙ্গবাজারের ইসলামিয়া ভবনে নতুনভাবে ব্যবসা শুরু করেছেন মায়ের দোয়া গার্মেন্টসের স্বত্বাধিকারী নিয়ামত উল্লাহ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগেই জানানোর ফলে ব্যবসার একটা অংশ সরিয়েছি। তবে এখনো ব্যবসা ভালোভাবে শুরু করতে পারিনি। নতুন জায়গায় ক্রেতাসংকটসহ নানামুখী সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।’

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের অধিকাংশই বঙ্গবাজারের অ্যানেক্সো টাওয়ার, ইসলামিয়া মার্কেট, ফুলবাড়িয়া এলাকার সিটি প্লাজা, বরিশাল প্লাজা ও গোল্ডেন প্লাজায় দোকান নিয়েছেন। যাঁরা গার্মেন্টসের স্টক লটের ব্যবসা করেন, তাঁদের কেউ কেউ মিরপুরের দিকেও গেছেন। অনেকে আবার কেরানীগঞ্জ বা কামরাঙ্গীরচরে ব্যবসা শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।

নতুন জায়গায় ব্যবসা করা নিয়ে অনেকেই শঙ্কায় আছেন। তেমনই একজন এসবিএস প্যান্ট হাউসের স্বত্বাধিকারী আবু বকর সিদ্দিক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত এক বছর নানাভাবে চেষ্টা করেছি। কিন্তু সেভাবে মূলধন জোগাড় করতে পারিনি। আর্থিকভাবে আর দাঁড়াতে পারিনি। এখানে বাকি-বকেয়া নিয়ে ব্যবসা করেছি। ভাড়ার চাপ ছিল না। এখন নতুন জায়গায় গেলে টাকা লাগবে।’

গত বছরের ৪ এপ্রিল ভয়াবহ এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ঢাকার ফুলবাড়িয়ার বঙ্গবাজার আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই অগ্নিকাণ্ডে ভস্মীভূত বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের চারটি ইউনিটে (বঙ্গবাজার, গুলিস্তান, মহানগর ও আদর্শ) সব মিলিয়ে দোকান ছিল ২ হাজার ৯৬১টি। এ ছাড়া মহানগর শপিং কমপ্লেক্সে ৭৯১টি, বঙ্গ ইসলামিয়া মার্কেটে ৫৯টি ও বঙ্গ হোমিও কমপ্লেক্সে ৩৪টি দোকান আগুনে পুড়ে গেছে। সব মিলিয়ে ৩ হাজার ৮৪৫টি দোকানের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বঙ্গবাজার থেকে শ দুয়েক ব্যবসায়ী গত এক বছরে ব্যবসা ছেড়ে চলে গেছেন। নতুন করে অস্থায়ী স্থাপনা উচ্ছেদের কারণে আরও শতাধিক ব্যবসায়ী পুরোপুরি ব্যবসায়ে ফিরতে পারবেন না। যে কারণে অনেক ব্যবসায়ী এখন বাধ্য হয়ে পরিচিতদের দোকানে কর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেছেন। এমনই একজন মনির হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিজের ব্যবসা এখন আর নেই। কর্মী হিসেবে কাজ করছি।’ তবে কখনো টাকা জোগাড় করতে পারলে নিজে আবার ব্যবসা শুরু করবেন বলে জানান তিনি।

বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত সব ব্যবসায়ীর পুনর্বাসনের লক্ষ্যে বঙ্গবাজারে বহুতল ভবন তৈরি করা হচ্ছে। অধিকাংশ ব্যবসায়ী আশপাশে নতুন দোকান নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছেন। দু-একজন বাকি আছেন। তবে তাঁদের সবাই আবার বঙ্গবাজারের স্থায়ী দোকানের মালিক নন। অস্থায়ী জায়গায় অনেক কর্মচারীও দোকান নিয়ে বসেছিলেন।

উল্লেখ্য, বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের জায়গায় গড়ে উঠবে বহুতল ভবন। এ জন্য অস্থায়ী স্থাপনা ভেঙে ফেলা হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আগুনে পুড়ে যাওয়া বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের জায়গায় ১০ তলা বিপণিবিতান নির্মাণ করা হবে। ৩৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বঙ্গবাজারে ১০৬ কাঠা জমির ওপর নতুন বিপণিবিতানটি নির্মাণে অন্তত চার বছর সময় লাগবে।

বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের চারটি মার্কেটে ২ হাজার ৯৬১টি বৈধ দোকান ছিল। ডিএসসিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বৈধ বরাদ্দপত্র ও প্রয়োজনীয় নথি দেখাতে পারলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সবাই নতুন বিপণিবিতানে দোকান পাবেন।